বিহঙ্গী বিশ্বাস
উইকিপিডিয়া বলছে ৩৫ টা বসন্ত পার করলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে নানা আলোচনা, তাঁর বৈবাহিক জীবন, সম্পর্কে ওঠাপড়া, ইত্যাদি নিয়ে অবিরাম চলতে থাকে কাঁটাছেড়া। ইন্ডাস্ট্রিতে চলে নানা গসিপও। নীতিপুলিশির সংখ্যাও অগুণতি। হাতে গোনা বন্ধু তাঁর। আর এই বন্ধু তালিকায় রয়েছেন টলিপাড়ার আর এক অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরাও। শ্রাবন্তীর জন্মদিনে টিভিনাইন বাংলায় তাঁর খোলা চিঠি। যে চিঠির প্রতি শব্দে জড়িয়ে রয়েছে নিখাদ বন্ধুত্ব, পাশে থাকার বার্তা…
অঙ্কুশের বয়ানে….
শ্রাবন্তীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা প্রি-প্রোডাকশনে। অসম্ভব মিষ্টি দেখতে, হাসি খুশি স্বভাব। আমি তখনও হিরোর ট্যাগ জোটাতে পারিনি। অথচ ও ছোট থেকেই অভিনয় করে চলেছে। নামী হিরোইন। চাইলেই সেদিন আমার সঙ্গে হিরোইনসুলভ ট্যানট্রাম দেখাতেই পারত। কিন্তু না, শ্রাবন্তী বরাবরই ভীষণ মাটির মানুষ। একগাল হাসি, বাচ্চাদের মতো গলার স্বর নকল– মন জুড়ে জটিলতা নেই বললেই চলে। ইন্ডাস্ট্রিতে খোঁজ নিলে জানবেন শ্রাবন্তীকে সর্বস্তরের মানুষ ভীষণ পছন্দ করেন। তার কারণ ওর ব্যবহার। টেকনিশিয়ানদের ডেকেও মিষ্টি করে কথা বলা… স্টার ট্যান্ট্রম কী জিনিস তা ও দেখায়নি কোনওদিন।
২০১৩ সাল আমার জীবনে খুব উল্লেখযোগ্য। রাজদার (রাজ চক্রবর্তী) ‘কানামাছি’তে আমার সঙ্গে অভিনয় করে শ্রাবন্তী। ওই ছবিই অভিনেতার অঙ্কুশের কাছে মোড় ঘোরানো। কমার্শিয়াল হিরোরাও যে অভিনয় করতে পারে তা প্রমাণ করার সুযোগ আমায় ওই ছবিই করে দেয়। আর আমার এই নতুন পরিচয়ের অন্যতম সাক্ষী ছিল শ্রাবন্তী। এর পর প্রায় ৯ বছর কেটে গিয়েছে। তবে আমার আর শ্রাবন্তীর আর একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। কেন, জানি না। তবে তার মানে এই নয় ও ওর জগতে আর আমি আমার। যোগাযোগটা আজও ভীষণ ভাবেই রয়ে গিয়েছে।
ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এত কথা, এত আলোচনা। কখনও এই নিয়ে ওকে প্রশ্ন করিনি, করবও না। শুধু দুজনের দেখা হলেও ওর ব্যক্তিগত জীবনে কী চলছে তা নিয়ে কথা হয়নি আমাদের। এ প্রসঙ্গে একটা ছোট্ট কথা বলি, আজ থেকে দশ বছর আগেও ওর ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় উঠেছিল। সে সময় ওর সঙ্গে শুটিং করেছি আমি। শ্রাবন্তীকে কাছ থেকে দেখেছি। দেখেছি সেটে এলে কীরকম থাকত ও। আমাদের একটা ছোটখাটো অশান্তি হলেই হতাশায় ভুগতে থাকি, সিনে মন লাগে না, কাজ করতে ইচ্ছে করে না অথচ ওকে দেখে মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে হাসিখুশি মানুষটাই যেন ও। বুঝতে দেয়নি ভেতরে কী চলছে, হাসিমুখে পালন করে গিয়েছে পেশাদারের যাবতীয় কাজ। অদ্ভুত পজেটিভ ভাইবস ছিল ওর মধ্যে। মিমিক্রি করছে, হাসাচ্ছে, আমাদের মন খারাপ থাকলে আমাদেরকেও হাসানোর চেষ্টা করেছে। আমি অবাক হয়ে যেতাম। মুখ ফুটে কখনও কিচ্ছু বলেনি শ্রাবন্তী।
দুজনেই প্রথম সারির নায়ক-নায়িকা হয়েও কেন আমাদের এই ১০ বছর একসঙ্গে কাজ করা হল না, তা আমি সত্যি জানি না। এ ক্ষেত্রে কপালের উপরেই না হয় দায়ভার চাপালাম। ভবিষ্যতে আরও ভাল ভাল কাজ করুক ও, এটাই চাইব। ভাল থাকুক। শুভ জন্মদিন, শ্রাবন্তী।