‘মাসান’ ছবির বেলুন উড়ে যাওয়ার দৃশ্যের সেই লাজুক মেয়েটির হাতে আজ বন্দুক। মুখে গালিগালাজ। কিন্তু ঠোঁটে এক অমলিন ‘বাঙালি’ হাসি। সে হাসি রেখে বলে চললেন ,বলিউড ড্রাগস, লকডাউন, কিংবা সুশান্ত সিং রাজপুতের মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে। শ্বেতা ত্রিপাঠী (Shweta Tripathi)।
লকডাউনে চার-চারটে সিরিজ রিলিজ হল। আপনি কিন্তু সত্যিই ‘লাখো মেঁ এক’।
আসলে আমরা যাঁরা অভিনয় করি, তাঁরা চাই কাজগুলো যেন মানুষের কাছে পৌঁছয়। আর আমি কাজ নিয়ে খুব চুজি। আমি ভাগ্যবান যে ব্যাক টু ব্যাক রিলিজ এবং আমার কাজের এত প্রশংসা হচ্ছে।
‘বাটাটাওয়াড়া’ আপনার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের নাম। অদ্ভূত তো!
আমার সব হ্যান্ডলের নামই তাই। বাটাটা মানে আলু। পৃথিবীর যে কোনও জায়াগাই হোক না কেন, ‘আলু’ সবাই চেনে। কারণ আলু যে কোনও তরকারিতে মিশে যেতে পারে। আমিও আলুর মতো যেন কোনও চরিত্রে মিশে যেতে পারি।
তার মানে আপনি ভীষণ ফুডি।
ভীষণ। ডাই হার্ড ফুডি। আই লাভ ফুড।
আরও পড়ুন গ্রাসরুটে পলিটিশিয়ান কম, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি: পঙ্কজ ত্রিপাঠী
এবার আপনি একজন বাঙালির মতো কথা বলছেন।
হা হা হা… আমি একটা ছবি করছি ‘ময়দান’। অমিত শর্মা ডিরেক্ট করছে। বাঙালি শুনতেই ছবির কথা মনে পড়ল। আর জানেন তো অনেকে আমাকে বলে যে, আমি নাকি এক্কেবারে বাঙালি।
যিনি বলেছেন, তিনি খুব ভুল বলেননি। কারণ বোধহয় আপনার হাসি। বাঙালিদের হাসিটা জাস্ট ‘জানলেওয়া’…
থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ।
কোনটা বেশি কঠিন ছিল বলুন তো? মির্জাপুর-২ তে বন্দুক চালানো না বলিউড ড্রাগস ইস্যুতে আওয়াজ তোলা?
আমি কিন্তু সবসময়ই আওয়াজ তুলেছি। কারণ আমার বাবা-মা শিখিয়েছেন যে জীবনে স্ট্যান্ড পয়েন্ট থাকা উচিৎ। গুলি চালানোও ভীষণ টাফ, কারণ জোরে আওয়াজ হয়। আর বন্দুকটাও ভারি ছিল। বন্দুকটাও দারুণভাবে চালাতে হত আর আমাকে চরিত্রর মধ্যেও থাকতে হত। আর গোলু চরিত্রটাই ভীষণ কমপ্লেক্স। কারণ সে নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আমি চরিত্রটার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। গোলু আর আমার জীবন একেবারে আলাদা। গোলু নিজের জীবনে যা করেছে, আমি আমার জীবনে তা করতেই পারব না।
তার মানে আপনার কাছে দুটোই টাফ ছিল। কিন্তু একটা কথা বলুন, বলিউড ড্রাগস ইস্যু নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
বলিউড আর ড্রাগস দুটোকে আমি এক জায়গায় আনবই না। বলিউড আমাকে ভালবাসা, সম্মান দুটোই দিয়েছে। আমি যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলতে ভালবাসি। আমাকে কখনও বোঝানো হয়নি যে আমি আউটসাইডার। ‘হারামখোর’ আমার প্রথম ছবি থেকে আমাকে বোঝানো হয়েছে যে, প্রতিভার সময় ঠিক আসবে। সময় হয়তো লাগবে। কিন্তু আপনার ট্যালেন্ট এক সময় প্রশংসা পাবেই। আমি এই বলিউডকে চিনি। আসলে গুজব শুনতে ভীষণ মজা লাগে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে এটা কোনওভাবে কারও ব্যাক্তিগত জীবনকে আঘাত করছে। তাই কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জাজমেন্ট করা একেবারে উচিৎ নয়।
মির্জাপুর-২ প্রতিশোধ নেওয়ার গল্প। আপনার জীবনে আছে কোনও প্রতিশোধের গল্প?
না না। আমি রিয়েল লাইফে এক্কেবারেই ড্রামা পছন্দ করি না। আমি চাই আমার অভিনীত চরিত্রগুলো আমার রিয়েল লাইফের চেয়ে একেবারে আলাদা হোক। আমি নিজের পরিবারকে ভীষণ ভালবাসি। বাড়ির খাবারদাবার ভীষণ পছন্দ করি। এবং সেই কারণেই আমি আমার চরিত্রগুলোকে অন্যভাবে দেখতে চাই। আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। আমি ক্ষমায় বিশ্বাস করি।
পিস!!!
উয়েস পিইইইইস। বাঁচো এবং বাঁচতে দাও।
আপনার জীবনের প্রেমের গল্প কিন্তু ভীষণ ইন্টারেস্টিং। বর আপনাকে অ্যামিউজসমেন্ট পার্কে দোলনায় বসিয়ে প্রোপোজ করেছে!
কারেক্ট, এটা সত্যি। ও আমার জীবনের সবচেয়ে পছন্দের মানুষ।
ওঁকে বলবেন উনি কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম।
একদম। নিশ্চয়ই বলব। ও ভীষণ ট্যালেন্টেড। আমরা ভাবলাম আমাদের জীবনে কিছু অন্যরকম হোক। অ্যমিউজমেন্ট পার্ক ভীষণ পছন্দ করি। সেখানে হল প্রোপোজ। সাত বছর হতে চলল। আর জানেন, যখন বিয়ের প্রস্তাব দিল, সেটাও অন্যরকম ছিল। নাটকের মঞ্চে!
শ্বেতা, কোভিড সময়ে আমরা আমাদের জীবনে অনেক কিছু মিস করে গিয়েছি। আপনি কী মিস করেছেন?
আমি পরিবার, বন্ধুবান্ধবকে ভীষণ মিস করেছি। মালিকা দুয়া আমার খুব কাছের বন্ধু। ওকে খুব মিস করেছি। দিল্লিতে ছিলাম শ্বশুড়বাড়িতে। বাড়ির খাবারদাবার খেয়েছি। তাঁরা আমাকে এমনভাবে রেখেছেন যে, বাবা-মায়ের কথা পড়ে মন খারাপ হয়েছে। আর সব থেকে বেশি মিস করেছি শুটিং সেট। ভীষণ মিস করেছি।
আপনার তিনটে ওটিটির অভিনীত চরিত্রগুলোকে আপনি নিজেই রেট করুন। ডক্টর শ্রেয়া পাঠারে (লাখোঁ মে এক), গোলু (মির্জাপুর) এবং প্রিয়াঙ্কা মিশ্রা (মেড ইন হেভেন)।
গোলু ভীষণ পছন্দের। ডাক্তার শ্রেয়া ও প্রিয়াঙ্কা মিশ্র দুটোই ভীষণ পছন্দের।
এবার ফিল্মের চরিত্র। শালু গুপ্তা (মাসান), সন্ধ্যা (হারামখোর), এনাক্ষী (গন কেশ), ইউভিষ্কা (কারগো।
শালু গুপ্তা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। যদি রেট করতে হয় তাহলে বলব আর সন্ধ্যা শালু , এনাক্ষী, ইউভিষ্কা।
পাইপলাইনে আর কী-কী রয়েছে?
দু’সপ্তাহে শুট শুরু করব, নেটফ্লিক্স এবং হটস্টারের জন্য। এসকেপ লাইফ (হটস্টার) সুনয়না চরিত্রে অভিনয় করছি।
হাথরাস কাণ্ডের পর জীবনে কিছু পাল্টেছে?
এটা তো প্রথম নয় দেশে যে এমন কাণ্ড ঘটেছে। আমরা এখনও মহিলাদের সম্মান করি না। বদলটা দেশে শুরু হবে না। এটার শুরু হবে আমাদের নিজেদের ড্রইংরুমে, নিজেদের পরিবারের মধ্যে, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে। আমরা শিখব একজন মহিলাকে সম্মান দেওয়া। কোথাও পড়ছিলাম ৯৫ শতাংশ ধর্ষণ করছে এমন পুরুষ, যাদের রেপ-সার্ভাইভার চেনেন।
এই শব্দগুলো শুনলে কী মাথায় আসে?
বেশ।
ভিকি কৌশল।
মাসান ছবির দৃশ্যে সেই লাল বেলুন উড়ে যাচ্ছে।
নওয়াজ।
গুরু।
ড্রাগস এবং বলিউড।
একসঙ্গে যায় না।
সুশান্ত সিং রাজপুত।
সম্মান।
কঙ্গনা রানওয়াত।
সম্মান।
রিয়া চক্রবর্তী।
সম্মান। ওঁর সঙ্গে যা হয়েছে সেটা অনুচিত ছিল।
টুইটার ট্রোল।
ডিলিট, ব্লক, ইগনোর।
বাংলায় আমরা একটা কথা বলে থাকি, মিষ্টি মেয়ে। শ্বেতা আপনি ভীষণ মিষ্টি মেয়ে।
থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ , থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।