Nazrul Mancha: ‘রাশ নিজেদের হাতে না রাখার ফল উদ্যোক্তাদের তাড়া করে বেড়াবে’, কেকে-র মৃত্যুতে গুরুদাস কলেজের প্রাক্তনী তথা ফেস্ট-উদ্যোক্তা

Singer KK Death: এ ব্যাপারে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল গুরুদাস কলেজের প্রাক্তনী তথা ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম প্রাক্তন প্রতিনিধি ও ফেস্ট-উদ্যোক্তা পৃথ্বীরাজ পালের সঙ্গে।

Nazrul Mancha: ‘রাশ নিজেদের হাতে না রাখার ফল উদ্যোক্তাদের তাড়া করে বেড়াবে’, কেকে-র মৃত্যুতে গুরুদাস কলেজের প্রাক্তনী তথা ফেস্ট-উদ্যোক্তা
কী বললেন গুরুদাস কলেজের উদ্যোক্তা?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 04, 2022 | 4:33 PM

কেকে-র মৃত্যু (Singer KK Death) দুর্ভাগ্যজনক তা স্বীকার করেও পুলিশের ভূমিকায় কোনও গাফিলতি ছিল না বলে শুক্রবারই দাবি করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার (Commissioner of Police) বিনীত গোয়েল। কেকে-র মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই সমস্ত সিসিটিভ ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। তাতেই যে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের ফুটেজ স্পষ্টভাবে ছিল, সে কথাও স্বীকার করে নেন পুলিশ কমিশনার। এ দিকে, শুক্রবারই পুলিশ কমিশনার, গুরুদাস কলেজের অধ্যক্ষ, নজরুল মঞ্চ-কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন আইনজীবী সৌম্যশুভ্র রায়। প্রয়োজনে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হবে বলেও ওই নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীর দাবি, ‘‘আন্তর্জাতিক তারকা কেকে-র মৃত্যুর জন্য দায়ী অবহেলা আর দায়িত্বজ্ঞানহীন মানসিকতা।’’ পুলিশ, প্রশাসন, নজরুল মঞ্চ কর্তৃপক্ষ, গুরুদাস কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেককেই অবহেলার জন্য দায়ী করেছেন তিনি। সবকিছু ছাপিয়ে বারবারই উঠে আসছে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের প্রসঙ্গ। এ ব্যাপারে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল গুরুদাস কলেজের প্রাক্তনী তথা ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম প্রাক্তন প্রতিনিধি ও ফেস্ট-উদ্যোক্তা পৃথ্বীরাজ পালের সঙ্গে।

প্রশ্ন: ফেসবুক পোস্টে আপনি লিখেছেন, “শিল্পীদের সামনে একটা বড় ব্যারিকেড থাকতো যেটা পেরিয়ে কয়েকজন মূল উদ্যোক্তা ছাড়া কেউ স্টেজে উঠতে পারতো না! আজ সময় অনেক বদলেছে বোঝা যায়…”। কেকে-র ঘটনায় ফেস্ট উদ্যোক্তাদের তরফে কী-কী ফাঁক রয়ে গিয়েছিল বলে আপনার মত? 

উত্তর: গুরুদাস কলেজের প্রাক্তনী হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের একজন অন্যতম প্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে ফেস্ট করবার উদ্যোগ শুধুমাত্র কলেজেই নিয়েছিলাম তা নয়, এখনও একটি বেসরকারি কলেজে পড়ানোর সুবাদে বছর বারো ধরে অর্গানাইজ় করে আসছি স্টুডেন্ট আর সহকর্মীদের সঙ্গে। আসল সমস্যাটা হলো ‘রাশ টানার’… কোনও চাপান-উতোরের ভেতর না গিয়েই যেটা বলার, সেটা হল উদ্যোক্তাদের হাত থেকে টিকিট বিলির রাশ শো শুরু হওয়ার অনেকদিন আগেই বোধহয় চলে গিয়েছিল। আসলে এভাবে একটা লেয়ারে এতবড় ফাঁক হয় না। এখন যে কোনও বড় গায়ক বা ব্যান্ডের টিমের সঙ্গে একটা ম্যানেজমেন্ট টিম থাকে, যাঁরা সবকিছু চেক করে নেন প্রোগ্রাম শুরুর আগে, আর উদ্যোক্তারা তাঁদের সব রকম সাহায্য করেন। নিশ্চয়ই এতো ভিড় হবে, আগে থেকে সেভাবে জানানো হয়নি। আর ম্যানেজমেন্ট টিম-ও শোয়ের মাঝপথে আর অব্যবস্থাগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করেনি।

