আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী… সেই দিক থেকে মনে করেছিলাম, মায়ের চরিত্র এসেছে যখন, নিশ্চয়ই পারব: তনুশ্রী ভট্টাচার্য
Rani Rashmoni: গত এক বছর ধরেই ভবতারিণী, রামকৃষ্ণকে চরিত্রে হিসেবে দেখছেন দর্শক। ভবতারিণী চরিত্রে অভিনয় করছেন তনুশ্রী ভট্টাচার্য। কিন্তু মেকআপের কারণে তিনি বাস্তবে কেমন, তা দর্শক জানেন না। আর কী-কী করেন তনুশ্রী?
‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ ধারাবাহিক গল্পের দিক থেকে এক বাঁকের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ রাসমণির গল্প প্রায় শেষ। এ বার শ্রীরামকৃষ্ণের যাত্রাপথ দেখবেন দর্শক। গত এক বছর ধরেই ভবতারিণী, রামকৃষ্ণকে চরিত্রে হিসেবে দেখছেন দর্শক। ভবতারিণী চরিত্রে অভিনয় করছেন তনুশ্রী ভট্টাচার্য।
কিন্তু মেকআপের কারণে তিনি বাস্তবে কেমন, তা দর্শক জানেন না। আর কী-কী করেন তনুশ্রী? ব্যক্তিগত এবং পেশাদার আলাপচারিতায় TV9 বাংলার মুখোমুখি তনুশ্রী।
আপনার জন্ম এবং বড় হওয়া কি কলকাতায়?
হ্যাঁ। দমদম ক্যান্টনমেন্টে আমার বাবা-মা থাকেন। আমার নিজের কোনও ভাই-বোন নেই। ২০১৯-এর ১৩ মার্চ পরিচালক শমীক বসুকে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে টালিগঞ্জে থাকি। এই বাড়িতে আমার স্বামী এবং শ্বশুরমশাই রয়েছেন। শাশুড়ি মা মারা গিয়েছেন। আর আমার দুই ননদ রয়েছেন, তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
আপনার পড়াশোনা কোন বিষয় নিয়ে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে মাস্টার্স করেছি।
অভিনয়ের কেরিয়ার কবে থেকে শুরু?
২০১৩-র ১৫ জানুয়ারি, ফার্স্ট শট দিয়েছিলাম। ‘সখী’ ধারাবাহিকে। ছোট চরিত্র ছিল। কিন্তু ওটাই আমার শুরু। তারপর থেকে ‘বয়েই গেল’, ‘রাঙা মাথায় চিরুনি’, ‘ত্রিনয়নী’, ‘জয়ী’, ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এ কাজ করেছি।
‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ ছাড়া এখন আর কোনও কাজ করছেন কি?
হ্যাঁ, আর একটা ধারাবাহিক চলছে আমার। ‘কী করে বলব তোমায়’। আমার চরিত্রের নাম ‘সোহিনী ম্যাম’।
এই প্রথম কোনও ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, প্রথম দিকে ভয় ছিল?
২০২০-র অগস্ট, সেপ্টেম্বর থেকে ভবতারিণী চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছি। প্রায় এক বছর হতে চলল। তার আগে রাসমণি দেখতাম। এই চরিত্রের সাজানো বা লুকটা সম্পর্কে ধারণা ছিল। আমি কতটা করতে পারব, সেটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল, ভয় ছিল। আমি যখন কয়েকজনকে বলেছিলাম, আমি এই অফার পেয়েছি। তারাও প্রশ্ন করেছিল: পারবি তো করতে?
সেই ভয় কাটিয়ে উঠলেন কীভাবে?
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। সমস্ত ঠাকুর মানি। সেই দিক থেকে মনে করেছিলাম, মায়ের চরিত্র এসেছে যখন, নিশ্চয়ই পারব। কোনও কাজ করার আগে ঠাকুরের নাম করি। এটাতেও সেভাবেই এগিয়ে গিয়েছিলাম।
আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী, আবার ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, এমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল, যার ব্যখ্যা যুক্তিতে হয় না?
