Review: রঙের উৎসবেও রক্তক্ষরণের লাল প্রকট! কেমন হলো ‘ডাইনি’?

Bhaswati Ghosh | Edited By: জয়িতা চন্দ্র

Mar 14, 2025 | 12:30 AM

Dainee: নির্ঝরের কাজের খুঁটিনাটি নিয়ে কিছু কথা বলি। এই সমাজে মহিলাদের দমিয়ে রাখার যে চেষ্টা চলে, সেই প্রেক্ষাপটে ‘ডাইনি’-র গল্প অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি দুই বোনের গল্পটি যেভাবে রয়েছে, তাতে ওয়েব সিরিজের দু’টি স্তর প্রকট হয়। চিত্রনাট্য টানটান।

Review: রঙের উৎসবেও রক্তক্ষরণের লাল প্রকট! কেমন হলো ‘ডাইনি’?

Follow Us

সিরিজ়– ডাইনি 

মূলচরিত্র– মিমি চক্রবর্তী 

পরিচালক– নির্ঝর মিত্র

TV9 বাংলা রেটিং– ৩.৫

নির্ঝর মানেই স্বপ্নভঙ্গ নাকি? ‘শিকারপুর’-এর মতো ‘ডাইনি’ উলটপুরাণ। পরিচালক নির্ঝর মিত্র টলিপাড়ায় অপেক্ষাকৃত নতুন। তাঁর প্রথম কাজ ‘শিকারপুর’ তাক লাগিয়েছিল। এবার মিমি চক্রবর্তীকে প্রধান মুখ করে নির্ঝর তৈরি করলেন ‘ডাইনি’। তাঁর এই কাজ কোথাও প্রতিবাদের পক্ষে কথা বলে। সমাজ বদলানোর স্বপ্ন দেখার পক্ষে কথা বলে। সেই পথে হেঁটে বারংবার ঘা খেয়ে যাঁরা ক্লান্ত, তাঁদেরও আর একবার উঠে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার পক্ষে কথা বলে।

পরিচালক নিজেও স্বপ্ন দেখছেন। অন্তত ‘ডাইনি’-র ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট, তিনি সমাজের গাঢ় অন্ধকার দিকটায় আলো ফেলতে চেয়েছেন, একটু আলো জ্বালার আ্শায়। এসব ক্ষেত্রে কেউ কতটা পথ পেরোতে পারল, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাঁর চেষ্টা। এ দেশে ২০২৫ সালেও ডাইনি প্রথা আছে। প্রত্যন্ত কোনও গ্রামে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র সাজানোর লক্ষ্যে কোনও নিষ্পাপ মেয়েকে ডাইনি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁর উপর অকথ্য শারীরিক অত্যাচার হতে পারে। বা তাঁর অসহায়তা ঘিরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মজা লুঠতে পারে। ডাইনি সেরকমই একটা গল্প। উত্তরবঙ্গে একটা অঞ্চলের দুই বোনের গল্প। পাতা (মিমি) বিয়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে চলে যায়। তার বাবার একটা সম্পর্কের সূত্রে বাড়িতে আসে বোন। যার সঙ্গে একেবারেই সখ্য গড়ে ওঠে না পাতার। বোন লতাও পাতাকে প্রায় না বুঝেই ডাইনি বলে ডাকে। এরপর কিছুটা সময় কেটে যায়। দেশে ফিরে আসে পাতা। একটা বিশেষ কারণে লতার খোঁজ শুরু করে সে। সে বোনকে কীভাবে খুঁজে পাবে, সেটা করতে গিয়ে একটা গ্রামের মাথার সঙ্গে কী ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে, দুই বোনের সম্পর্কের সমীকরণ বদলাবে কিনা, তা জানতে ওয়েব সিরিজের ছ’টা এপিসোড একটানেই শেষ করতে হবে।

ওয়েব সিরিজের অধিকাংশ অংশে মিমির মুখে রক্তের দাগ। গভীর ক্ষত। এমন লুক নিয়ে ওয়েব সিরিজ করার জন্য নায়িকার সাহসের তারিফ করতেই হয়, বিশেষ করে ‘তুফান’-এর মতো ছবিতে যাঁর গ্ল্যামারাস লুকে গানে মিলিয়ন-মিলিয়ন ভিউ! মিমি যেমন পাতার চরিত্রটিতে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন, তেমনই নির্ঝর এই পুরো গ্রামটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন, অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত অথচ শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করে। মিমির বোনের চরিত্রে কৌশানী মুখোপাধ্যায় ভালো। একজন অসহায় ডাক্তারের চরিত্র আছে, যা দর্শকের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করবেই। সেখানেও অভিনয় দক্ষতা উল্লেখ করার মতো। চুম্বকের মতো টানেন এই ওয়েব সিরিজের খলনায়ক বিশ্বজিত্‍ দাস। তাঁকে বাংলা ছবি বা ওয়েব সিরিজে আরও বেশি করে দেখতে পাওয়া গেলে ভালো হয়।

নির্ঝরের কাজের খুঁটিনাটি নিয়ে কিছু কথা বলি। এই সমাজে মহিলাদের দমিয়ে রাখার যে চেষ্টা চলে, সেই প্রেক্ষাপটে ‘ডাইনি’-র গল্প অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি দুই বোনের গল্পটি যেভাবে রয়েছে, তাতে ওয়েব সিরিজের দু’টি স্তর প্রকট হয়। চিত্রনাট্য টানটান। একটা ওয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্বের শেষে যে উত্‍কণ্ঠা দর্শকমনে তৈরি হলে, কাজটাকে সফল বলা যায়, সেই পরীক্ষাতেও নির্ঝর ভালো ফল করেছেন। তবে কিছু ভুল চোখে পড়ল। একেবারে গোড়ার দিকে যে অ্যাকশন দৃশ্যটি আছে, সেটা দানা বাঁধেনি। হাতে লতার নামের ট্যাটু করে ধরা পড়ার বোকামিটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এরকম দু’-চারটে জায়গা নিয়ে মাথা না ঘামালে, এটা বলতে পারি, ‘ডাইনি’ ভুলে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। ‘ডাইনি’-র প্রভাব তীব্র।