সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আজ ফাদারসডে’র পোস্ট। সবাই কী সুন্দর হাসিমুখে বাবার সঙ্গে ছবি পোস্ট করছে। কত কিছু লিখছে। আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? কেন রাগ হচ্ছে? রাগ না বলে হয়তো অভিমান বলাই ভাল। তুমি এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গিয়েছিলে বাবা?
আমি তখন ১৫। দাদা ১৯। মাধ্যমিক পরীক্ষার আর কয়দিন মাত্র বাকি। প্রস্টেটে সমস্যা হল তোমার। চিকিৎসাও হল, অস্ত্রোপচার করল ওরা। কিন্তু সাকসেস পেল না সেই অপারেশন। তুমি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলে তুমি আর নেই। তোমায় যেদিন শেষ দেখতে গেলাম, আমার হাত ধরে বললে, ‘যাই হয়ে যাক না কেন, পরীক্ষাটা তুমি দিও।’ তার কয়দিন পরেই তুমি চলে গেলে। তোমায় মেয়ে কিন্তু সেদিন তোমার কথা রেখেছিল বাবা। পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায়, কই তুমি তো ছিলে না মেয়ের পাশে!
তোমার সঙ্গে আমার একটাই ছবি। এই একটা সাদা-কালোর ছবি। আমার পাঁচ বছরের জন্মদিনে তুলেছিলাম একসঙ্গে। তখন তো এত সেলফির যুগ ছিল না। আর আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে স্টুডিয়োতে গিয়ে ছবি তোলা বিলাসিতা ছাড়া আর কীই বা। বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে চলে যাবে। তাহলে না হয় আরও বেশ কিছু স্মৃতি ক্যামেরা বন্দি করে রাখতাম তোমার সঙ্গে। মা চিরকালই কড়া। তুমি ছিলে আমাদের ভাই-বোনের আবদারের আবাসস্থল। দুষ্টুমি করে শেয়ার তো এক তোমার সঙ্গেই করা যেত। মা ছুটিয়েছে সারাজীবন। কঠোর নিয়মের মধ্যে রেখেছে আমাদের। এখনও তার হেরফের হয়নি। কিন্তু মায়ের কাছে ধরা পড়া থেকে বাঁচাত যে মানুষটা সেই মানুষটাই ছুটি নিয়ে নিল কত আগে।
এখন আমার সব আছে, বাড়ি-গাড়ি। মানুষজনও ভালবাসে, অথচ যাকে প্রথম নিজের গাড়িতে চড়াব ভেবেছিলাম সেই নেই। মায়ের অনেক দাবি ছিল। মা দাবি দেখাতে জানেন । অধিকার সম্বন্ধে সচেতন। তোমার সেই সব কিছুই ছিল না তাই দাবিহীন একজন মানুষের এই দাবির পৃথিবীতে বেশিদিন জায়গা হলো না…. কিন্তু আমার সঙ্গে তো ঠিক হল না বলো বাবা… ইশ্বর তো অন্যায় করেছে একটা ১৫ বছরের মেয়ের সাথে। হয়তো পরে অনেক খেলনা দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ক্ষত টা ভোরে দিতে পারেনি। এখানে ভগবান ডাহা ফেল করেছে। কারণ আমার কাছে আমার বাবা মায়ের থেকেও বড় এমন কি ইশ্বরের থেকেও…