
সোমবার নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে উন্নয়নের পাঁচালি গাইতে ডাক পেয়েছিলেন ইমন চক্রবর্তী। এই গান প্রকাশ্যে আসার পর কিছু তীর্যক মন্তব্য ধেয়ে এসেছে ইমনের দিকে। বিষয়টা নিয়ে কী বলছেন গায়িকা? TV9 বাংলার প্রশ্নের উত্তরে ইমন খোলসা করলেন, ”আমার কাছে ফোন আসে। গানের কথা আর সুর পাঠানো হয়। আমি গানটা গেয়েছি। এবার বলি, আমি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, বেশ কিছু বছর ধরে রাজনীতির থেকে একেবারে দূরে থাকি। আমি রাজনীতির মঞ্চের মানুষ নই। কিন্তু সোমবার যখন গেলাম, তখন উনি আমাকে ডেকে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলেন। ওঁর বাবা-মায়ের কথা বলেন। ওঁদের বাড়িতে একটা হারমোনিয়াম ছিল, যেটা দিদি বাবা মারা যাওয়ার পর বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। আমি ওঁর মানবিক দিকটা দেখতে পেলাম আবার। এই কথাগুলো বলছি বলে, কেউ আমাকে ব্যঙ্গ করতে পারেন, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”
ইমন যোগ করলেন, ”গানটা গাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন। ওখানে উপস্থিত যাবতীয় নামী ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে একইভাবে আমাকে সম্মান জানিয়েছেন। এরকম করে কেউ আগে আমাকে সম্মান জানাননি। তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিরনত হয়ে থাকব, এই সম্মানটা দেখানোর জন্য। ২০১১ সাল থেকে আমি গান গাওয়া শুরু করেছি। তখন থেকে যেসব বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছি, আমার মনে হয় খুব কম শিল্পী সেসব বাধা পেরিয়েছেন। একজন মেয়ে হিসাবে আমাকে অনেক বৈষ্যমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনও যেতে হয়। সেই জায়গায় আজকে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছেন, তাতে আমি তাঁর কাছে নতজানু হয়ে থাকলাম। এর জন্য আমাকে যদি কেউ বলেন, তৃণমূল বা আমি বিক্রি হয়ে গিয়েছি, সেগুলো তাঁদের বক্তব্য। আমার জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শুধু আমাকে নয়, আমার সঙ্গে যে যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীরা ছিলেন, তাঁদের উনি একই সম্মান দিয়েছেন। এই সম্মান দিতে জানতে হয়। এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম।”
কিছু শিল্পীই এই নিয়ে কটাক্ষ করছেন। সেটা নিয়ে কী বলবেন ইমন? গায়িকার বক্তব্য, ”এমন কটাক্ষতে অবশ্যই খারাপ লাগে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি সত্যি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। নবান্ন থেকে আমার বাড়ি ১৫ মিনিটের দূরত্ব। নবান্নের সামনে দিয়ে অটো করে যাতাযাত করতাম। সেই জায়গা থেকে নবান্নতে দাঁড়িয়ে গান গাওয়ার মুহূর্তটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি সত্যি বলছি, আজকে উনি আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমার হয়ে উনি ডিসক্রিমিনেশনের বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছেন। আমাকে যদি কেউ সম্মান করেন, সেটা কি আমি হেলায় হারাবো? অন্য শিল্পীরা যদি এই ডাকটা আসত, তাঁরা কি যেতেন না?”
ইমন এটা স্পষ্ট করে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ৪৫ মিনিট ধরে কথা বলার সুযোগ পেলেও, তিনি একেবারেই রাজনীতি সংক্রান্ত কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি। একজন শিল্পী হিসাবে গায়িকা যে সম্মান পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, সেটা নিয়েই তিনি আপ্লুত।