
‘রক্তবীজ টু’ অ্যাকশন থ্রিলারের পরতে-পরতে বিনোদন। প্রথমভাগে কিছু অংশে গতি কমেছে। দ্বিতীয়ার্ধ টানটান, বিশেষ করে শেষ আধ ঘণ্টায় খেলা ঘুরে যায়। মিশন এম টু নিয়ে এগিয়েছে ছবি। ‘রক্তবীজ’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা সেই ছবির পঙ্কজ সিংহ-কে চেনেন। আবীর চট্টোপাধ্যায়কে এই চরিত্রে পছন্দ না করে উপায় নেই। সেই কারণে প্রথম ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল, কবে পঙ্কজ সিংহ আবার বড়পর্দায় ফিরবে? ‘রক্তবীজ টু’-র ক্লাইম্যাক্স দেখে মন ছটফট করে, আবার পঙ্কজকে বড়পর্দায় দেখার জন্য। পঙ্কজের টিমে অফিসার সংযুক্তা দর্শকদের জন্য চুম্বক। মিমি চক্রবর্তী এই চরিত্রটি এমনভাবে করেন যে, আর কোনও নায়িকাকে এই চরিত্রে এখন ভাবতেই পারি না। আবীর-মিমির জুটিকে প্রথম ছবিতে দেখার পরই ঠিক যতটা প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষারত ছিলাম সিক্যোয়েলের জন্য, সিনেমা হলে বসে, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এই ছবিতে তাবড়-তাবড় অভিনেতারা রয়েছেন। সীমা বিশ্বাস, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বেশ কিছু নাম। দেবলীনা কুমার, সত্যম ভট্টাচার্যর মতো অভিনেতারাও যথাযথ। অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সুব্রত দত্ত, বিভিন্ন চরিত্রে নামী নামদের নিয়ে এসেছেন পরিচালকদ্বয়। তবে আবীর-মিমির রসায়নের রেশই থেকে যায়।
এই গল্পে ভারত-বাংলাদেশের সমীকরণের চিত্র উঠে এসেছে। এক সন্ত্রাসবাদী বাংলাদেশে একটা বিশেষ খেলার দিনে, সেই দেশের দুই অন্যতম মাথাকে গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ছবির প্রথম থেকেই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, কীভাবে সে ছক সাজাচ্ছে। ভারতের পুলিশের পক্ষে বাংলাদেশে পৌঁছে সন্ত্রাস দমন করার কাজ কঠিন। দেশ বদলের সঙ্গে-সঙ্গে গোলাপের মিষ্টি গন্ধের পরিবর্তে কাঁটা জোটে অফিসারদের কপালে। তবে কটু কথার চেয়ে অনেক বড় মানুষের প্রাণ। সেই লক্ষ্যে পঙ্কজ সিংহের টিম কীভাবে সন্ত্রাসবাদীকে ধরবে, তা নিয়েই গল্প।
চিত্রনাট্য জুড়ে একটার পর একটা ঘটনার ঘনঘটা শিরদাঁড়া সোজা করে বসে থাকার কারণ। তবে গান একটু কম থাকলে ভালো হতো। যেমন নুসরত জাহানের আইটেম ডান্সটি একটু ছোট করাই যেত। আবীর-মিমির রোম্যান্টিক গানটিও গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায় এমন নয়। তবে আলাদা করে দেখতে দারুণ লাগে। এই ছবিতে অঙ্কুশের সঙ্গে কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের জুটি। তাঁদের দু’টি চরিত্রের প্রেমের গল্পটা মনে গেঁথে যায়। এই ছবির দুই মুখ আবীর-মিমি হওয়া সত্ত্বেও কৌশানীর উপস্থিতি ছবির অনেকটা জুড়ে। জুটি হিসাবেও অঙ্কুশ-কৌশানীকে ভালো লাগল। অঙ্কুশের কেরিয়ারের খেলাতে এই চরিত্র তাঁকে জয় এনে দেওয়ার মতো। নিজেকে নিংড়ে দিয়ে কাজ করেছেন অঙ্কুশ। আবীরের মুখোমুখি যখন হয়েছেন অঙ্কুশ, তখনই বাড়তি শিহরণে ভরে গিয়েছে সিনেমা হল। ছবিতে আবীর-অঙ্কুশের অ্যাকশন দৃশ্যটি মনে থেকে যাবে বহুদিন।
আবার ফিরে আসি আবীর-মিমির কথায়। এবার দুর্গাপুজোয় আবীরের দু’টো ছবি দেখলাম। কোনও সংশয় নেই, এই ছবিতে আবীরকে বেশি ভালো লেগেছে। তাঁকে দেখতে এত হ্যান্ডসম লাগছে বড়পর্দায় যে, সুন্দরীদের হতাশার কারণ হয়ে উঠতে পারেন তিনি। আবীরের জুটি জমে কার সঙ্গে বেশি? কেউ বলেন জয়া আহসান, কেউ বলেন সোহিনী সরকার। তবে ‘রক্তবীজ টু’ দেখে বলতেই হয়, আবীরের পাশে মিমি আজকাল মন গলিয়ে দেন। পঙ্কজ যখন একবার দিল্লিতে আসতে বলে সংযুক্তাকে, তখন মনে হয়, এই বুঝি আমারও মনের মানুষ শেষমেশ এরকম ডেকে পাঠাবে। মিমির দুর্দান্ত পারফরম্যান্স রয়েছে পুলিশ অফিসার হিসাবে। একটা ছোট অভিযোগ! তাঁকে আরও অ্যাকশন করতে দেখতে চাই পরের ছবিতে। মিমির পাশে কাঞ্চন যেসব সংলাপ বলে মাতিয়ে রাখেন, তাতেও ভরপুর মজা পেয়েছি। আবীর-মিমির গানে, নীল বিকিনিতে মিমি স্বপ্ন-সুন্দরী। দু’ মাস ধরে ডায়েট করার পর এই দৃশ্যের শুটিং করার কাজটা যে সহজ নয়, সেটা বুঝি। তবে কষ্ট করে, এমন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন মিমি যে, টলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকাদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সত্যি বলতে কী, এই দুই চরিত্রের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেতে হয়, যে মনে হয়, কবে ওরা একে-অন্যকে প্রেমের কথা বলবে?
ছবির শেষ টুইস্টটি ব্রহ্মাস্ত্র। সেখানে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি জানান দেয়, ‘রক্তবীজ ৩’ হতে পারে। খুব অল্প সময় হলেও বড়পর্দায় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি দর্শকদের মধ্যে বাড়তি উত্তজেনা তৈরি করেছে। এই ছবি তৈরির ক্ষেত্রে যে রিসার্চ রয়েছে, তার মধ্যে গভীরে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। পরিচালকদ্বয় এবং জিনিয়া সেনের কাজ এই ক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে। ‘রক্তবীজ’-এর ইউনিভার্স এমন প্রভাব ফেলেছে দর্শকমনে যে বিভিন্ন চরিত্রের গতি-প্রকৃতি কী হতে পারে, তা নিয়ে আলাদা করে ভাবনার উদ্রেক হয়। বাংলা ছবিতে এমন ইউনিভার্স তৈরি করার কাজটা জরুরি। তাই ‘রক্তবীজ টু’ নিখুঁত ছবি না হলেও, মোটের উপর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই।