ভারতীয় ক্রাইম ড্রামা ওয়েব সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম’ (Delhi Crime) জিতেছে এমি অ্যাওয়ার্ড (emmy awards)। শেফালি শাহ, রসিকা দুগ্গল, আদিল হুসেন, রাজেশ তাইলাং অভিনীত এই সিরিজে ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণের পরবর্তী ঘটনার চিত্ররূপ রয়েছে। কস্টিউমের দায়িত্বে ছিলেন ডিজাইনার স্মৃতি চৌহান। মূল চরিত্র অর্থাৎ শেফালির পরনে প্রায় গোটা সিরিজ জুড়ে ছিল পুলিশের পোশাক। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল এই কাজ? মুম্বই থেকে ফোনে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন স্মৃতি।
(প্রথম প্রশ্ন করলেন স্মৃতি স্বয়ং)
আপনি কলকাতা থেকে বলছেন তো, কেমন আছে কলকাতা?
কলকাতার খবর ভাল। আপনি ভাল তো?
হ্যাঁ, ভাল আছি। আমি কলকাতাকে মিস করি। ভালবাসি।
আপনি কলকাতা এসেছেন কখনও?
কলকাতায় ছবির শুটিংয়ে গিয়েছি অনেকবার। তাছাড়া আমি জামশেদপুরের মেয়ে। বাবা, মা জামশেদপুরেই থাকে। ভাই পুণেতে। ফলে ছোট থেকেই কলকাতা কানেকশন রয়েছে। বাংলা পড়তে পারি না। বলতে পারি। বাবা বাংলা বুঝতে পারেন। আসলে আমার দিদিমা বাঙালি।
আরও পড়ুন, বউ বলেছে, এতদিন তো আমি জানতামই, এবার গোটা পৃথিবী জানে ‘মকবুল’ কত অনুগত: সাজি চৌধুরি
বাহ্! এমির সাফল্যের জন্য অনেক অভিনন্দন…
ধন্যবাদ। আমি এই সুযোগটা পেয়েছি বলে সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই টিমটার জন্য আমি গর্বিত।
কত বছর ধরে কাজ করছেন আপনি?
আমি শিক্ষকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করি। তারপর কর্পোরেট চাকরি করতাম। সেখান থেকে টেলিভিশন। তারপর ফিল্মের কাজ শুরু করি। কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে ১০-১১ বছর কাজ করছি। আর প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি প্রায় ১৯ বছর।
ইন্ডাস্ট্রিতে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবেই জার্নি শুরু?
না। প্রথমে সহকারী পরিচালক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেছিলাম। প্রথম কস্টিউম করেছিলাম ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’ ছবিতে। ২০১১-এ মুক্তি পেয়েছিল। এরপর ‘মনসুন শুটআউট’ করেছিলাম। ‘টুমবাড়’ করেছি। তারপর থেকেই কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে আমার কাজ লোকের চোখে পড়ে।
‘দিল্লি ক্রাইম’-এর কাজটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
শেফালির চরিত্রটা ছিল এমন যে চার-পাঁচদিন ধরে অফিস করছে, বাড়ি যাচ্ছে না। দিল্লি পুলিশের অফিসার। আর দিল্লি পুলিশের তরফে তাঁদের পোশাক অনস্ক্রিন দেখানোর অনুমতি ছিল আমাদের কাছে। ফলে কোথাও কোনও ভুল হলে মুশকিল। সাধারণত পুলিশের যে কস্টিউম ছবিতে দেখানো হয়, কিছু একটা পরিবর্তন থাকেই। ধরা যাক, কলকাতা পুলিশের কস্টিউম, হয়তো KOLKATA-র O রাখা হবে না। কিন্তু এখানে আসল ইউনিফর্ম দেখানো হয়েছিল। সেটাই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কোনও ভুল করা যাবে না। একটা স্টারের পজিশনও ভুল হলে চলবে না। কস্টিউমের রং, টুপির রং, ক’টা স্টার থাকবে ইউনিফর্মে, সব খেয়াল রাখতে হত। সেটা অনেক কঠিন। দর্শকের হয়তো মনে হবে, ইউনিফর্ম একটাই। কিন্তু সেটা ১০টা কস্টিউম করার থেকেও বেশি কাজ। আর আমরা কিন্তু দোকান থেকে ইউনিফর্ম কিনিনি। সব কিছু তৈরি করেছিলাম। সবথেকে বড় কথা অভিনেতাদের জন্য পোশাকটা আরামদায়ক করে তোলাটাও চ্যালেঞ্জ ছিল। পুলিশের চরিত্র হলে কস্টিউম পরে দৌড়নোর দৃশ্য থাকতেই পারে। সেখানে পুলিশের মতো জুতো পরে অভিনেতা দৌড়তে পারবেন কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হত। তাঁকে কমফর্ট জোন দিতে হত সব সময়। সকলে মনে করেন, কস্টিউমে ইউনিফর্ম থাকলে কাজটা সহজ। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি, পুলিশ, আর্মির চরিত্রের কস্টিউম করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ রেস্ট্রিকশন অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?
