স্নেহা সেনগুপ্ত
হরিহর আত্মাদের সমস্যা কি জানেন? এক আত্মা হারিয়ে গেলে, অন্য আত্মা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা ঘটেছে অভিনেত্রী প্রত্যুষা পালের ক্ষেত্রে। বাংলা সিরিয়ালের অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ তিনি। একসময় গরফায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন তাঁর প্রাণের সখী অভিনেত্রী পল্লবী দে’র সঙ্গে। দুই সখীতে ভালই চলছিল জীবন। সুন্দর সংসার সাজিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। তারপর পল্লবীর জীবনে প্রেম আসে। প্রেমিকের সঙ্গে গরফারই অন্য একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। তারপরই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ১৫ মে, ২০২২। গরফার সেই ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ। সন্দেহের আঙুল ওঠে প্রেমিকের দিকে। সেই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও অভিনেত্রীর বাবা-মা, পরিবারের অন্য সদস্য এবং বিশেষ করে প্রত্যুষা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আজ পল্লবীর ২৬তম জন্মদিন। গত বছর তাঁর ২৫তম জন্মদিনেই শেষবার বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হয় প্রত্যুষার। TV9 বাংলাকে তিনি বলেই ফেলেছেন, “এক বছর হতে চলল পল্লবী নেই। কিন্তু আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না ওর মতো প্রাণোচ্ছ্বল মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে।”
পল্লবীর জন্মদিনে সকাল থেকেই মনমরা হয়ে বসে প্রত্যুষা। গায়ে জ্বর। শরীরটা ভাল নেই তেমন। প্রত্যুষার কথা উঠতেই গলাটা আরও ভারী হয়ে যায় অভিনেত্রীর। বলেন, “হিসেব মতো আগের বছর আজকের দিনেই পল্লবীর জন্মদিনে ওর সঙ্গে আমার শেষবার দেখা হয়েছিল। ওর ২৫তম জন্মদিন ছিল। বেঁচে থাকলে আজ ওর ২৬তম জন্মদিনটা পালন করতাম সবাই মিলে। ওর জন্মদিন সবসময়ই আমার কাছে স্পেশ্য়াল ছিল। একমাস আগে থেকে প্ল্যান করতাম কীভাবে পালন করব।” প্রত্যুষা আরও বলেন, “এটা ভাবতেই অবাক লাগে, একটা বছরের মধ্য়ে সময়টা এতটা ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু আমি জানি, নিশ্চয়ই কোনও না-কোনওদিন ওর সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে। আমি মনে করি, আমাদের এই স্ট্রং কানেকশন এত সহজে কেটে যাওয়ার নয়। আমি ঈশ্বরের কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করি, ওর মা, অর্থাৎ কাকিমা যেন নিজেকে শক্ত রাখতে পারেন। কাকিমার জন্য আজকের দিনটা সবচেয়ে কঠিন।”
গত বছর জন্মদিনে দক্ষিণ কলকাতার একটি বাংলো বাড়িতে জন্মদিনের পার্টি দিয়েছিলেন পল্লবী। উপস্থিত ছিলেন প্রত্যুষা। স্মৃতির অ্যালবামে ফাটল ধরেছে এক বছরের মধ্যে। প্রত্যুষার তাই ইচ্ছা, তিনি পল্লবীর মায়ের সঙ্গে আজ দেখা করতে যাবেন। বলেছেন, “আমার ইচ্ছা, আজ কাকিমার সঙ্গে দেখা করে আসি। ওরা তো একেবারেই ভাল নেই। গত এক বছরে কাকু-কাকিমা কেউই সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারেননি।”
কথা বলতে-বলতে কেঁদে ফেলেন প্রত্যুষা। বলেছেন, “আমি কাউকে এটা বলে বোঝাতে পারব না। প্রত্যেকদিন এই সত্যিটাকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকি, যে পল্লবী আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। রোজই ওঁর কথা হয়। আগের বছর জন্মদিনের পার্টিতে আমাকে বারবার ওঁর সঙ্গে রাতে থাকতে বলেছিল পল্লবী। কিন্তু আমি থাকতে পারিনি। এখন ভাবলে মনে হয়, কেন সেদিন চলে এসেছিলাম। আমরা কেউই জানি না সেদিন কী ঘটেছিল। তবে এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না, পল্লবীর মতো একটা মেয়ে এভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারে।”