
‘মায়া সত্য ভ্রম’ ছবির জন্য প্লেব্যাক করলেন গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। ইদানীং তাঁর কাজের সংখ্যা কি কমেছে টলিপাড়ায়? TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিষয়টা খোলসা করলেন গায়িকা।
শমীক রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘মায়া সত্য ভ্রম’-এর জন্য নতুন গান গাইলেন। শমীক পরিচালিত ‘বেলাইন’ দর্শকের পছন্দ হয়েছিল। নতুন গানটা গাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও কারণ আছে?
লগ্নজিতা: শমীকের নাম চর্চিত ‘বেলাইন’ ছবিটার জন্য। আমার গানটা গাওয়ার আরও কারণ হলো, তমালদার সঙ্গে একটা কাজ করতে পারলাম। এই সময়ের অসম্ভব গুণী একজন মিউজিশিয়ান তমালদা (কান্তি হালদার)। আমার খুব কাজ করার ইচ্ছা ছিল ওঁর সঙ্গে। গানটা গেয়ে দারুণ লাগল। আমি আর শিলুদা একটা ডুয়েট গাইলাম। শিলুদা (শিলাজিত্ মজুমদার) যে কত বড় স্টার, সেটা সকলে জানেন। আমার মতো সকলেই শিলুদার গানের অনুরাগী, লেখার অনুরাগী। গানটা শুনলে বুঝতে পারবেন, শিলুদা ছাড়া এই গান আর কেউ গাইতে পারত না। তবে আমার ক্ষেত্রে সেটা সত্যি নয়। তা-ও যে আমার কথা ভাবা হয়েছে, সেটা ভালো লাগল।
সৃজিত মুখোপাধ্যায় আর মৈনাক ভৌমিকের ছবির হাত ধরে আপনি হিট পেয়েছেন। তবে সৃজিতের এই বছরের ছবিতে আপনার গাওয়া গান নেই। সেটা নিয়ে কী ভাবনা?
লগ্নজিতা: ঋজুদার যে কোনও কাছের মানুষ জানেন, কোনও কাজে যদি কাউকে দরকার পড়ে, ঋজুদা তার জন্য যে কোনও পর্যায় অবধি যাবে। আমাকে কোনও গানে দরকার হলে, চাঁদ থেকে হলেও নিয়ে আসবে। এই মানুষটা কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা প্রেম গোলায় না। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে খুব ভালো সম্পর্ক। সেই কারণে কয়েক দিন আগে হাসপাতালে দেখতে গেলাম। রণজয়ের (ভট্টাচার্য) সঙ্গে আমার এমন বন্ধুত্ব যে ‘কিলবিল সোসাইটি’-র সাকসেস সেলিব্রেট করলাম ওঁর সঙ্গে। কিন্তু বন্ধুত্ব আছে বলেই, আমাকে গান গাইতে দিতে হবে এরকম নয়। আবার এটা জানি, আমার জন্য কিছু থাকলে ওঁরা ঠিক ডাকবে।
আরজিকর কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে আপনি নাকি শাসকদলের বিরাগভাজন হয়েছেন। তারপর কি কাজ কমল?
লগ্নজিতা: গত নয় বছরে যা শো করেছি, এই বছর তার দশভাগের একভাগ শো পেলাম। কারণটা বোঝা সম্ভব নয়। হয়তো আমি খারাপ গান গাইছি! অথবা এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। তবে এটা সত্যি কাজের সংখ্যা অনেক কমেছে!
এখন কি এই অধ্যায় নিয়ে আফশোস হয়? অনেক অভিনেত্রীর দাবি, তাঁরা নাকি কাজ পাচ্ছেন না একই কারণে। আবার এক পরিচালকের দাবি, এমন প্রতিবাদ করতে কেউ-কেউ পারিশ্রমিক নিয়েছেন!
লগ্নজিতা: আমার কোনও আফশোস নেই। আমি কারও কথা শুনে, কারও প্রভাবে কিছু করিনি। নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে যা মনে হয়েছে, তার ভিত্তিতে করেছি। যে পদক্ষেপ করেছি, তার কী-কী মূল্য চোকাতে হতে পারে, কী শুনতে হতে পারে, সেই হিসাব আমার মাথায় ছিল। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছিলাম। তাই যা ঘটছে, তা নিয়ে আফশোস করি না।
‘মায়া সত্য ভ্রম’-এর প্লেব্যাক তা হলে একমুঠো অক্সিজেন?
লগ্নজিতা: এই প্লেব্যাক করে বেশ লাগল। আরও একটা গান গেয়েছি। এখনই বলতে পারছি না।
কর্মব্যস্ততা যখন কম, তখন নিজের জীবন কীভাবে গোছাচ্ছেন?
লগ্নজিতা: আগে আমি বাড়ির বাইরে সময় কাটাতে বেশি ভালোবাসতাম। তবে কোভিডের পর থেকে বাড়িতে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। হয় বই পড়ি, না হয় বাড়ি গোছাই বা অন্য কিছু করি। কাজের কোনও অভাব নেই। আর রেওয়াজ করা বাড়িয়ে দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটা ঝড়ের সময়। যখন ঝড় ওঠে, তখন ছাদে গিয়ে উঠে আমি নাচলে লাভ নেই। বরং বাড়ির মধ্যে এসে শান্ত হয়ে বসে থাকতে হবে। তার জন্য পাঁচটা কথা বলে, আর বিতর্ক বাড়িয়ে কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না। তারচেয়ে গান গাওয়ার জন্য নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই, যাতে আমার দক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারেন। আমার কাজ নেই, এটা ভাবলে যেমন খারাপ লাগে, তেমনই সংবাদপত্র বা চ্যানেলে চোখ রাখলে, চারপাশে মানুষের যে অবস্থা দেখি, তাতে নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। নিজের সমস্যাগুলোও তুচ্ছ মনে হয়।