বিহঙ্গী বিশ্বাস
প্রশ্ন: হিরো সুলভ চেহারায়, দুষ্টু লোকের অভিনয়—ইমেজের কতটা বারোটা বাজছে?
অনিন্দ্য: একজন অভিনেতা যদি ইমেজ নিয়ে সচেতন হয়ে পড়ে, তাহলে তো মুশকিল। ‘আসছে আবার শবর’-এ নেগেটিভ ছিলাম। আর নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে একজন অভিনেতার খুব বেশি অসুবিধে হয় না। তিনটে মিডিয়ামে কাজ করছি তো। তাই ওই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচটার কারণে অভিনয়ের গ্রাফটা ধরা পড়ছে।
প্রশ্ন: ধারাবাহিক ভাবে খলনায়ক হওয়ার প্রভাব কি ব্যক্তিগত জীবনেও পড়ছে?
অনিন্দ্য: দিনে আট ঘণ্টা ওই চরিত্রটাকে লালন করছি। প্যাকেটে পুরে বাড়িতে না নিয়ে গেলেই হল। তাহলেই আর ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব পড়বে না।
প্রশ্ন: নেগেটিভ চরিত্রের জন্য রাস্তাঘাটে লোকের গালমন্দ খেয়েছেন কোনওদিন?
অনিন্দ্য: আমার ১৩ বছরের অভিনয় জীবনে এর আগেও এর থেকেও বাজে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় আমি করেছি। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়েরই ধারাবাহিক ‘এই ছেলেটা ভেলভেলেটা’তে কিন্তু অনেক বেশি খারাপভাবে আমাকে দেখানো হয়েছিল। তখনও প্রচুর গালাগালি খেয়েছি, আর সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। যদিও গালমন্দের ধরন বদলেছে।
প্রশ্ন: সেটা কীরকম?
অনিন্দ্য: তখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার এত বাড়াবাড়ি ছিল না। এত ট্রোলেরও ব্যাপার ছিল না। মানুষের সহ্যক্ষমতা কমেছে। মানুষ অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে কথা বলছে। আমারও কমেছে, আমিও তো যুগের সঙ্গে বদলাচ্ছি। তবে রাস্তাঘাটে গালাগাল খাওয়া ভাল। অভিনেতা হিসেবে ওটাই স্বীকৃতি।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে প্রিয় খলনায়ক বা নায়িকা কে?
অনিন্দ্য: খলনায়কের সংজ্ঞা প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। সে ভাবে প্রিয় কেউ নেই। তবে বলিউডে অমরেশ পুরীর নাম বলতে পারি। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ১০০ বছরের ইতিহাসে তাঁর উপরে কেউ থাকতে পারেন বলে আমার মনে হয় না।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার নাম ‘ট্যাটু অনিন্দ্য’। জানেন তো?
অনিন্দ্য: হ্যাঁ, খুব ভাল ভাবেই জানি।
প্রশ্ন: কেমন লাগে নামটা?
অনিন্দ্য: এতগুলো অনিন্দ্য রয়েছেন এখানে। আমার গায়েও এত ট্যাটু রয়েছে। তাই কেউ যদি ‘ট্যাটু অনিন্দ্য’ ডেকেও থাকেন আমার কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কোনও অসুবিধে নেই।
প্রশ্ন: আপনি মিমি (চক্রবর্তী), অর্জুন (চক্রবর্তী) একসঙ্গে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। মিমি প্রথম সারির নায়িকা, অর্জুনও সিনেমা করছেন, আপনাকে ধারাবাহিকভাবে কেন সিনেমায় পাওয়া যাচ্ছে না?
অনিন্দ্য: এটা ভাবার দায়িত্ব তো পরিচালক প্রযোজকদের। আমার মনে হয় না খুব একটা কম কাজ করেছি। একমাত্র কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া টলিউডের প্রথম সারির দশ জন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা হয়ে গিয়েছে আমার।
প্রশ্ন: তার মানে আপনার কেরিয়ারগ্রাফে আপনি খুশি?
অনিন্দ্য: হ্যাঁ, আমার কাজের গতিপথে আমি তো খুশি। একটা ‘বেলাশুরু’ আমার পকেটে আছে, ‘বেলাশেষে’ আছে। আবার ‘শবর’-ও আছে।
প্রশ্ন: কিন্তু নিন্দুকেরা বলে, সিনেমায় কাজ কম বলেই নাকি সিরিয়াল করছেন?
অনিন্দ্য: একটা কথা বলি, আমি যে ধরনের শহরকেন্দ্রিক বাংলা ছবি করি, শুধুমাত্র তা দিয়ে পেট চালানো সম্ভব নয়। খুব সৎভাবে বলছি, শুধুমাত্র শহুরে ছবি করে একজন অভিনেতার বাড়ি ও গাড়ির ইএমআই দেওয়া মোটেও সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন: কাজের কথা তো হল, প্রেমিকার কী খবর?
অনিন্দ্য: (হেসে) সাক্ষাৎকারটা তো খলনায়ক নিয়ে হচ্ছিল, আবার প্রেমিকা এল কী করে? রাহুল (ধারাবাহিকের চরিত্র)-এর তো অনেক প্রেমিকা। ভালই আছে প্রেমিকারা।
প্রশ্ন: অত্যন্ত পলিটকালি কারেক্ট উত্তর হয়ে গেল না?
অনিন্দ্য: (সজোরে হাসি) ১৩ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে হয়ে গেল। এসব উত্তর কীভাবে দিতে হয়, এত দিনে জেনে গিয়েছি।