বলে রাখি, যতগুলো সিট, ঠিক ততগুলো পাস বিলি কখনওই হয়না। তার থেকে বেশীই হয় প্রোগ্রামের ওজন বুঝে। কারণ একটা বাফার ধরে নেওয়া হয় যে কিছু মানুষ আসবেন না। কিন্তু সেটা কখনওই ২৫০০ সিটে ৭০০০ নয়। এটা মস্ত বড় গলদ। এরপর আর সামলানো প্রায় অসম্ভব।

নজরুল মঞ্চ কোনওদিনই অব্যবস্থার বাইরে যায়নি। কেকে বোধহয় আগেও এখানে শো করেছিলেন আমি যদ্দূর শুনেছি। ২০০৩-এ আরেকটি বেসরকারি কলেজের ফেস্টে ওখানেই এসেছিলেন। তাই হয়তো ভাবতে পারেননি এরকম কিছু হতে পারে। এরকম শোয়ে বাউন্সাররা থাকেন, সামনে থাকে বড় বাঁশ দিয়ে ঘেরা একটা এরিয়া বা অংশ, আর সেটা ঘিরে থাকেন উদ্যোক্তারা। বিশেষত এরকম শোয়ে অন্তত একজন লেডি বাউন্সার রাখা খুব কার্যকরী। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সেটা বলতে পারি। সেটা বোধহয় ছিল না, আর উদ্যোক্তাদের কাজ নিজের চেনা-শোনা কাউকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজটা করা। একজনও যেন কমিটির বাইরের লোক ওখানে ঘেঁষতে না পারে সেটা দেখা। স্টেজে এতো মানুষ ভিড় করে থাকবেন কেন? আর এরকম হলে এসি বন্ধ হলে উদ্যোক্তাদের প্রতিবাদ হবে না কেন?

কোনও ফেস্ট কমিটি কোনওদিন চায় না তাদের ফেস্ট-এ একটাও দাগ পড়ুক। কার দোষ, কার ভুল, সেসবে না গিয়েই বলছি, যে ছেলেমেয়েগুলো মূল কমিটিতে ছিলেন, তাঁদের জন্য খারাপ লাগছে। সারাজীবন এই রাতটা অভিশাপের মতো তাড়া করে বেড়াবে। ওঁরা তো আমার জুনিয়রই। পাস বিলি করার সময় হয়তো ওঁরা ভেবেছিলেন এমন ফেস্ট করবেন যে তাক লেগে যাবে, তাই যথেচ্ছ পাস বিলি করা হয়েছিল। হয়তো খেয়াল ছিল না, ক্ষমতার বেশি চাপ নিলে সেটা নিজেদের বুকেই পাহাড় হয়ে বসবে। এই ভুলটা কোনওদিনও যুক্তি বা পাল্টা যুক্তি দিয়ে এড়ানো যায় না।

প্রশ্ন: কেকে-র শরীর যখন খারাপ লাগছিল, তখন কি উদ্যোক্তাদের উচিত ছিল শো বন্ধ করে শিল্পীর শরীরের যত্ন নেওয়ার?

