‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘পড়োশন’, ‘চারমূর্তি’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘মৌচাক’, ‘ধন্যি মেয়ে’-হিন্দি-বাংলা এই সিনেমাগুলোর মধ্যে মিল কোথায়। প্রথমেই মনে হবে সবগুলোই কমেডি ছবি। একদম ঠিক। কিন্তু এই ছবিরগুলোর মধ্যে আরও একটি মিল রয়েছে। কী তা? এই ছবিগুলোর টাইটেল কার্ড। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলা এবং হিন্দি ছবির টাইটেল কার্ডে কার্টুন, ক্যালিগ্রাফির নিদর্শন দেখা যেত। বলা যেতে পারে এটার একটা প্রচলন ছিল। মূলত কমেডি সিনেমাতে এই ধরনের টাইটেল কার্ড তৈরি করা হত। তখন অবশ্য ডিজিটাল যুগ ছিল না। অন্য পদ্ধতিতে এই মজার শৈলি দিয়ে কার্ডগুলো করা হতো। এমনকি সত্যজিৎ রায় নিজের টাইটেল কার্ড নিজেই বানাতেন যাতে ক্যালিগ্রাফি, অলংকরণ সব তিনিই সৃষ্টি করতেন সঙ্গে থাকতো টাইটেল মিউজিক।
ডিজিটাল যুগ এখন। তা সত্ত্বেও এই শৈলির ব্যবহার এখন প্রায় হয়ই না। সেই পুরনো কমেডি আজেমকে ফিরিয়ে আনছেন পরিচালক প্রণবেশ চন্দ্র এবং শান্তনু বসু। প্রণবেশের দ্বিতীয় এবং শান্তনুর প্রথম ছবি ‘ভুবন বাবুর স্মার্টফোন’। কমেডি ছবি। সেই ছবির টাইটেল কার্ড তৈরি হচ্ছে পুরনো শৈলিকে ফিরিয়ে এনে। ছবিতে রয়েছে একটিই গান। তা হল ছবির শীর্ষ সঙ্গীত। সেই গানে সুর করেছেন বিশিষ্ট গায়ক-সুরকার উপল সেনগুপ্ত। যিনি নিজেও ছবি আঁকেন, কাগজ কেটে বানিয়ে ফেলেন হরেক রকম জিনিস, অর্থাৎ অরিগ্যামি বিশারদ তিনি। তবে এই ছবিতে তিনি শুধু রয়েছেন গানেই। অলঙ্করন-কার্টুনের জগতে দেবাশিস দেব এক বিশেষ নাম। ছবির শুরুতেই তাঁর হাতের জাদুর সঙ্গে মিশে যাবে উপলের গান।
‘ভুবন বাবুর স্মার্টফোন’ পরিচালক প্রণবেশ মূলত বিঞ্জাপন জগতের মানুষ। গ্রাফিক আর্টিস্ট হিসাবে কাজ শুরু করে পরে বিজ্ঞাপন, ছোটো দৈর্ঘ্যের ছবি এমনকি ফিচার ছবি ‘চার দিকের গল্প’ তৈরি করেন। তাঁর নির্দেশনায় দ্বিতীয় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি এটি। সহপরিচালক এবং কাহিনিকার শান্তনু বসু। ভুবন বাবু একজন চাকুরিজীবী। তাঁর জীবনে একটা স্মার্ট ফোন কী কী পরিবর্তন নিয়ে আসে সেই নিয়েই গল্পের জাল বোনা হয়েছে। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চিন্তা মুখোপাধ্যায়। তাঁকে সঙ্গ দিতে রয়েছেন পরাণ বন্দোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, ঈশান মজুমদার, সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রমুখ।
‘হ্যালো,হ্যালো,হ্যালো’ শীর্ষক গান এবং পুরো বিষয়টি নিয়ে উপল সেনগুপ্ত বলেছেন, “এই সময়ে দাঁড়িয়ে অ্যানিমেটেড টাইটেল কার্ড খুব একটা হয় না। আমার গানটা ছবির বিষয় নিয়ে একটু ধারণা দেবে। একটুকরো ঝলক বলা যায়। ছেলেবেলা থেকেই ক্যালিপসো মিউজিকের ভক্ত। বেলা ফনটের নানা গানের চলন মন টানে। চন্দ্রবিন্দুর গানেও এই ধারার সুর করেছি। ছবির মূল বিষয়কে মাথায় রেখে সুর আর গান তৈরি হয়েছে। প্রণবেশ খুব সুন্দর লিখেছেন। আমার খুব বড় পাওনা দেবাশিস দেব-এর আঁকার সঙ্গে আমার গানের এই প্রথম মিল হলো। ওঁর আঁকা কার্টুনের আমি একজন অনুরাগী। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার সঙ্গে ওঁর অলংকরণ বা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ব্যঙ্গচিত্রের জুড়ি মেলা ভার। আমার সত্যি এটা ভীষণ বড় প্রাপ্তি।”
পরিচালক প্রণবেশ তাঁর ছবিতে এই শৈলিকে কেন আনলনে, তা নিয়ে বললেন,”মজার ছবি তাই মজার টাইটেল কার্ড হওয়া উচিৎ। স্মার্ট ফোন নিয়ে গান লেখার সময়ই উপলদার কথা মাথায় আসে। উপলদা সুর তৈরি করে ফেলেন। এবার আসে দৃশ্যায়নের পর্ব। সহ পরিচালক শান্তনুর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করি দেবাশিস দেবের কার্টুন দিয়েই হবে ইলাস্ট্রেশনের কাজ। দেবাশিসদা ছবি দেখে তৈরি করেন টাইটেল কার্ড।”
দেবাশিস দেবও খুব উৎসাহী এমন একটি কাজ করতে পেরে। জানালেন কীভাবে তৈরি হয়েছে চরিত্রগুলো ইলাস্ট্রেশনে সময়। বললেন,” প্রণবেশ ঠিক কোন, কোন চরিত্রের কথা টাইটেল কার্ডে ভাবছেন জেনে নিয়ে কাজটা করি। তার আগে ছবিটা দেখে নিয়েছিলাম। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় চন্ডী লাহিড়ীকে দিয়ে বেশ কিছু কাজ করিয়েছিলেন ‘মৌচাক’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মন্ত্রমুগ্ধ’ ইত্যাদি ছবিতে। সেগুলোকে অ্যানিমেটেডও করা হয়েছিল। এই ছবির কাহিনী আগে গল্প আকারে প্রকাশিত হয় তারও অলংকরণ আমি করেছিলাম। টাইটেল কার্ড একটা ছবির ইমেজ ক্যারি করে।” ছবি মুক্তি আগামী কাল অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর।