TV9 Bangla Exclusive: অনেকগুলো বাচ্চার সঙ্গে দেখাও করেছি, যাঁদের নাম উজান রাখা হয়েছিল: ঋষি ‘উজান’ কৌশিক
Rishi Kaushik: ঋষি কৌশিকের সঙ্গে TV9 বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকার। উঠে এল অনেক অজানা কথা, কিছু বিস্ফোরকও।
স্নেহা সেনগুপ্ত
অসমীয়া মানুষ। কিন্তু চিরকালই বাংলা সিরিয়ালে দাপিয়ে বেড়ালেন। এক সময় তিনি ছিলেন ছোট পর্দার ডঃ উজান চ্যাটার্জি। সিরিয়ালের নাম ‘এখানে আকাশ নীল’। তাঁর বিশ্বাসযোগ্য অভিনয়ের কারণেই অনেক ‘রিয়েল লাইফ’ বাচ্চারও নামকরণ করা হয়েছিল উজান। সেই ঋষি কৌশিকের সঙ্গে TV9 বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকার। উঠে এল অনেক অজানা কথা, কিছু বিস্ফোরকও।
প্রশ্ন: ‘সোনা রোদের গান’ করার পর তো সে রকমভাবে আর কিছু করছেন না আপনি…
ঋষি: না, করছি না এই মুহূর্তে কিছু।
প্রশ্ন: এটা কতদিনের বিরতি?
ঋষি: এ রকমভাবে তো আর বিরতি হয় না। গত মাসেই শেষ হয়েছে সিরিয়ালটা। কিছুদিনের জন্য অফ নিয়েছি।
প্রশ্ন: এটাই জানার ছিল, আপনার অফ মানে তো অ্য়াডভেঞ্চারের মধ্যে ঢুকে যাওয়া…
ঋষি: সে রকম প্ল্যান হয়নি কিছু। কোথায় যাব, সে রকম এখনও কিছু ভাবিনি।
প্রশ্ন: অনেক সিরিয়ালেই আপনাকে মুখ্য চরিত্রে দেখা যায়। লিড চরিত্র যাকে বলে। একদা লিডরা এখন প্রচুর সিনেমা, সিরিজ়ে অভিনয় করছেন। আপনাকে কি সে রকম কোথাও আমরা দেখতে পাব?
ঋষি: সেই সুযোগেরই অপেক্ষায় আছি আমি। ভাল কিছুর অপেক্ষায়…
প্রশ্ন: সিরিয়াল আর চাইছেন না নাকি?
ঋষি: না, না তা নয় একেবারেই। আমি সবই করতে চাই। এমনটা কিন্তু একেবারেই নয় যে, সিনেমা-সিরিজ় করলে সিরিয়াল করতে চাইব না। আমি নিজেকে কোনও কিছুতেই আটকে রাখি না।
প্রশ্ন: এই প্রশ্নটা আপনাকে করার কারণ, আপনি সিরিয়ালের খুব পরিচিত একজন মুখ…
ঋষি: আসলে একজন অভিনেতার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব চাওয়া অনুযায়ী কিন্তু সবকিছু হয় না। তাঁকে মনের মতো চরিত্র পেতেও হয়। আমি সাধারণত সিরিয়ালের অফারই বেশি পেয়ে এসেছি।
প্রশ্ন: স্টার জলসায় অভিনীত আপনার সিরিয়ালগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই তুলনায় সান কিংবা কালার্সের সিরিয়াল অল্প জনপ্রিয়তা পেয়েছে…
ঋষি: হ্যাঁ, তার কারণ সান কিংবা কালার্সের সিরিয়ালও অল্প কিছুদিনই চলে। তাঁদের চ্যানেলের রিচ (এক্ষেত্রে দর্শকের কাছে পৌঁছনো)-ও কম।
প্রশ্ন: আপনি স্টার কিংবা জ়িতে কেন কাজ করছেন না?
