ড্রাইভে নিয়ে গিয়ে গাড়ির মধ্যে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় এনা সাহাকে। অভিনেত্রী তাতে রাজি না হওয়ায়, তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় রাজারহাটের ফাঁকা রাস্তায়! তারপর… TV9 বাংলায় ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিনেত্রী। বর্তমানে সিনেপাড়ার অন্দরমহল থেকে বহু অপ্রীতিকর খবরই উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। তারই মাঝে এবার বিস্ফোরক এনা…
TV9 বাংলা: টলিউডে যৌন হেনস্থার মুখোমুখি হয়েছেন?
এনা সাহা: ২০১৮ সালে নিজের প্রযোজনা সংস্থা তৈরির কথা ভাবতে হয়েছিল, কারণ নিজের শর্তে কাজ করতে চাইছিলাম। ভালো কাজ পেতে হলে কম্প্রোমাইজ করতে হবে, এরকম বহু সময় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেটা একটা সময়ের পর আর মানিয়ে নিতে পারিনি।
২০১৭ নাগাদ কি আপনার কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছিল?
এনা: ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার পর বেশ কিছু ভালো ছবি করেছি। কিন্তু ২০১৭ নাগাদ আর ভালো কাজ পাচ্ছিলাম না। সেই সময়ে শুধু উপার্জনের জন্য, আমাকে বেশ কয়েকটা বি গ্রেড কাজ করতে হয়েছিল।
আপনি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই নায়িকা হয়েছেন। নায়িকা হওয়ার পর কি কুপ্রস্তাব পেতেন?
১৭ বছর বয়সে ছবিতে নায়িকা হয়েছি। তার পরেই এক প্রযোজক আমাকে ড্রাইভে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। টলিউডে আমি খুব কম বয়স থেকে কাজ শুরু করেছি। তাই অনেক সময়েই কারও গাড়িতে উঠেছি। অন্যরকম কিছু হতে পারে ভাবিনি। সেদিনও ড্রাইভে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়ে না করিনি। কিন্তু তারপর গাড়ির মধ্যে প্রযোজক এমন কিছু করার প্রস্তাব দেন, যাতে আমি ‘না’ বলতে বাধ্য হই। তিনি জোর দিয়ে বলেন। আমি শুনিনি। সেই ‘না’ শুনে তিনি রেগে যান। আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন।
কোথায় নামিয়ে দিয়েছিলেন?
দশ বছর আগে রাতে রাজারহাটে একটা ফাঁকা রাস্তায়!
সেদিন খারাপ লাগেনি?
শুধু সেদিন নয়, আরও বহুদিন এমন হয়েছে, যখন খারাপ লেগেছে। শুরুর দিকে খুব ভয় পেতাম। কারও প্রস্তাবে ‘না’ বলে দিলে আর কাজ পাব না, সেই ভয়টা ঘিরে ধরত। আজকে এত বছর পর নিজের প্রযোজনা সংস্থা হয়েছে বলেই হয়তো মন খুলে কথা বলছি।
টলিউডে এমন পরিবেশে যে দিনের পর দিন কাজ হচ্ছে, এর প্রতিবাদ হতে এত দেরি হল কেন?
পরিচালকদের সঙ্গে আমার এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে টলিউডের দুই প্রযোজকের থেকে খারাপ প্রস্তাব পেয়েছিলাম। প্রতিবাদ হতে এত দেরি হল, কারণ দশজন মেয়েকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হলে, তার মধ্যে তিনজন ‘হ্যাঁ’ বলেন। যে সাতজন ‘না’ বললেন, তাঁরা কাজ হারালেন।এদিকে সেই সাতজন হয়তো বেশি প্রতিভাবান। আমার একটা প্রশ্ন আছে। পুরুষরা কুপ্রস্তাব দিলে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু যেসব মেয়েরা, কাজ পাওয়ার জন্য কম্প্রোমাইজ করার রাস্তাটাই বেছে নিচ্ছেন, তাঁদের এমন পদক্ষেপের বিষয়টা কে সামনে আনবেন? ভীষণ টক্সিক লোকজন চারপাশে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। ভালো কাজের অভাব। তাই নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা। তার উপর কেউ কম্প্রোমাইজ করে কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। যিনি কম্প্রোমাইজ করছেন না, তাঁর অবস্থা কী হচ্ছে, একবার ভাবুন।
কখনও আইনি পদক্ষেপ করেননি কেন?
ভয় ছিল। তাই নিজের প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করেছি। সেখানে নতুন মেয়েরা ছবি দিতে এলে, কোনও আশঙ্কায় ভোগেন না। আসলে টলিউডে ‘ছবি পাঠাও’ এমন মন্তব্যটাই সমস্যার। টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেও অভিনেত্রীদের ছবি চান অসৎ উদ্দেশ্যে। এমনকী টেলিভিশনে কাজ করতে গেলেও কিছুক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। টেলিভিশন আর ফিল্ম, এই দুই ইন্ডাস্ট্রিতে এত কিছু দেখলাম যে শেষ পর্যন্ত নিজের প্রযোজনা সংস্থা তৈরির রাস্তাটাই বাছতে হল! তবে শুধু টলিউডে নয়, বিভিন্ন পেশায় এমন হেনস্থার উদাহরণ আছে। আমাদের যৌথভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।