শুটিংয়ের কোনও বিশেষ মুহূর্ত শেয়ার করতে চাইবেন?
দু’টো ঘটনা বলছি। একবার আমাদের শুটিংয়ের এক ড্রাইভার শরীর খারাপ হওয়ায় গাড়ি নিয়ে রাজস্থানে নিজের গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। ওই গাড়িতে অভিনেতাদের জ্যাকেট ছিল, প্রোডাকশনের জিনিস ছিল। ড্রাইভার যে চলে গিয়েছেন, সেটা কেউ জানত না। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না ওঁকে। রাত ১২টায় প্যাক আপের পর থেকে ভোর পর্যন্ত কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ওঁর। পরের দিন কন্টিনিউইটি শুট ছিল। সবাই চিন্তা করছে। সকালে খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। ওই চার-পাঁচ ঘণ্টা কীভাবে কেটেছিল, আমরাই জানি।
আর একবার এই সিরিজের শুট রাজস্থানের রেওয়ারিতে করছিলাম। দুই স্থানীয় পঞ্চায়েতের মধ্যে হঠাৎ ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এত খারাপ ভাবে ঝামেলা শুরু হয়েছিল যে, আমাদের পালাতে হয়েছিল। প্রযোজক তখন একটাই কথা বলেছিলেন, আগে ইউনিটের সদস্যরা বাঁচুক। জিনিস পরে বাঁচানো যাবে। যদিও পরে সব জিনিসও পাওয়া গিয়েছিল।
এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ের পর পার্টি হয়েছে আপনাদের?
করোনা পরিস্থিতিতে পার্টি তো হয়নি। সবার সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে কথা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পার্টি হবে। আমাদের পরিচালক রিচি মেহেতা লন্ডনে রয়েছেন। সকলকে নিয়ে পার্টি হবে।
নতুন কী কাজ আসছে আপনার?
বিজয় ভার্মা, সোনাক্ষী সিনহা, গুলশন গ্রোভারের সঙ্গে একটা ওয়েব সিরিজ করছি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শুটিং শুরু হবে। অ্য়ামাজন প্রাইম ভিডিওতে দেখা যাবে সেটা। একটা নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারিতে কস্টিউম কনসালটেন্টের কাজ করছি। আর ঋষি মেহেতার পরের ছবিতে কাজ শুরু করেছি।
আরও পড়ুন, নেপথ্যের কারিগররা কি আড়ালেই থাকবেন? হেয়ার স্টাইলিস্টের মৃত্যুতে ফের উঠল প্রশ্ন
এত বছরের অভিজ্ঞতা আপনার। কোনও কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন?
ভাগ্যক্রমে খুব ভাল লোকেদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি আমি। কোনও অভিনেতার সঙ্গে খারাপ এক্সপিরিয়েন্স নেই। কঠিন অভিজ্ঞতা হয়েছে বলতে পারেন। কোনও প্রজেক্টের নাম বলব না। কিন্তু কিছু মিডলম্যান থাকেন, যাঁরা কোনও কারণ ছাড়াই জীবনটা জটিল করে তোলেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, মন থেকে কিছু চাইলে সেটা পাওয়া যায়। অন্তত আমার সঙ্গে তো সেটা হয়েছে। কঠিন পরিস্থিতি এলেও সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই, যাতে নিজের কাজের জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারি। আর আলাদা করে দু’জন অভিনেত্রীর কথা বলতে চাই।
বলুন প্লিজ…
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। খুব প্রফেশনাল, লজিক্যাল, ডাউন টু আর্থ। লজিক দিয়ে বোঝালে সব বোঝেন। অনেক আগে ক্যাটরিনা কইফের সঙ্গে একটা বিজ্ঞাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেটে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। খুব অ্যাডজাস্ট করে কাজ করেছিলেন।