Valentine’s Day Special: ‘লাভ মি থোড়া অউর’… ইশকওয়ালা LOVE এবং AAJ KAAL-এর ভাষা

TV9 Bangla Digital | Edited By: বিহঙ্গী বিশ্বাস

Feb 13, 2022 | 10:50 AM

সবচেয়ে মধুর ডাক হল ‘ভাই’, যা আশ্চর্যরকম লিঙ্গ-সম্পর্ক-নিরপেক্ষ! ‘ভাই প্লিজ দু’মিনিট দাঁড়া, দশ মিনিটে আসছি’ বলে অনসূয়া থেকে আলিয়া, অয়ন থেকে অ্যাবি যে কাউকে অপেক্ষা করানো যায়।

Valentines Day Special: ‘লাভ মি থোড়া অউর’... ইশকওয়ালা LOVE এবং AAJ KAAL-এর ভাষা
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ।

Follow Us

‘উত্তমকুমার’ ডাক শুনতে চাওয়া থেকে ‘তুমিই আমার সিপিএম, তুমিই আমার এটিএম’ পেরিয়ে আজ আমরা এসে ঠেকেছি ‘বাবু খাইসো?’-র যুগে। সে এক সময় ছিল, যখন প্রেমপত্রে বানান ভুল থাকলে প্রেমিকা পাত্তা দিত না। আজকাল ঐশ্বর্যকে ‘আইশ্বরিয়া’ না বললে ‘ভাও’ পাওয়া যায় না। ‘প্রিয়তমেষু’, ‘ওগো কীগো’, ‘অ্যাই’ এবং আদরের অজস্র ডাকনাম আজ বদলে গেছে ‘বেব’, ‘সুইটু’, ‘জান’, ‘bae’, এমন নানা শব্দে – যদিও সোনা-বাবু-পুচি-গুলুও থেকে গিয়েছে যেমন থেকে যায় স্যান্ডউইচের পাশে ফুচকা।

সবচেয়ে মধুর ডাক হল ‘ভাই’, যা আশ্চর্যরকম লিঙ্গ-সম্পর্ক-নিরপেক্ষ! ‘ভাই প্লিজ দু’মিনিট দাঁড়া, দশ মিনিটে আসছি’ বলে অনসূয়া থেকে আলিয়া, অয়ন থেকে অ্যাবি যে কাউকে অপেক্ষা করানো যায়। চুমু না খেয়ে ‘কিসি করা’, গা ঘেঁষে না বসে ‘কাডল করা’, ‘প্রণয়সঙ্গী’ না বলে ‘পার্টনার’ বলা – এসবও চলছে হামেশাই। ‘ডেট করা’, ‘চক্কর চলা’, ‘লাইক করা’, ‘অ্যাফেয়ার’, ‘টুগেদার’, ‘ইন্টিমেসি’ – এই শব্দগুলোও উঠে আসছে। যৌনতা বহুকাল সোজাসাপ্টা ‘সেক্স’ হয়ে গিয়েছে স্মার্ট শুনতে লাগার কারণে। যৌনতাবাচক সমস্ত শব্দই ইংরেজিতে বলাটা দস্তুর, যেহেতু ভাল পর্নে ইংরেজি শুনেই জনগণ আজকাল বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ করে। চটি বইতে স্ল্যাং আছে বটে, কিন্তু সবার ‘ডার্টি ওয়ার্ড’-এ রুচি নেই।

আগে এত কথা ছিল না আসলে। মন পাওয়ার যুদ্ধ ছিল, কিন্তু ‘ইমপ্রেস’ করার জন্য নিজেকে এত বেশি প্রকাশ করার উচ্চকিত চেষ্টা ছিল না। ঠোঁট কাঁপত, হৃদ্‌স্পন্দন বাড়ত, গলা শুকিয়ে আসত, হাতের লেখা খরোষ্ঠী লিপি হয়ে যেত। কাউকে বলা যেত না যে ভালবাসা এসেছে। অনেক কষ্টের পর উচ্চারণ করা যেত একটাই ম্যাজিক ওয়ার্ড – ‘ভা…ভা…ভালবাসি’! উত্তরেও মৌনতা থাকত বা হাসি। বড়জোর ‘আমিও’। ‘লাইক ইউ’, ‘ফ্রেন্ডজোন’, ‘লাভ ইউ অ্যাজ সিস’ – এসব ধাপের গল্পই ছিল না।

কিন্তু এখন নীরব প্রণয় কেস খেয়ে যায়। নাকের সামনে দিয়ে তার ডার্লিংকে পটিয়ে নিয়ে যায় অন্য কেউ, তার দিলের উইলে অন্য ভাগীদার। এই বাজারে জিততে হলে বলতে হবে। সমস্ত পৃথিবী যে ভাষায় প্রেম জানায়, সেই ভাষাতেই। বলতে হবে ‘ফলিং ফর ইউ’। ‘প্রপোজ’ করতে হবে, ‘গিফট’ দিতে হবে, টেক্সটের পর টেক্সটে বলতে হবে ‘মিস করছি’।

বিরক্ত লাগলে ‘স্পেস’ চাইতে হবে। বিরহ-মিলনের মতো অত সিরিয়াস কথা কে বলে? বরং ‘ব্রেক-আপ’, ‘প্যাচ-আপ’ – এসব ঘোষণা করতে হবে। হিংসে হচ্ছে বলতে কেমন যেন লাগে – তাই ‘পজেসিভ’ হয়ে উঠতে হয়। মধুরেণ সমাপয়েত হলে রিলেশনশিপ স্টেটাস বদলে যাবে ‘কমিটেড’, ‘এনগেজড’-এ। পাশে ‘ফিয়াঁসে’-কে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার গর্বই আলাদা! আর যদি জিন্দেগি কাঁচি হয়ে যায়? ‘ইট’স কমপ্লিকেটেড’ বলে মুখ ঘুরিয়ে নিতে হবে কিংবা প্রিয় বন্ধুর কোলে মাথা রেখে ‘দাগা দিয়ে গেল ব্রো’ বলে কুমার শানুর বিরহগীতি শুনতে হবে। দুঃখের সঙ্গে হিন্দিটা যায় ভাল। বাংলাও যায়, কিন্তু অন্য ফর্মে বা শেপে।

আর এই এত কথার ঝাকানাকার মধ্যে, এত লোচা-এ-উলফতের কেন্দ্রে, এত ফ্লার্টের মঙ্গলকাব্যের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে এমন একজন, যার কোনও ভাষা হয় না। তার হাতে দিতে না পারা গোলাপ আর ভাঁজ পড়ে যাওয়া চিঠি, তার হৃদয় রেলের ইঞ্জিন, তার মাথায় বিদ্যুৎপ্রবাহ। তার নাম – মৌনমুখরতা। ভালবাসার একনিষ্ঠ প্রেমিক।

(মতামত একান্ত ব্য়ক্তিগত)
Next Article