নৈহাটির ‘বড়মা’কে দর্শন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার পর কি প্রকারান্তরে ‘সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী’ মন্তব্য করে ফেললেন অভিনেত্রী শ্রুতি দাস? শ্রুতির সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টের কমেন্টস সেকশনে তাঁরই করা একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নেটিজ়েনদের একাংশের মধ্যে উঠেছে এই প্রশ্নই। যদিও TV9 বাংলার তরফে শ্রুতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, একতাই তাঁর কাছে একমাত্র ধর্ম। শুধু তাই-ই নয়, ধর্ম বা বর্ণ—কোনও ভেদাভেদেই বিশ্বাসী নন শ্রুতি। অভিনেত্রীর ভক্তদের এক বড় অংশও শ্রুতির সঙ্গেই সম্মতি প্রকাশ করেছেন। ধর্ম যাই-ই হোক না কেন, উৎসবের আমেজে একসঙ্গে থাকার মধ্যেই যে লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃত মনুষ্যত্বের স্বাদ, শ্রুতির মতো এমন বিশ্বাস তাঁদেরও। ঠিক কী ঘটেছে শ্রুতির ফেসবুক পোস্ট এবং কমেন্টস সেকশনের মন্তব্য়কে কেন্দ্র করে? খোঁজ নিল TV9 বাংলা।
নৈহাটির ‘বড়মা’—ভক্তদের বিশ্বাস, কাউকেই ফেরান না তিনি। মন দিয়ে যা চাওয়া হয়, তাই-ই নাকি উজাড় করে দেন ‘বড়মা’। ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে থেকে সময় একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে এই ‘বড়মা’র কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী শ্রুতি দাস। সঙ্গে ছিলেন স্বামী স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার। ‘বড়মা’কে মন ভরে দর্শন করে যখন শ্রুতি শিহরিত, ঠিক সেই সময়েই ঘটে গিয়েছে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা। ‘বড়মা’ দর্শনের ছবি শেয়ার করে শ্রুতি ফেসবুকে লিখেছিলেন, “ধর্ম যার যার, বড়মা সবার”। সেই পোস্টে প্রতিক্রিয়া হিসেবে একাধিক ফলোয়ারকে ‘হাহা রিঅ্যাক্ট’ (ফেসবুকে ব্য়বহৃত হওয়া এক ধরনের বিশেষ হাসির ইমোজি) করতে দেখা যায়। তা দেখেই অসন্তোষ প্রকাশ করে রাগে ফেটে পড়েন শ্রুতি। কমেন্টস সেকশনে প্রকাশ্যেই লেখেন, “Haha প্রদানকারীদের একবার দেখে এলে বুঝতে পারবেন সবটা।”
তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত। যেভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী বা ধর্মমতে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গকে ইঙ্গিত করে টলিউড অভিনেত্রী সমাজমাধ্যমের উন্মুক্ত পরিসরে মন্তব্য করে বসলেন, তা কতটা যুক্তিযুক্ত? কী বুঝতে পারা যাবে বলে তাঁর মন্তব্যে বোঝাতে চেয়েছেন শ্রুতি? কারাই বা এই ‘হাহা-প্রদানকারী’? শ্রুতির কাছে এই প্রশ্নই রেখেছিল TV9 Bangla। শ্রুতির সাফ জবাব, “সরি টু সে (এ কথা বলার জন্য দয়া করে ক্ষমা করবেন), ‘হাহা’ যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই মুসলিম বন্ধু। একটা কথাই বলতে চাই, ‘ধর্ম যার-যার উৎসব সবার’ এই কথাটা তো ঐক্য বোঝাতেই ব্যবহার হয়। সেটাকে সবার গ্রহণ করা উচিত। সেটা নিয়ে এভাবে হাসির কী আছে?” তাহলে কি নির্দিষ্ট করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্দেশেই ‘পাল্টা’ হিসেবে এমন মন্তব্য করে বসলেন শ্রুতি? ফোনের ওপারে অভিনেত্রীর কণ্ঠস্বর শোনায় দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, “ওঁরাও মসজিদ খুলে দিন না, আমিও যাব।”
এখানেই শেষ নয়, শ্রুতি জানান, তাঁর ওই ‘বড় মা সবার’ এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে এক ব্যক্তি তাঁকে সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন করেছেন, “যদি বলি কাবা ঘর অর্থাৎ ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান সব্বার, আপনি কি মেনে নেবেন? আপনি কি যাবেন?” শ্রুতির উত্তর, “কাবা ঘর কী, আমি তা জানি না। সেটা আমার অজ্ঞতা। কিন্তু যদি আমার কাবা ঘরে যাওয়ার সুযোগ থাকে বা আমি যদি সেই যোগ্যতা অর্জন করি, তবে নিশ্চয়ই যাব একবার।” এরপর শ্রুতির সংযোজন, “আমার খুব ইচ্ছে আছে যে, মক্কায় যাব। আমি ছোটবেলায় বসে-বসে কোরান পড়তাম। ওই ভাষা শেখার চেষ্টা করতাম। ওঁদের (মুসলমান সম্প্রদায়ের) বাড়ির ছেলেমেয়েরা আমার বাড়িতে বসে বড় হয়েছে। আমি ওঁদের বাড়ি গিয়েছি। আমি কখনওই এই বৈষম্য মানি না।” ভেদাভেদে বিশ্বাসী নন, এই বার্তাই তাঁর। ভেদাভেদ যাঁরা তৈরি করেন, পছন্দ নয় তাঁদেরও। তিনি যোগ করেন, “স্কুলে যখন আমার মুসলমান বন্ধুরা রোজা করত, ওরা তো থুতু গিলত না, আমিও মুখে থুতু জমাতাম অনুভব করার জন্য যে কতটা কষ্ট হচ্ছে ওদের। আমার বোরখা পরতে খুব ভাল লাগে। আমি বোরখা পরে সিনও করেছি, আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি এরকমই। একতাই আমার কাছে মূল। ধর্ম-বর্ণ কোনও ভেদাভেদেই বিশ্বাস করি না।”