ঋষি: ভাল কাজের অফার পেতে হবে তো, তাই না। সেইটাই তো বললাম, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সব সময় কাজ আসে না। বিশেষ করে অভিনেতাদের।
প্রশ্ন: এটা নিয়ে আক্ষেপ হয় কি?
ঋষি: আমার কোনও কিছুতেই আক্ষেপ হয় না। কোনওটাই আমি জেনেশুনে পাইনি। কোনওটাতেই তো আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন: আপনি তো সিনেমায় ভিলেনও হয়েছেন একবার। রিঙ্গোর ‘ক্রান্তি’ ছবিতে। দেবা ছিল চরিত্রটার নাম, বেশ সাড়া ফেলেছিল। আর কি ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করবেন?
ঋষি: ‘ক্রান্তি’তে যখন আমি অভিনয় করেছিলাম, পরিচালক ছিলেন রিঙ্গো। তখন সবে আমার কেরিয়ার শুরু হয়েছে। আমাকে তিনি (রিঙ্গো) বলেছিলেন, ‘দ্যাখ, টিপিক্য়াল ভিলেন যে রকম হয়, আমি তোকে সেভাবে ট্রিট করব না।’ ভিলেন হওয়া সত্ত্বেও আমার অ্য়াকশন সিন ছিল না সেই ছবিতে। খুব ভাল ট্রিটমেন্ট ছিল। (প্রতিবেদকের উদ্দেশে) সেই জন্যই আপনার মনে আছে। বাজার চলতি ভিলেন হলে কিন্তু আপনি এ রকমভাবে মনেও রাখতেন না। আমি লাকি ছিলাম যে, ‘ক্রান্তি’র মতো একটা ছবিতে আমি ভিলেন ছিলাম এবং চরিত্রটা কেন ‘খল’ সেটা জাস্টিফাই করা হয়েছিল। কিন্তু শুরুতে আমি ভিলেন চরিত্রটা করতে চাইনি…
প্রশ্ন: তা-ই… চাননি?
ঋষি: হ্যাঁ, কারণ আমরা ইমেজ বিক্রি করি। এখন অনেকেই বলেন, ভাল রোল, ভাল কনটেন্ট। আমি মনে করি এ সব কিছুই না। যতগুলো সুপারস্টার হয়, তাঁরা একটা ইমেজ ধরে সুপারস্টার হয়। তাই আমি ইমেজকে কেন্দ্র করে ভয়ানক সচেতন।
প্রশ্ন: আপনাকে কিন্তু ডাক্তার এবং পুলিশের চরিত্রে দারুণ মানায়…
ঋষি: ওটা ক্লিক করে গিয়েছে।
প্রশ্ন: অপরাজিতা ঘোষ দাসের সঙ্গেও আপনার দারুণ কেমিস্ট্রি…
ঋষি: আমি তাঁর সঙ্গে তিনটে সিরিয়াল করেছি। প্রথমটা তাঁর সঙ্গে। ‘এখানে আকাশ নীল’ও তাঁর সঙ্গে। ‘কুসুমদোলা’তেও তিনি ছিলেন, যদিও সেখানে তিনি আমার নায়িকা ছিলেন না।
প্রশ্ন: ‘এখানে আকাশ নীল’-এ আপনার চরিত্রের নাম ছিল উজান। অনেক বাবা-মা কিন্তু পর্দার উজানকে দেখে তাঁদের সন্তানের সেই নামকরণ করেছিলেন পরে…
ঋষি: হ্যাঁ, আমি জানি। আমি সে রকম অনেকগুলো বাচ্চার সঙ্গে দেখাও করেছি, যাঁদের নাম উজান রাখা হয়েছিল ওই চরিত্রটা করার পর। এটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: দর্শকের একাংশ আপনাকে ডাক্তার, পুলিশ কিংবা উকিলের চরিত্রেই দেখতে চান, জানেন তো?
