
শনিবার মধ্যরাত থেকেই চর্চায় পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় ও জোজো মুখোপাধ্যায়ের এক অনুষ্ঠান। মধ্যরাতে লাইভে এসে পৌষালীর টিমকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন জোজো। লাইভে এসে খোলসা করেন ঠিক কী কী কারণে তিনি মোটেও সেদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান করতে চাননি। তাই বিজয়গড়ে এক ক্লাব অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় গায়িকা জোজো ও পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে সঙ্গীত মহলে। জোজোর দাবি, তাঁর বাদ্যযন্ত্রে পৌষালীর দলের সদস্যরা অনুমতি ছাড়াই হাত দিয়েছেন এবং তাঁদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেছেন। এক লাইভ ভিডিয়োতে জোজো বলেন, “আমাদের অনুমতি না নিয়ে বাদ্যযন্ত্র সরানো হয়েছে। এটা একেবারেই অপেশাদার আচরণ। আমার সদস্যদের অপমান করা হয়েছে, যা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে।” তিনি জানান, এদিন তিনি অনুষ্ঠান করবেন না বলেই স্থির করেছিলেন, কিন্তু দর্শকদের ভালবাসার কথা ভেবে তিনি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করেন বলেই জানান।
বিষয়টি যখন চাঞ্চল্য তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ঠিক তখনই সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজির হন খোদ পৌষালী। তার আগে পর্যন্ত, এই বিষয় তিনি টু-শব্দটিও করেননি। তবে গায়িকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই তিনি সত্যি সামনে আনার জন্যে একপ্রকার ভিডিয়োটি করতে বাধ্য হয়েছেন বলেই দাবি করেন গায়িকা। ভিডিয়ো বার্তায় পৌষালী বলেন, “আমি জুনিয়র আর্টিস্ট, কিন্তু পেশাদারিত্ব আমি সিনিয়রদের কাছ থেকেই শিখেছি। জোজোদির টিমের সদস্যরা যেই সময় সাউন্ড চেকের জন্যে ডাক পেয়েছিলেন, সেই সময়মতো উপস্থিত হয়নি। ফলে দেরি হওয়ায় পুরো সূচি বিঘ্নিত হয়। আমাদের ওপর চাপ আসতে থাকে, তাড়াতাড়ি করো। আমার টিমের সদস্যরা সব সময় নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছে যান। এদিনও তাই করেছিলেন।” তবে বিবাদ ঘটে অন্য কারণে। জোজোর টিম সাউন্ট চেক করে মঞ্চ ছাড়লে, পৌষালীর টিমের সদস্যদের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মঞ্চে জায়গার সামান্য অভাব থাকায়, তাঁর টিমের এক সদস্য অনুরোধ করে জোজোর টিমের সদস্যকে বাদ্য যন্ত্রটি সামান্য সরিয়ে দিতে। তাতেই নাকি শুরু হয় বচসা। তাঁরা তাতে রাজি না হয়ে স্থান ত্যাক করলে, অনুষ্ঠান শুরুর চাপ থাকায় পৌষালীর টিম সামান্য ২ ফিট সরিয়ে দেয় সেই বাদ্য যন্ত্র, আর তাতেই নাকি মেজাজ হারান জোজো।
যদিও পৌষালীর পৌষালীর বিশ্বাস, জোজো সম্পূর্ণ সত্যিটা জানেন না। তাই তিনি স্পষ্ট করে দেন, “মঞ্চে জায়গার অভাবেই দু’ফুট বাদ্য সরাতে হয়েছিল, সেটাও আমরা ক্লাবের অনুমতি নিয়েই করেছি। কারও বাদ্যযন্ত্রে অনুমতি ছাড়া হাত দিইনি। সেখানে তোমার টিমের কেউ ছিল না।”
এদিনের কথা প্রসঙ্গে আরও অনেক বিষয় উঠে আসে। যদিও পৌষালী নিজের তরফ থেকে বিষয়টি সকলের সামনে আনেন কারণ ‘পরিস্থিতি’। তবে সঙ্গীত প্রেমীরা এই বিষয়টি নিয়ে বেজায় চিন্তিত, দুই শিল্পীরই কমেন্ট বিভাগে যে যার মতামত দিয়ে আসছেন। পৌষালীর কথায়, এরপর যখন তাঁর কাজকে ঘিরে ময়নাতদন্ত করবে সোশ্যাল মিডিয়া, তখন যেন তাঁরা সবটা জেনে করে, তাই সত্যিটা সামনে আনা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেছেন।
তবে বিষয় এখানেই শেষ নয়, এবার রবিবার বিকেল হতেই জোজোর ড্রামার সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি জানান, পৌষালীর ভিডিয়োতে জোজোর ড্রামারের উল্লেখ থাকায় অনেকেই তাঁকে প্রশ্ন করছেন, তবে তিনি সেই সময় কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। যদি কেউ কথা বলে থাকেন, তবে টিমের অন্যান্য সদস্যরা। তিনি পৌষালীর ড্রামারকে চেনেন, তিনি তাঁর সঙ্গে বচসায় জাননি। তবে একবাক্যে স্বীকার করে নেন, ড্রাম যে সরানো যাবে না, এই নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। কারণ একবার তা সেট হয়ে গেলে আবার তা সরানো যায় না। যদি সরাতে হয়, তবে আবারও তা সেট করতে হয়। তবে খারাপ ব্যবহার কে করেছেন তিনি জানেন না, তবে তিনি যে করেননি, সেই বিষয়টা স্পষ্ট করে দেন।
অন্যদিকে বিষয়টা নজরে আসতেই আবার নেটিজেনদের কেউ জোজোর পাশে দাঁড়িয়ে পেশাদারিত্বের প্রশ্ন তুলছেন, আবার কেউ পৌষালীর ব্যাখ্যায় যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন। যদিও দুই শিল্পীই জানিয়েছেন, তাঁরা কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা চান না। শিল্পী সমাজে এখন একটাই প্রশ্ন—দুই গায়িকার এই ভুল বোঝাবুঝি কি আলোচনার মাধ্যমে মিটবে, নাকি এই ঘটনার ছায়া আরও গভীর করবে সঙ্গীতমঞ্চের অন্দরের অস্বস্তি?