
লোফার, আসল-নকল, রাখী-পূর্ণিমা, শ্রীমান ভূতনাথ— তাঁর ঝুলিতে একের পর এক হিট সিনেমা। শুধু অভিনেতা নন, তাঁর মা ছিলেন বিখ্য়াত নায়িকা। বাবা ছিলেন সফল প্রযোজক। রঞ্জিত মল্লিক থেকে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় বহু অভিনেতার সঙ্গে ক্রিন ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে বড় পর্দার সঙ্গে তাঁর অনেক দিন হল কোনও সম্পর্ক নেই। বুঝতে পারছেন কোন অভিনেতার কথা বলা হচ্ছে? তিনি হলেন অভিনেতা লোকেশ ঘোষ। ৯০ দশকে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন। তার পরেও এখন আর তাঁকে দেখাই যায় না স্টুডিয়োপাড়ায়। তাঁকে প্রথম এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ দিয়েছিলেন পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। সেই ছবির নাম ছিল ‘ মুখ্যমন্ত্রী’। যে ছবিতে প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল প্রসেনজিতের। এই একটা সুযোগই বদলে দিয়েছিল অভিনেতার ভাগ্য। তবে অভিনয় জীবন শুরুর আগে বহু বছর লরির দালালি করেছিলেন লোকেশ। তবে নায়কের অতীতও যে খুব একটা শান্তির ছিল তেমনটা নয়। খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল তাঁর ছোটবেলাও।
দার্জিলিংয়ের সেন্ট পলস স্কুলে তাঁর বেড়ে ওঠা। তার পর কলকাতার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা ছিল মনে। বাবাকে সটান বলে দিয়েছিলেন, তাঁর কোনও সাহায্যই নেবেন না। যা করবেন নিজের দমে। আত্মাভিমানী বাবা ছেলের এই ‘ঔদ্ধত্য’ মেনে নিতে পারেননি। লোকেশ বলেছেন, “আমার বাবা একটা সময় পরিচালক-প্রযোজকদের জনে-জনে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেকে কাজ দেবে না’। ফলে চেনা-পরিচিতি থাকলেও, ইন্ডাস্ট্রির কোনও ‘কাকু-জেঠু’ কাজ দেয়নি লোকেশকে। একমাত্র অঞ্জন চৌধুরী ছিলেন ব্যতিক্রম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের চিকেন পক্স হওয়ার কারণে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ ছবিতে অভিনয়ের সুবর্ণ সুযোগ করে দেন লোকেশকে। তারপর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় অভিনেতার। সেই সময়ই অঞ্জন চৌধুরীর ‘নাচ নাগিনী নাচ’ ছবিতেও অভিনয় করার কথা ছিল লোকেশের।
সময়ের সঙ্গে সিনেমা তৈরির ধরন বদলেছে। গল্প বলার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বাংলায় বানিজ্যিক সিনেমাও অন্য ভাবে তৈরি হচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্সের পরিমাণ বেড়েছে আর সিঙ্গল স্ক্রিনের পরিমাণ কমেছে। ফলে অভিনেতার বাড়বাড়ন্তে অনেকটাই ধামাচাপা পড়েছে। তাও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেই প্রযোজনা করছেন নিজের ছবির। কোটিপতি বাড়ির ছেলে। বাবার বিপুল ব্যবসা। অনেক টাকা। তাঁর কানাকড়িও নাকি পাননি লোকেশ, তেমনটাই দাবি তাঁর। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে অভিনেতা বলেন, “আমার বাবার উপার্জিত এক পয়সাও আমি পাইনি। ছল-কৌশল করে আমার দিদি সবটা নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। আমাকে নিজের লড়াইটা নিজেকেই লড়তে হয়েছে কঠিনভাবে।”