উত্তর: এ প্রসঙ্গে বলি, কোনও আর্টিস্ট নিজে থেকে যতক্ষণ না শো বন্ধ করছেন, ততক্ষণ শো অন্তত উদ্যোক্তারা বন্ধ করতে চান না। যদি না কোনও দুর্ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি হয়। ক্রাউড কন্ট্রোল করতে না পারলে সবার আগে উচিত কিছুক্ষণের জন্য অনুষ্ঠান-বিরতি নিয়ে মাইকে অ্যানাউন্স করা। আমরা এখনও করে থাকি। সেরকম কিছু কি হয়েছিল? যদি সেরকম ঘটনা ঘটে থাকে এবং কন্ট্রোল মেজ়ার না নেওয়া হয়ে থাকলে ভুল তো হয়েছেই। এক্ষেত্রে আর্টিস্টের ম্যানেজমেন্ট টিমকেও ছাড় দেওয়া উচিত নয়। কারণ তাঁরা সবার প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারতেন। জোর করে ভিড় বাড়িয়ে দেওয়াটাকে ওঁরা আটকাতে না পারলেও ওরকম দুর্বিষহ অবস্থায় যদি চাইতেন ওঁরা কেকে-র সঙ্গে কথা বলে শো পজ় করাতেই পারতেন। তাঁদের সাথেই কিন্তু ফার্স্ট কমিউনিকেশনটা আর্টিস্টের হয়। কেকে কেন, বেশীরভাগ শিল্পীই চান না তাঁদের শোয়ে একবার যে টেম্পোটা এসে গেলে সেটা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। কারণ ওই দর্শকই তো ওঁদের জান-প্রাণ। তাই কোথায় সূক্ষ রেখাটা টানতে হবে, সেটার অ্যালার্ম দেওয়া কিন্তু ম্যানেজমেন্ট টিমের কাজ। অন্যদিকে, উদ্যোক্তারা কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না যে, যেরকম কন্ডিশন বা এনভায়ারনমেন্ট তৈরি করে দেওয়ার কথা হয়েছিল সেটা এতোটা খারাপ হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা আরও বেশি করে সেটাকে সামলাতে উদ্যোগী হলেন না কেন?

প্রশ্ন: যেভাবে পাস বিলি করে নজরুল মঞ্চকে ওভারক্রাউডেড করে দেওয়া হল, সেটাকে কত বড় গাফিলতি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়? 

উত্তর: আমাদের সময়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর, এমনকী পাস থাকলেও গেট আটকে রাখাই হতো। আর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা স্থানীয় থানা, বাউন্সার আর গুটিকতক ভীষণই চৌখস টিম মেম্বারদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হতো। কারণ টিমের সবাই জানতাম ভিড় একবার হু-হু করে ঢুকতে থাকলে, সেটা আটকানো সম্ভব নয়। আর কলেজ ফেস্ট মূলত কলেজের স্টুডেন্ট আর তারপর বাইরের লোকের জন্য। সেখানে বাইরের এতো মানুষ ভিড় কীভাবে করবেন? পাস তো কলেজের স্টুডেন্ট সংখ্যা আর গেস্ট মোটামুটি হিসেব করেই করা হয়। হাজার-হাজার পাস ছাপানোর কথা তো নয়! এতো পাস ছাপানো হওয়া আর বাইরে বিলি করার ব্যাপারটা হল কেন? ধরে নিন শিল্পীর কিছু হল না, দর্শক পদপিষ্ট হল অথবা কারও শরীর খারাপ হয়ে তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটল! ধরে নিচ্ছি, কেকে হয়তো হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়েই প্রোগ্রাম শুরু করেছিলেন, তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি তিনি ছাড়া আর কারও কিছু হয়নি (যদিও এটা একটা বাল্যখিল্য কথা, কারণ হৃদযন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ বোধহয় ওঁরই পড়ছিল, তাই ওঁর শরীর খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক), তাহলেও এটা খুব সহজ ভাবেই বোঝা যায়, ওই দুর্বিষহ পরিবেশ ওঁর শেষ মুহুর্ত কটা আরও বেশি ট্রিগার করেছিল, আরও যন্ত্রণা দিয়েছিল… উদ্যোক্তারা বোধহয় সেটা এড়িয়ে যেতে পারেন না। কারও দিকে আঙ্গুল তুললে মানুষটা ফিরবেন না। এই ক্ষত আর তো সারবে না। কিন্তু রাশ নিজেদের হাতে না রাখার ফল কিন্তু উদ্যোক্তাদের তাড়া করে বেড়াবে, সে কেউ এটা নিয়ে কথা বলুক না বলুক।