Poila Boishak: বাংলা দেওয়াল পঞ্জিকার সবচেয়ে বড় টান ছিল মা-জেঠিমাদের কাছে: শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
Bengali New Year 1429: কবে নিউ ইয়ার্স ডে হচ্ছে, এমনকী পয়লা বৈশাখটা এপ্রিল মাসের কোন তারিখে হচ্ছে, সেটাও দেখি ইংরেজি ক্যালেন্ডারেই। বাংলাদেশ কিন্তু রিভাইস করে নিয়েছে ব্যাপারটা। ওদের ওখানে বরাবরই ১৪ এপ্রিল পালন করা হয় পয়লা বৈশাখ।
শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
বাংলা দেওয়াল পঞ্জিকা জায়গা পায় রান্নাঘর বা পুজোর ঘর বা এমন কোনও ঘরে, যেখানে বিশেষ বাইরের লোকজন আসেন না। দেওয়াল পঞ্জিকার একমাত্র টান হচ্ছে দেখে নেওয়া কবে কোন তিথি কিংবা কোন পুজো কখন। সেই সংক্রান্ত লগ্ন কী আছে? ক্যালেন্ডারে-ক্যালেন্ডারে বিভেদও দেখা যায়। বাংলা দেওয়াল পঞ্জিকার সবচেয়ে বড় টান ছিল মা-জেঠিমাদের কাছে। সেইটা মেনে তাঁরা জীবনধারণ করতেন। অনেককিছুই জানতে পারতেন, যা ইংরেজি ক্যালেন্ডারে কখনওই পাওয়া যেত না। বাঙালি জীবনে সে সবই তিথি এবং মাননীয় যোগ থাকত। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার দেখে এখন আমরা সোম থেকে রবি খাতায় হিসেব করি। কবে নিউ ইয়ার্স ডে হচ্ছে, এমনকী পয়লা বৈশাখটা এপ্রিল মাসের কোন তারিখে হচ্ছে, সেটাও দেখি ইংরেজি ক্যালেন্ডারেই। বাংলাদেশ কিন্তু রিভাইস করে নিয়েছে ব্যাপারটা। ওদের ওখানে বরাবরই ১৪ এপ্রিল পালন করা হয় পয়লা বৈশাখ।
এ দিকে আমাদের এখানে এবার এপ্রিলের ১৫ তারিখে পালিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। পরের বছর ১৪ তারিখে পালন করা হবে। এই অবস্থা হয়েছে তার কারণ, চান্দ্রমাস হিসেবে হচ্ছে বিষয়টা। সেভাবেই কিন্তু হয়ে আসছে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আমরা মানছি। সেটাই গোটা বিশ্বে মানা হয়। সেটাকে মেনেই অফিস-কাছারি, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ, পড়াশোনা… যা-যা দিনক্ষণ নিরিখে চলে, সবটাই চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে। বাঙালির সমস্যা হচ্ছে, বাঙালি জিনিস ছাড়তে বড়ই অভ্যস্ত। সেটা বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার। একটা সময় বাঙালির জীবন সীমিত আকারের ছিল। একটা ছোট্ট ভূগোলের মধ্যে আটকে ছিল। যেমন ধরুন ধুতি-পাঞ্জাবি, পাজামা-পাঞ্জাবি… এগুলোই বাঙালি পুরুষ পরতেন। আমি নিজে ধুতি পরতে ভীষণ ভালবাসি। একটা সময় মিছিলেও দেখা যেত সাদা-সাদা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ তাঁরা সকলে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মিছিলে হাঁটছে। পরবর্তীতে ফ্যাশন পাল্টাল। মানুষ ধুতি পরা একেবারেই ছেড়ে দিল। হুট করে কেউ ধুতি পরলে রসিকতাও হত। আমাকে নিয়েও রসিকতা হয়েছে। বাঙালির এই অদ্ভুত চেহারা-চরিত্র-রুচি-লেখাপড়া-চিন্তাভাবনার মধ্যে বিবর্তন এক জন্মের মধ্যেই আমি দেখতে পেলাম।
…বাঙালি কোনটা ধরে রাখতে চায় কিংবা কোনটা ধরে রাখতে পারে, সেটার মধ্যে একটা সমস্যা আছে। দেওয়াল পঞ্জিকা বা বাংলা ক্যালেন্ডার, যা-ই বলুন না কেন, আমরা আর দেখি না। মা-মাসিদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বাংলার ক্যালেন্ডারের জায়গা পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছি। সেটাই হল আসল কথা। কোনও কিছুর সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ না থাকলে কোনও কিছুই বেশিদিন টিকতে পারে না।
বাংলা পঞ্জিকা তৈরি হয়েছিল আকবর বাদশাহের সময়। সেই সময়ই প্রথম পয়লা বৈশাখ পালন করা হল। আকবরের জ্যোতির্বিদ বিষয়টি দেখতেন। বঙ্গাব্দ শুরু হয়েছিল শশাঙ্কের আমলে। সেই হিসেবেই আমাদের নতুন বছরটা ১৪২৯ সাল। পয়লা বৈশাখ পালন করা শুরু হল আকবরের সময়কালে। আকবর মসনদে বসলেন আর শুরু হল বাঙালির নতুন বছরের সূত্রপাত।
স্নেহা সেনগুপ্ত
(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)
গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস
আরও পড়ুন: ই-কার্ড ফরওয়ার্ডের মাঝে নববর্ষের হাতে বানানো কার্ড কি আজ শুধুই অতীত?
আরও পড়ুন: Alia-Ranbir Wedding: ঋষির মৃত্যু মাসেই আলিয়া-রণবীর বিয়ে করছেন, বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন নিতু কাপুর