ঋষি: ওই যে বললাম, সেটাই কিন্তু ইমেজ বিল্ডিং। কিছু জিনিস নির্দিষ্ট অভিনেতার জন্যই তৈরি হয়। ভিলেনও আমি করতে চাই। হিন্দি সিনেমার ভিলেন হলেও করব। কারণ, ওখানে ভিলেনের চরিত্রগুলো খুব সুন্দরভাবে ট্রিট করা হয়। কেন ভিলেন, সেই মাইন্ডসেট দেখানো হয়।
প্রশ্ন: আপনি চুজ়ি?
ঋষি: একটু তো বটেই। বর্তমানে ঠিক জিনিস চুজ় না করলে, ভবিষ্যতের কাজে সেটার প্রভাব পড়তে পারে।
প্রশ্ন: মাঝে একটু ওজন বেড়েছিল আপনার… বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন?
ঋষি: না, তেমনটা আমার চোখে পড়েনি। আমাকে তো কেউই বলেনি সে কথা। তবে হ্যাঁ, ওজন বাড়া নিয়ে মানুষ সতর্ক করেছেন। সেটাকে আমি বডি-শেমিংয়ের পর্যায় ফেলি না। তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে পারি। চাইলেই সেটা করা যায় বলে মনেও করি। আমাকে কেউ বডি শেম করলে আমার কিচ্ছু যায়-আসেও না। কারণ, অলরেডি আমি আমার ভাল ফিজ়িক দেখিয়ে দিয়েছি পর্দায়।
প্রশ্ন: আপনার ভাল নাম কি কামাখ্যা কিঙ্কর কৌশিক?
ঋষি: ইয়েস, ওটাই আমার ভাল নাম।
প্রশ্ন: আপনি তো অসমীয়া?
ঋষি: ইয়েস, আমি অ্যাসামিজ় বাই বার্থ অ্যান্ড ডেথ!
প্রশ্ন: অসমীয়া ছবিতে অভিনয় করেছিলেন?
ঋষি: বাংলায় সিরিয়াল করার আগে আমার প্রথম কাজ অসমীয়াতেই। ছবিটার নাম ছিল ‘রং’।
প্রশ্ন: আর করলেন না কেন? এখন তো আঞ্চলিক ছবি নিয়ে খুব আলোচনা চারিদিকে…
ঋষি: আমার সঙ্গে সেই কানেকশন আসলে নেই আর। ‘রং’ করার পরের বছর একটা অফার এসেছিল। কিন্তু কলকাতায় ছিলাম বলে সময় নিয়ে যাওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: ২০১৯ সালে বিজেপিতে জয়েন করেছিলেন বলে কি কাজ পেতে অসুবিধা হয়েছিল আপনার?
ঋষি: এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, হয়তো হয়েছে। পোলারাইজ়েশন তো আছেই। হয়তো কেউ ডাকতে চেয়েও ডাকতে পারেননি সেই কারণে।
প্রশ্ন: কেরিয়ার ফেরাতে দল বদলালেন না কেন?
ঋষি: আসলে আমার মাইন্ড-সেট সেটা নয়। আমি যে কাজ করব বলে বাড়ি থেকে বেরোই, সেটা করেই ফিরি। তাই বদলাইনি। আর আমি সক্রিয় রাজনীতি করব বলে বিজেপিতে যুক্ত হইনি। আমাকে ওঁরা বলেছিলেন, যখন সাপোর্টই করি, আমি যেন জয়েন করি। তাই অন্য অনেক মানুষকে মোটিভেট করতে জয়েন করেছিলাম। পরিচিত মুখেরা তো তাই-ই করেন।
প্রশ্ন: রাজনীতির কারণে কাজ কমে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ…
ঋষি: না। নেই। কারণ আমি যেটাতে বিশ্বাস করি, সেটাতেই জয়েন করেছি।
অলংকরণ: শুভ্রনীল দে