‘ক্ষমা চেয়ে নিন’, অনির্বাণকে তোপ ‘চতুর্থ ঘোষ’ রুদ্রনীলের

কয়েকদিন আগে তিন ঘোষ, এবার তাঁর গানের লিরিক্সের অংশ হয়ে উঠল 'সনাতন ধর্ম'। আর সেই অংশটুকু তুলে ধরে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতাকে একহাত নিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। 

ক্ষমা চেয়ে নিন, অনির্বাণকে তোপ চতুর্থ ঘোষ রুদ্রনীলের

| Edited By: জয়িতা চন্দ্র

Sep 03, 2025 | 5:52 PM

রবিবার ‘হুলি গান ইজ়ম’-এর শোয়ের পরই নেটপাড়া জুড়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও তাঁর গানের দলকে নিয়ে শোরগোল। বিষয় গানের লিরিক্স। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের গানের এই দল ইতিমধ্যেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে বিতর্কের সূত্রপাত গানের কথাকে কেন্দ্র করে। অনির্বাণ বরাবরই স্পষ্টভাষী। যার ফলে নানা সময় তাঁকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তোপের শিকার হতে হয়। ঠিক যেমন রবিবারের সন্ধ্যার পর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলার রাজনীতির ময়দানের ‘তিন ঘোষ’। এবার বিতর্কের বিষয় ‘সনাতন (হিন্দু) ধর্ম’। যে ক্লিপিং চোখে পড়তেই রে-রে করে উঠলেন অভিনেতা তথা বিজেপি কর্মী রুদ্রনীল ঘোষ।

মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন অনির্বাণ ঠিক কী বলেছিলেন?

“সনাতন এসে গেছে… আর সনাতনী? …সনাতন মানে আমি সনাতন ধর্মের কথা বলছি… আসেনি তো এখনো? …সনাতন ভারতে পৌঁছাতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে… সবাই এগিয়ে যায়… আমরা পিছিয়ে যাব!!”

এই অংশ শুনেই এবার মেজাজ হারালেন ‘চতুর্থ ঘোষ’। অর্থাৎ রুদ্রনীল ঘোষ। এর আগে যদিও তিন ঘোষকে নিয়ে ছড়া কেটে নজরে এসেছে অনির্বাণের দল। কুণাল ঘোষ, দিলীপ ঘোষ তো আছেনই, ছাড় পাননি শতরূপ ঘোষও। আর তাতেই গান-বিতর্ক মিলেমিশে একাকার। ফেসবুকেও তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল। যদিও বিষয়টা নিয়ে নানাজনের নানা মত। কেউ করছেন প্রশংসা, কেউ আবার তোপ দাগছেন গায়ককে।

প্রতিবাদে সরব ‘চতুর্থ ঘোষ’

সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বোমা ফাটালেন রুদ্রনীল। অনির্বাণকে বললেন ‘ক্ষমা চাইতে হবে’। সোশ্যাল মিডিয়ায় রুদ্রনীল ধরলেন কলম, ছড়া কাটতে যে তিনিও মাস্টার। তবে এবার আর কোনও মজা নয়, সরাসরি চোখ রাঙানি অনির্বাণকে। লিখলেন, “বন্ধুবর অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আপনার এই অসচেতন, জ্ঞানহীন বক্তব্যের। …ভাই, অণির্বান পৃথিবীর চুড়ান্ত মুর্খ ব্যাক্তিও জানেন সনাতন ধর্ম পৃথিবীর আদিতম ধর্ম বা জীবনচর্চা। তারপর বাকি ধর্ম গুলির জন্ম। আর আপনি বললেন, “সনাতন এসে গেছে?” “সনাতন ভারতে পৌঁছাতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে!” আপনি সজ্ঞানে বললেন এই কথা? অন্য কোনও ধর্ম সম্পর্কে এই ধরনের উক্তি করলে তাঁরা এতক্ষণে আপনাকে কোন স্থানে রাখতেন নিশ্চই জানেন!”

রুদ্রনীল মনে করালেন অনির্বাণ-ফেডারেশন বিবাদ

তবে এখানেই থামলেন না তিনি। রুদ্রনীল বেশ কিছু বিষয় ধরিয়েও দিলেন অনির্বাণকে। কী কী নিয়ে অনায়াসে কথা বলতে পারলেন অনির্বাণ? রুদ্রনীলের কথায়, “সবাই জানে, টলিউড মাফিয়ারা আপনার কাজ কেড়ে নিয়েছে, তাই গান গেয়ে পেটের ভাত জোগাড় করতে হচ্ছে। দূর্ভাগ্যজনক!! কিন্তু, যে “হুলি গানরা” আপনার পেটের ভাত কাড়ল তা নিয়ে বা RG KAR ডাক্তার হত্যা নিয়ে বা শিক্ষক পেটানো-শিক্ষা দূর্নীতি নিয়ে আপনার মুখে কুলুপ! অথচ অকারণ ছোট করছেন নিজের ধর্মকে? সনাতন ও সনাতনীকে? কাকে খুশী করতে?”

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, গত এক বছর ধরেই টলিপাড়া ‘সাইডলাইন’ বলে দাবি করেন অনির্বাণ। অর্থাৎ কথা এগিয়েও মিলছে না কাজ। একদিকে ফেডারেশনের সঙ্গে সংঘাতের জেরে কাজ হারাচ্ছেন তিনি। তবে নিজেই এই বিষয় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “একজন শিল্পীকে কখনই বসিয়ে দেওয়া যায় না। অভিনয় কেড়ে নেওয়া যায় না। মঞ্চ আছে, আমি কোনও রাজনীতি করি না, আমার দল আছে, তবে সেটা গানের।” এবার সেই গানের দল নিয়েই প্রশ্নের মুখে অনির্বাণ।

তিন ঘোষ ও হুলি-গান-ইজ়ম বিতর্ক

যদিও দুর্নীতি নিয়ে তিনি যে মুখ খোলেননি এমনটা নয়। ‘তিন ঘোষ’কে তোপ দাগতে গিয়ে বেশ কিছু প্রসঙ্গ টেনে এসেছিলেন অনির্বাণ। যদিও সেক্ষেত্রে কুণাল ঘোষ বিন্দুমাত্র রাগ করেননি। বরং তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যর নতুন ব্যান্ড ‘হুলি-গান-ইজম’-এর গানের অংশ। আমার মজা লেগেছে, ভাল লেগেছে। গানের ধরন, উপস্থাপনাও উপভোগ করলাম। একটু তির্যক? তাতে কী! কুণাল ঘোষ এসব মজা নিতে জানে। ভাল থেকো অনির্বাণ।”

অন্যদিকে শতরূপের প্রতিক্রিয়া ছিল, “নতুন একটা গানের ব্যান্ড যেভাবে সোশ্যিও পলিটিক্যাল স্যাটায়ার করল সেটা আমার খুব ভাল লেগেছে। আমরা সবসময় চাই আর্টিস্টরা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নিক। রাজনৈতিক মতামত থাক। আমার নাম নিয়েছে আমি তো কৃতজ্ঞ। তাতে যদি কোনও তির্যকতা থেকে থাকে আমরা মনে করি আমাদের সমালোচনা শিল্পের মাধ্যমে উঠে আসতেই পারে। শিল্প তো একটা আয়না।” যদিও দীলিপ ঘোষ চুপ।

‘ক্ষমা চাইতে হবে’– দাবি রুদ্রনীলের 

এবার আসরে আরও এক ঘোষ। ধর্ম নিয়ে এই স্যাটায়ার মানতে নারাজ রুদ্রনীল। তাই হুঁশিয়ারি দিয়ে স্পষ্টভাষায় বললেন, “ভাই অণির্বান, যদি সত্যই নিজের অজ্ঞানতা থেকে এই বক্তব্য রেখে থাকেন তাহলে জানান। দেখবেন সমস্ত সনাতনীরা দল-মত-ঝান্ডা ভুলে আপনাকে ক্ষমা করবেন ও ভবিষ্যতে এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করার অনুরোধ করবেন। আর যদি সজ্ঞানে থেকে এই ধরনের মন্তব্য করে থাকেন, তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিন। সনাতন ধর্ম আদি ও অনন্ত। আপনি আমি দুনিয়ায় থাকি বা না থাকি, সনাতন-সনাতনী ছিল আছে ও থাকবে। ভাল থাকবেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।”

নেটপাড়ায় কে কী বলছেন?

এই বিষয় এখনও অনির্বাণ মুখে কুলুপ আঁটলেও নেটদুনিয়ায় উঠছে অনির্বাণকে বয়কটের ডাক। কেউ লিখলেন, “এদের শিক্ষার একান্ত দরকার। অন্যান্য ধর্ম নিয়ে করুক, ওকে বুঝিয়ে দেবে ভাল করে, সনাতন ধর্ম নিয়ে এসব করা খুবই সহজ, বয়কট অনির্বাণ।” আবার কেউ লিখলেন, “শহীদ দিবসের মঞ্চে পিসির পাশে চেয়ার নেবার জন্য অনির্বাণ এইসব বলছে । ঠিক যেমনটা নচিকেতা করেছে।” আবার কেউ লিখলেন,”বাম ঘেঁষা আঁতেলদের এই একটা সমস্যা। নিজেদের চূড়ান্ত শিক্ষিত মনে করে। সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ভাল ভাবে জানতে মার্কস পড়ার আগে বেদ-বেদান্ত, উপনীষদ, রামায়ণ, মহাভারত, পড়ুন ভাই। টেক্সট পড়ে বুঝতে না পারলে, পণ্ডিত রা যে ব্যখ্যা দিয়েছেন সেগুলি পড়ুন ৷”