বুম্বা সেদিন আমায় মারতে উঠেছিল শুটিং ফ্লোরে, অতীতের কোন ঘটনা সামনে আনলেন শুভাশিস?
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। সময়টা নয়ের দশকের শেষের দিক। প্রসেনজিতের সঙ্গে একের পর এক ছবিতে জুটি বেঁধে কমেডিতে ঝড় তুলছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তাঁদের জুটি সুপার হিট। সেই কারণেই প্রসেনজিৎ ও শুভাশিসের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে উঠেছিল। তাই সব পরিচালকই চান, প্রসেনজিতের ছবিতে শুভাশিস অভিনয় করুন।

দেখুন কাণ্ড! শুধু একবার না বলেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে, সেই না-এর কারণে যে এমনটা ঘটবে, তা আগে থেকে আন্দাজও করতে পারেননি টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। কিন্তু যখন ঘটল, তখন শুভাশিস একেবারে হতবাক! শেষমেশ প্রসেনজিৎ, এমনটা করলেন!
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। সময়টা নয়ের দশকের শেষের দিক। প্রসেনজিতের সঙ্গে একের পর এক ছবিতে জুটি বেঁধে কমেডিতে ঝড় তুলছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তাঁদের জুটি সুপার হিট। তবে শুধু সিনেপর্দায় নয়, বাস্তবেও প্রসেনজিৎ ও শুভাশিসের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে উঠেছিল। তাই সব পরিচালকই চাইতেন, প্রসেনজিতের ছবিতে শুভাশিস অভিনয় করুন। সেই বন্ধুত্বের খাতিরেই শোনা যায়, প্রসেনজিৎ নিজেই ডেকে শুভাশিসকে চরিত্র অফার করতেন। পরিচালকদের বলতেন, শুভাশিসের জন্য চরিত্র চিত্রনাট্যে রাখতে। আর প্রসেনজিতের বলা সেই চরিত্রে অভিনয় করতেই হত শুভাশিসকে। সে চরিত্র যেমনই হোক না কেন, মানা করার কোনও উপায় ছিল না। কারণ না বললেই যে গণ্ডগোল বাঁধবে, তা ভালই বুঝতে পেরেছিলেন শুভাশিস। পরে একবার বুঝেও ছিলেন। একটা ছোট্ট না, কী কাণ্ডটাই না ঘটাতে পারে। শুভাশিসের কথায়, সে কাণ্ড ছিল মারাত্মক।
কী ঘটেছিল প্রসেনজিৎ ও শুভাশিসের মধ্যে?
টেকনিশিয়ন স্টুডিওতে তখন একটা ছবির শুটিং করছিলেন শুভাশিস। সেই স্টুডিওর অন্য ফ্লোরেই ছিলেন প্রসেনজিৎ। হঠাৎ করে শুভাশিসের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের ওপারে বুম্বা (প্রসেনজিৎ)। ফোনেই শুভাশিসকে নির্দেশ দেন, টলিপাড়ার আরেকটি স্টুডিও এনটিওয়ানে গিয়ে এক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে নতুন ছবির চিত্রনাট্য শুনে আসতে। সঙ্গে প্রসেনজিৎ জানিয়ে দেন, তাঁর কথাতেই শুভাশিসের জন্য চরিত্রটা লিখেছিলেন সেই পরিচালক।
বুম্বার কথামতো পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন শুভাশিস। কিন্তু চিত্রনাট্য শোনার পর চরিত্রটা খুব একটা পছন্দ হয় না তাঁর। পরিচালককে সেটা আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দেন। তারপর সেকথা প্রসেনজিৎকে জানাতেই, প্রসেনজিৎ তেলে-বেগুণে জলে ওঠেন। রীতিমতো চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন, একেবারে রণং দেহী চেহারা! এই মারেন কী, সেই মারেন! শুভাশিসকে স্পষ্ট বলেন, করবি না মানে, তোর জন্য চরিত্রটা লিখিয়েছি, এখন আমার সম্মানের ব্যাপার আর তুই করবি না? এর আগে প্রসেনজিতের এমন রূপ দেখেননি শুভাশিস। বুঝতেই পারছিলেন না, পরিস্থিতি সামাল দেবেন কী করে। কিছুটা সময় পার হতেই, একটু শান্ত হন প্রসেনজিৎ। তারপর শুভাশিসকে বলেন, ”শোন এই ছবিতে তুই, আমি, রচনা আছি। নিজেদের ব্যাপার। আমরা সব ঠিক করে নেব। তুই শুধু হ্যাঁ কর. পরিচালককে বলে আয়, তুই ছবিটা করছিস।” এই ঘটনার পর থেকে আর কোনওদিনই বুম্বার অনুরোধে না করেননি শুভাশিস। প্রসেনজিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব যে কতটা অটুট, তা যেন বুঝিয়ে দেয় শুভাশিসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাই।
তথ্য- শর্মিলা শো হাউজ
