রাগে-অভিমানে, খানিক প্রেমে, অনেক সময় গোঁ ধরা স্বামীকে একেবারেই পাল্টাতে না পরার ফলস্বরূপ অনেক মহিলাই হয়তো বলেন, “এই সংসার ত্যাগ করলাম” কিংবা “যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাব”। অনেকে আবার নিজে কোত্থাও না নড়ে স্বামীটির বন্দোবস্ত করার প্রয়াস আঁটেন। যেমন আঁটলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। স্বামীকে এক্কেবারে হিমালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার মতলব করেছেন তিনি। স্বামীটি তাঁর শসার মতো ‘কুল’। কোনও মতেই রাগ-অভিমান-দুঃখ যন্ত্রণার ধার ধারেন না তিনি। এতখানি ‘কুলনেস’-এই এবার সমস্যা হতে শুরু করেছে অভিনেত্রীর। তাই ফেসবুকের লম্বা পোস্টে তিনি বাধ্য হয়ে লিখেও দিলেন, “তোমার জন্য হিমালয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি”। কিন্তু কেন এমন কথা লিখলেন অভিনেত্রী?
এই পোস্টের পর সুদীপ্তার কমেন্ট বক্সে হুড়মুড়িয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেছেন সক্কলে। অনেকে ধরেই নিয়েছেন আজই তাঁদের বিবাহবার্ষিকী। তাই শুভেচ্ছাও জানাতে শুরু করেছেন। সুদীপ্তা লিখেছেন, “প্রায় তিন বছর ধরে খেটে, দিনরাত এক করে, তিলতিল করে বড় করে তুললে একটা বাচ্চাকে। সমস্তরকম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে গেলে তার জন্য অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে তাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলে প্রাণপণ। তারপর হঠাৎ একদিন শুনলে তার বাবা অন্য কেউ। বাচ্চাকে কেড়ে নিয়ে, তাকে রঙিন জামা পরিয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। আজ সারা দুনিয়া সেই বাচ্চার প্রশংসা করছে (নাকি শুধু রঙিন জামারই প্রশংসা করছে? আর সে সব আইসক্রিমের মত চেটেপুটে খাচ্ছে অন্য লোক। আর তুমি অশান্তি এড়াতে চুপচাপ গ্যালারিতে বসে খেলা দেখে চলেছ। আর মিটমিট করে হেসে চলেছ। অভিষেক সাহা, তোমার জন্য হিমালয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। মাইরি বলছি, তুমি প্লিজ় চলে যাও। দাড়ি-গোঁফ যা গজিয়েছে, ওরা তোমাকে এমনিই নিয়ে নেবে ওদের দলে। তোমার মত মানুষ এই (অ)সভ্য দুনিয়া ডিসার্ভই করে না। (আমি তোমার মত শান্তিপ্রিয়, ভদ্র, সভ্য, মার্জিত বোধহয় নই। আর হতেও চাই না। এই অসভ্য, বেয়াড়া, বাচাল বউকে গত ৮ বছর যেমন সহ্য করে আসছ, আগামী ৮৮ বছরও করে নেবে, আমি জানি) তোমাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই!”
পোস্ট দেখার পর প্রথমে অভিষেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে TV9 বাংলা। অভিষেক সটান বলে দেন, “আমি কিন্তু কিছুই বলব না। যে পোস্ট করেছেন, অর্থাৎ সুদীপ্তা, তাঁকে বরং জিজ্ঞেস করা ভাল। কারণ তিনি পোস্ট করেছেন। সকাল থেকে অনেক ফোন আসছে। আমি সকলকে তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে বলছি। কারণ, এখানে আমার কিছুই বলার নেই।”
এদিকে শুভ বিবাহবার্ষিকী উইশের পাশাপাশি অনেকে আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন সুদীপ্তার দাম্পত্য ঠিক আছে কি না। সুদীপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার আর অভিষেকের মধ্যে সবই ঠিক আছে। যদিও লোকে বিবাহবার্ষিকীও পোস্ট করছেন লাগাতার।”
কিন্তু স্বামীকে কেন হিমালয়ে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে চাইছেন সুদীপ্তা? প্রশ্নের জবাবে তিনি লিখেছেন, “উনি মোটামুটি সাধু হয়েই গিয়েছেন। চুল-দাড়ি গজিয়ে সে রকম দেখতেও হয়ে যাচ্ছেন। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তাঁর জন্য নয়। তাই মাঝেমধ্যে ঝগড়া করে আমি বলি, ‘চলে যাও তুমি হিমালয়ে’। আসলে নির্মোহ সাধুতে পরিণত হয়েছেন আমার স্বামী। কোনও কিছুতেই আর তাপ-উত্তাপ নেই তাঁর। তাই ঠান্ডা মাথায় সাজেশন দিয়েছি মাত্র। এই অসভ্য-জঘন্য পৃথিবী তোমার জন্য নয়।”
পোস্টের শুরুর দিকে যে বাচ্চা মেয়ে ও তার বাবার উল্লেখ সুদীপ্তা তাঁর পোস্টে করেছেন, তাঁর সঙ্গে তাঁদের কন্যাসন্তানের কোনও যোগ নেই। এ কেবলই রূপক মাত্র। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘মেটাফর’। আসলে যে কোনও শৈল্পিক কাজই সন্তানসম শিল্পীর কাছে। অনেক লালন করে গড়ে ওঠে সেই শিল্প। ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এটি ওয়েব সিরিজ়ের কথাই রয়েছে নেপথ্যে। যার সিংহভাগ পরিচালনা করেছিলেন সুদীপ্তার স্বামী অভিষেক সাহা (অভিষেক ‘উড়নচণ্ডী’র পরিচালক)। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সিরিজ়ের পরিচালক বদল হয়। যদিও অভিষেকের নেওয়া শটগুলির অনেকটাই নাকি রেখে দেওয়া হয়েছে সিরিজ়ে। শুনলে অবাকই হবেন, সেই ওয়েব সিরিজ়ের নাম নাকি ‘ডাকঘর’।
এদিকে বিবাহবার্ষিকী ভেবে যাঁরা সুদীপ্তাকে কোট করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে এই সংক্রান্ত দ্বিতীয় পোস্টটি করেছেন অভিনেত্রী। এবং তাতে লিখেছেন, “আমাদের বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ। এখন আপাতত তুলে রাখছি এগুলো। আমাদের বিবাহবার্ষিকী আগামী ১৪ মে। সেদিন পেড়ে নিয়ে মেখে নেব সব আদর আর আশীর্বাদ। অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আমরা ভাল আছি। দিব্যি আছি। কলকাতার বাইরে শুটিং করছি। পরিবার আমার সঙ্গেই আছে। অযথা চিন্তা করে কেউ শরীর খারাপ করবেন না।”