‘বুদ্ধবাবু না থাকলে অনেক বাংলা ছবিই তৈরি হত না’, ঋণ স্বীকার গৌতমের

Gautam Ghosh on Buddhadeb Bhattacharya: প্রয়াণ ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। ৮০ বছর বয়সে সিওপিডিতে আক্রান্ত বুদ্ধদেব মারা গেলেন তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই। ৮ অগস্ট ২০২৪, সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে শেষবার নিশ্বাস নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্মৃতিতে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরিচালক গৌতম ঘোষ।

'বুদ্ধবাবু না থাকলে অনেক বাংলা ছবিই তৈরি হত না', ঋণ স্বীকার গৌতমের
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মৃতিতে কলম ধরলেন গৌতম ঘোষ...
Follow Us:
| Updated on: Aug 09, 2024 | 7:50 AM

বন্ধু ছিলেন তাঁরা। একজন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অন্যজন বিখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষ। বুদ্ধদেবের প্রয়াণে স্মৃতিমালা সাজিয়ে টিভি নাইন বাংলার জন্য কলম ধরলেন গৌতম। লেখনীতে প্রিয় বন্ধুর প্রতি স্বীকার করলেন ঋণও…

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চলে গেলেন। আসলে একজন মানুষ চলে গেলে তাঁর নিজের স্মৃতি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকেন আরও অনেক মানুষের স্মৃতিতে। এভাবেই একটা স্মৃতিমালা তৈরি হয়। কোনও মানুষ চলে গেলে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। যে সব কথা দৈনন্দিন জীবনে আমাদের মনে পড়ে না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা, মননশীল মানুষ। ৭০ দশক থেকে আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও সখ্যতা। ফিল্মমেকার হিসেবে একটা কথা বলতে পারি–বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্যোগেই সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, রাজেন তরফদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এবং আমি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছবি তৈরি করতে পেরেছিলাম। তিনি না থাকলে হত না অনেককিছুই। তাই এই লেখার মাধ্যমে তাঁর প্রতি ঋণী স্বীকার করছি।

তিনি তখন সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী। আমি ছবি তৈরি করছিলাম–‘পদ্মা নদীর মাঝি’। তাতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন বুদ্ধবাবু। আমাকে বলেছিলেন, “আপনাকে এই ছবি তৈরি করতেই হবে। তার জন্য যা-যা করার আমরা করব।” কপি রাইটের সমস্যা থেকে শুরু করে কত কী যে মিটিয়েছিলেন! ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হল ছবিটা। প্রতি মুহূর্তে ছবিটার আপডেট নিতেন বুদ্ধবাবু। উত্তেজিত ছিলেন ছবি তৈরির কাজটা নিয়ে। পদ্মা নদী ছাড়া ছবির শুটিং সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থাও তিনি করে দিয়েছিলেন। শেষমেশ ছবিটা তৈরি হয়। দারুণ সাড়া ফেলে দেয়। ব্যবসায়িক সাফল্যও পায়। অনেকগুলো জাতীয় পুরস্কার পায়। পায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিও। তিনি গর্বিত হয়েছিলেন। শিশুর মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। আজও বুদ্ধবাবুর সেই হাসি মাখা মুখটা মনে পড়ে আমার।

সামনেই কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। নন্দনের সঙ্গে আমার যোগ তো আজকের নয়। এই নন্দন ছিল বুদ্ধবাবুর প্রাণ। পশ্চিমবঙ্গে যখন প্রথম চলচ্চিত্র সোসাইটি তৈরি হয়, তিনি আমাকে ফাউন্ডার চেয়ারম্যান করেছিলেন। ফলে এখন এই লেখা লিখতে বসে অনেক কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। খুব নস্ট্যালজিক লাগছে। প্রায় হাতে ধরেই নন্দন তৈরি করেছিলাম আমরা। সেটা বুদ্ধবাবুর উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল। তাঁর মনে নন্দন নিয়ে অসম্ভব দুর্বলতা কাজ করত। মানিকদার বাড়িতে চলে গিয়ে নন্দনের লোগো তৈরি করিয়েছিলেন। আমাদের একটি ল্যাবরেটরির দরকার ছিল খুব। সেটিও তৈরি হয়েছিল বুদ্ধবাবুর উদ্যোগেই। যদিও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখন।

এই সব প্রজেক্টে কাজ করার সুবাদে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মতের অমিল হত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কাজগুলো ভাল মতো করতে পেরেছিলাম।

কিছুদিন আগেই একটা কাকতালীয় বিষয় ঘটেছে। একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি আমি। তার জন্য জীবনানন্দ দাশের লেখা পড়ছি। জীবনানন্দ জন্ম শতবার্ষিকী সংখ্যায় বুদ্ধবাবুর একটি অসাধারণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। একদিকে আবেগ, অন্যদিকে যুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন সেই প্রবন্ধে। কী অসামান্য লেখা! তিনদিন আগেই ওটা পড়েছিলাম আমি। আর আজ দেখুন, সেই প্রবন্ধকারকে আমরা চিরতরে হারালাম…