দেশের চলচ্চিত্রের মান ও মাপকাঠির নিরিখে নতুন ট্রেন্ড তৈরি করেছেন দক্ষিণ ভারত। সাম্প্রতিককালে তাঁদের তৈরি কিছু ছবি তারই নিদর্শন। বক্স অফিস ব্লকবাস্টারের তালিকা আলো করে বসে আছে তিনটি নাম – ‘আরআরআর’, ‘পুষ্পা’ ও ‘কে জি এফ ২’। আক্ষরিক অর্থে ‘প্যান ইন্ডিয়া’, অর্থাৎ সর্বভারতীয় হয়ে উঠেছে এই তিনটি ছবি। ২০১৫-২০১৭ সালে আরও একটি দক্ষিণ ভারতীয় ছবি সেরকমই হিল্লোল তুলেছিল। সেই ছবির নাম ছিল ‘বাহুবলী’। দক্ষিণ ভারত ও বলিউড মিলেই প্যান ইন্ডিয়া ছবির জন্ম দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দক্ষিণ ভারতের ছবিগুলি হিন্দিভাষীদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ভারতের ছবি নির্মাতারা ‘প্যান ইন্ডিয়া’ বিশেষণে আপত্তি তুলেছেন। কী বলছেন তাঁরা?
কেন ‘প্যান ইন্ডিয়া’ কথাটির জন্ম হল? অনেকেই মনে করেন, এতদিন কেবল হিন্দিভাষী বা বলিউডের ছবিগুলিই সারা দেশে রাজত্ব করেছে। চলেছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কিন্তু এখন হিসেব পাল্টেছে। চিত্রটাও পাল্টেছে দক্ষিণ ভারতের ছবির কারণে। পর পর ছবি তৈরি করছে দক্ষিণ ভারত, যা গোটা দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করছে ভীষণরকম। জন্ম হয়েছে ‘প্যান ইন্ডিয়া’ বিশেষণটির। এই শব্দবন্ধটি কতখানি যথাযথ, সেই নিয়ে সমালোচনামূলক প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। প্রশ্ন তুলছে খোদ দক্ষিণ ভারত?
অনেকে মনে করেন, ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ও এই শব্দবন্ধকে ঘিরে উত্তেজনা নাকি ‘সমস্যাজনক’। অভিনেতা সিদ্ধার্থের মত, এতে অন্যান্য হিন্দি ভাষায় তৈরি না হওয়া সিনেমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেছেন, “যে সব ছবি হিন্দিতে তৈরি হচ্ছে না, সে সব ছবিকে অনেক দূরের করে দেয় এই শব্দবন্ধ। মনে হয়, তাঁরাই আসল লোক। অন্যদের মনে হয় ‘বাইরের লোক’, আউটসাইডার। একটি বলিউড ছবিকে তো আপনার ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ছবি বলেন না! আপনার সেটাকে কেবলই বলিউডের ছবি বলেন! কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় ছবির প্রসঙ্গ যখনই আসে, বলা হয় ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ছবি… কেন? ছবিগুলি তো কন্নড় ছবি কিংবা তেলেগু ছবি!”
সিদ্ধার্থ সত্যি বলছেন। ‘দঙ্গল’-এর মতো ছবি তৈরি হয়েছে হিন্দিতে। সারা দেশে ৪০ শতাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন। কিন্তু সেই ছবিকে কখনওই ‘প্যান ইন্ডিয়া’ বলা হয় না। কিন্তু ‘দঙ্গল’-এর মতোই জনপ্রিয় একটি তেলেগু ছবিকে ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ছবি বলা হয়… যেখানে দেখা যায় দুটি ছবিই ভাষার গণ্ডি ছাপিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোটা দেশে।
মালায়ালাম অভিনতা সলমন দুলকরকেও বিষয়টি ভাবায়। কেবল ভাবায় না, তিনি বেশ বিরক্তবোধ করেন। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক ভারতীয় ভাষাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। একই কথা বলে আর্টিক্যাল ৩৪৪(১) ও ৩৫১। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল পরিচালক ও অভিনেতা আমিরও এমন কথাই মনে করেন।
রজনীকান্তের ছবি তামিল ভাষায় মুক্তি পায়, মুক্তি পায় জয়পুর, আহমেদাবাদের মতো শহরে। সলমন খানের ছবি মুক্তি পায় চেন্নাই ও কুরনুলে। মালায়ালাম, তামিল, কন্নড় ও তেলেগু ছবি দেশের অন্যান্য় জায়গায় মুক্তি পেয়েছে এবং সেই ছবি সফলও হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও বিষয়টি একই। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে দক্ষিণী ছবি ‘মিনাল মুরালী’। ৮টি ভাষায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। মুক্তি পেয়েছে ৩৮টি সাবটাইটেলে। ভারতীয় দর্শক নিজের মাতৃভাষার বাইরেও ছবি দেখতে অভ্যস্ত। অনেকে বড় অঙ্কের অর্থও উপার্জন করছে। ফলে ‘প্যান ইন্ডিয়া’ শব্দবন্ধের যথার্থতার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করেন দক্ষিণ ভারতের নির্মাতারা।