আজ গুরু পূর্ণিমা (১৩.০৭.২০২২)। আজ নিজের গুরু সুমিত্রা মিত্রকে স্মরণ করলেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ইন্দ্রাণী দত্ত। ফেসবুকে গুরুর কোরিওগ্রাফে তৈরি একটি কত্থক নাচের ভিডিয়ো আপলোড করেছেন তিনি। অনেকগুলো বছর আগে তৈরি হওয়া নাচের ভিডিয়োটি একটি অনুষ্ঠানের। মান্না দে’র গাওয়া ‘বাজে গো বীণা’ গানে নেচেছিলেন ইন্দ্রাণী। আজ গুরু পূর্ণিমায় গুরুজির কাছে যেতে পারেননি অভিনেত্রী। গুরুজি এখন তাঁর বন্ধু হয়ে উঠেছেন। ‘ইন্দ্রাণী দত্ত কলা নিকেতন’ নামে একটি নাচের স্কুল আছে ইন্দ্রাণীর। রয়েছে একটি নাচের ট্রুপও। সেই ডান্স অ্যাকাডেমি থেকে বহু শিল্পী তৈরি হয়েছেন। তাঁরাও এখন গুরুর আসন গ্রহণ করেছেন। গুরু পূর্ণিমার শুভদিনে TV9 বাংলাকে কী বললেন ইন্দ্রাণী দত্ত?
আজ গুরুজির বাড়িতে না যেতে পেরে মন খারাপ?
তা একটু হচ্ছেই। আজ আমার বাড়িতে পুজো রয়েছে। পুরী থেকে জগন্নাথ দেবকে নিয়ে এসেছি। পুজোর প্রস্তুতি করছি। তাই বাড়ি থেকে বেরতে পারছি না। গুরুজির কাছেও যেতে পারছি না। এদিকে সারাদিন প্রচুর ফোন আসছে। ছাত্রছাত্রীরা ফোন করছে। ওদের সঙ্গেও কথা বলছি। আমিও গুরুজিকে ফোনেই প্রণাম জানিয়েছি। বলেছি, পরে যাব। গুরুজির কম্পোজ়িশনে আমার একটা নাচের ভিডিয়ো আপলোড করেছি ফেসবুকে… সেই ভিডিয়োটা দর্শকের সঙ্গে শেয়ার করে আনন্দ পেলাম।
এই যুগে দাঁড়িয়ে গুরুদের কতখানি প্রয়োজন?
একটা সময় ছিল গুরুজি যা বলতেন, সেটাই মেনে চলতাম। তিনি যদি আমাকে একদিনে ৬টি বোল শেখাতেন, আমি মাথা পেতে নিতাম। তারপর ৬ মাস ধরে যদি একটিও বোল না শেখাতেন, মুখে কোনও কথা বলতাম না। মনে হত গুরুর যেটা মনে হবে সেটাই তিনি করবেন, সেটাই ঠিক। সেই পরিস্থিতি কিন্তু এখন আর নেই। এখনকার ছেলেমেয়েরা কথা বলতে জানে। অনেক প্রো-অ্যাক্টিভ। ওদের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যাও তৈরি হয় না। নাচের স্কুল তৈরি পর গুরুজির শেখানো পথেই চলতাম। তাঁকেই অনুকরণ করতাম। কিন্তু পরবর্তীকালে ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধু হয়ে গেলাম। আসলে মনে হয়েছিল, এই প্রজন্মটা অন্যরকম। ওরা আমাকে ভালবাসে, আবার ভয়ও পায়। এর চেয়ে বেশি প্রাপ্তি আমার আর কিছুতে মনে হয় না। পরবর্তীতে আমি আমার গুরুজিরও বন্ধু হয়ে গিয়েছি।
গুরুজি শাসন করতেন? মার-বকুনি খেয়েছেন?
না, না। আমাদের সময় থেকেই মারধরের বিষয়টা চলে গিয়েছিল। মারধর খাইনি। কিন্তু খেলেও কোনও আপত্তি ছিল না। গুরুজি কিছু বললে আমরা কিছু মনে করতাম না। তবে আমি দুষ্টুমিও করতাম না। শান্তই থাকতাম। নাচ শিখতে যেতাম ভালবেসে। কোনওদিনও কেউ নাচ প্র্যাকটিস করিয়ে দেওয়ার কথা মনে করাত না। নিজে থেকেই করতাম।
আপনি নিজে কি কঠোর গুরুজি?
হ্যাঁ। বকুনি দিতাম। গত ১০ বছর আগে সেটা ছেড়ে দিয়েছি। যাদের বকুনি দিয়েছিল, তারা সকলেই খুব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আমার ছাত্রছাত্রীরা। ওরা আমার গর্ব। শেষ ৮-১০ বছর যাদের নাচ শেখাচ্ছি, ওরা বকুনি সহ্য করতে পারবে না বলেই মনে হয়েছে। তাও আদর করে হলেও বকুনি দিয়েছি।
আপনার মেয়ে রাজনন্দিনীও (অভিনেত্রী) আপনার শিষ্যা… কোনওদিনও ওর সঙ্গে অন্য ছাত্রছাত্রীদের পার্থক্য করেননি…
একবারের জন্যেও আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রাজনন্দিনীর পার্থক্য করিনি আমি। ও কিন্তু আমার গুরুজির কাছেও নাচ শিখেছে। মেয়েকে নিয়ে আমার একটি ইচ্ছা আছে। আমি চাই ও নিজের ট্রুপ তৈরি করুক। অনেক ছবিতে অভিনয় করছে রাজনন্দিনী। খুবই সুন্দর নাচে। আমার ছায়ায় মেয়েকে রেখে দিতে চাই না।