প্রতিদিন রেডি হতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে আমার। প্রথম দিন লুক সেটের সময় যখন মেক-আপ করা শুরু হয়, তখনও কিছু অনুভব করতে পারিনি। কিন্তু অদ্ভুভাবে যখন আমাকে জবা ফুলের মালাটা পরানো হয়—আসল মালা, পদ্মফুল, বেলপাতা—গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তো, সেই বিশ্বাস থেকেই বোধহয় চরিত্রে ঢুকতে পেরেছি (হাসি)। হয়তো মা নিজেই সাহায্য করেছেন। প্রচুর আশীর্বাদ পেয়েছি। আমি ব্লেসড।
পরিবার-পরিজন এই চরিত্রে অভিনয় নিয়ে কী বলেন?
আমার শ্বশুরমশাই খুব এক্সাইডেট। খুশি হন। উনিও আধ্যাত্মিক মানুষ। যখন শুরু হয়েছিল, তখন উনি সকলকে জানিয়েছিলেন, আমার বউমা অভিনয় করছে, দেখো সবাই। আমার মায়ের মধ্যে ওই বহিঃপ্রকাশটা নেই। সব সময় খুব ভাল বলে না। কোনও সিন দেখে ভাল লাগলে ফোন করে বলে। আর বর টেকনিক্যাল ভুল ধরে (হাসি)। তবে মোটের উপর এই চরিত্রটা থেকে প্রশংসাই পেয়েছি।
ভবতারিণীকে বাস্তবে কেমন দেখতে, তা কিন্তু দর্শক জানেন না। এই চরিত্রের এটা অন্য দিক হিসেবে মনে হয়েছে কখনও?
নিশ্চয়ই। যেহেতু মেক-আপ একেবারে কালী ঠাকুরের, তাই তনুশ্রীকে আলাদা করে কেউ চেনেন না। এখানে আমার বেশিরভাগ সময়ই রাজবেশ থাকে। তবে এর মধ্যেই ১৫টা রূপ হয়ে গিয়েছে। মা কালীর শ্যামলা গায়ের রং রেখেই মেক-আপ করা হয়। কিন্তু বনদুর্গা, ধূমাবতী, গ্রামের বউ, শাঁখারি বউ-এর লুকে এই চরিত্রকে দেখা গিয়েছে।
অনস্ক্রিনে যাঁর সঙ্গে সবথেকে বেশি সিন আপনার, অর্থাৎ রামকৃষ্ণ, সেই অভিনেতা সৌরভ সাহার সঙ্গে বাস্তবে কেমন সম্পর্ক?
সৌরভের সঙ্গে খুব ভাল বন্ধুত্ব আমার। ও খুব হেল্পফুল। প্রথম দিন সেটে গিয়েছিলাম যখন, কাউকে চিনতাম না। ও এসে আমার সঙ্গে প্রথম কথা বলে, ‘আমি সৌরভ, রামকৃষ্ণ করছি’। তখন আমি কথা বলেছিলাম। প্রত্যেকটা বিষয়ে হেল্প করে ও। ওর সঙ্গে সিন নিয়ে আলোচনাও করি।
পর্দার রাসমণি অর্থাৎ দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে তনুশ্রী (বাঁদিকে), পর্দার শ্রীরামকৃষ্ণ অর্থাৎ সৌরভের সঙ্গে তনুশ্রী (ডানদিকে)।
আর যাঁর নামে এই ধারাবাহিক রাসমণি, অর্থাৎ দিতিপ্রিয়া রায় কি আপনার বন্ধু?
দিতিপ্রিয়ার সঙ্গেও খুব ভাল সম্পর্ক। ওর বড় হয়ে ওঠা এই ধারাবাহিকেই। চার বছর ধরে এই প্রজেক্টের সঙ্গে রয়েছে ও। ওর গল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের সকলেরই খুব মন খারাপ। ওর মায়ের সঙ্গেও খুব ভাল সম্পর্ক আমার।
কেরিয়ারের এই কয়েক বছরে কোনও আক্ষেপ তৈরি হয়েছে?
কেরিয়ারের না পাওয়া রয়েছে। মুখ্য চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলাম, লুক সেটও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ ক্লিক করেনি। কেন করেনি, আমি জানি না। আমার ভাগ্য, আমি এটা মনে করি।
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
আরও পড়ুন, রিল নয়, রিয়েল লাইফেই আপাতত হাউজ হাজব্যান্ড রাহুল মজুমদার