EXCLUSIVE Suchitra Sen: ‘নিজেও মাধুরীর সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন’, সুচিত্রা সেনের বোনঝি লগ্না ধর

Sneha Sengupta |

Apr 06, 2022 | 2:41 PM

Suchitra Sen Birthday Special: আজ সুচিত্রা সেনের জন্মদিন। স্মৃতির সাগরে সাঁতার কাটতে-কাটতে TV9 বাংলার কাছে লগ্না করলেন তাঁর মাসির গল্প। যে মাসি মহানায়িকার খোলস ছেড়ে ধরা দিতেন লগ্নার কাছে।

EXCLUSIVE Suchitra Sen: নিজেও মাধুরীর সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন, সুচিত্রা সেনের বোনঝি লগ্না ধর
আজ (০৬.০৪.২০২২) মহানায়িকার জন্মদিন।

Follow Us

স্নেহা সেনগুপ্ত

বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হত ৯১ বছর। সিনেমা, ক্যামেরা… এ সবের থেকে হাজার-হাজার মাইল দূরত্ব তৈরি করেছিলেন নিজেই। সরে এসেছিলেন বরাবরের মতো। অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়ে বাংলার ‘গ্রেটা গার্বো’। অন্তরালকালে তাঁর জন্মদিনে বাড়িতেই প্রিয়জনেরা, ভাই-বোনেরা আসতেন। ছোটখাটো আয়োজন হত বাড়িতেই। মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। মেয়ে মুনমুন, নাতনি রিয়া-রাইমার উপস্থিতিতে পালন করা হত তাঁর জন্মদিন। কিন্তু আজ সবটাই অতীত। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি চিরবিদায় নিয়েছিলেন বাংলার গ্রেটা। চলে গিয়েছিলেন না-ফেরার দেশে। তারপর থেকে জন্মদিনগুলো তাঁকে মনে করেই কাটিয়ে দেন কাছের মানুষগুলো। যেমন আজ কাটাচ্ছেন বোনঝি লগ্না ধর। স্মৃতির সাগরে সাঁতার কাটতে-কাটতে TV9 বাংলার কাছে লগ্না করলেন তাঁর মাসির গল্প। যে মাসি মহানায়িকার খোলস ছেড়ে ধরা দিতেন লগ্নার কাছে।

আজ তো আপনার মাসির জন্মদিন… মন খারাপ?

খানিকটা তো বটেই। উনি তো আমাদের মধ্যে নেই, আবার আছেনও। আজ যদি থাকতেন, মাসির বাড়িতে একটা গেট টুগেদার হত। আমার মা, বড় মাসি হয়তো যেত। বড় করে কোনও উদযাপন হত না। ছোট করে হত। চেষ্টা করতাম থাকতে। অনেকবার মিসও হয়েছে। কিন্তু চেষ্টা করতাম যেতে।

অনেকে বলেন আপনার চোখ দু’টো সুচিত্রা সেনের মতো…

জানেন তো, আমরা কোনওদিনও কাউকে বলিনি যে সুচিত্রা সেন, মহানায়িকা, আমাদের মাসি। কোনও না-কোনওভাবে মানুষ সেটা জেনে গিয়েছেন। আমার দিদির সঙ্গেও মাসির মিল আছে। অনেকে বলেন আমার সঙ্গেও মিল আছে। অনেকবারই অনেকের কাছে এই কমপ্লিমেন্ট পেয়েছি। সত্যি বলতে, শুনতে ভাল লাগত। ওরকম একজন বড় অভিনেত্রী, অত সুন্দর দেখতে.. আমরা তো মাসির ধারে-কাছে কেউ যেতে পারিনি।

মাসি হিসেবে সুচিত্রা সেন কেমন ছিলেন আপনার কাছে?

মাসি কিন্তু রাগি ছিলেন। তাকানোতেই আমরা বুঝে যেতাম কোনটা পছন্দ করছেন, কোনটা করছেন না। আমাদের সঙ্গে মাসির ভীষণই সুন্দর সম্পর্ক ছিল। বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে গান শুনতে চাইতেন। আমাদের মজার-মজার খেলাগুলো বসে দেখতেন। সেই খেলায় কে জিতছে, উপভোগ করতেন। মাসির বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো হত। নিজে হাতে ঠাকুরকে সাজাতেন, পুজোর আয়োজন করতেন। কিন্তু সিনেমা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হত না। মাসি সিনেমা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনওদিনও কোনও আলোচনা করতে পছন্দ করতেন না।

তা কেন?

আসলে মাসির কাছে কাজ একদিকে ছিল, পরিবারের মানুষরা অন্যদিকে ছিল। ওর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সিনেমা নিয়ে আলোচনা করতেন না। অন্যান্য অনেক গল্প করতেন। কে কী করছে, কেমন কাজ এগোচ্ছে, এসব খোঁজখবর নিতেন। আমরা কী খাব, জানতে চাইতেন।

মহানায়িকা নিজে হাতে রান্না করে আপনাদের খাওয়াতেন?

নিজে খুব একটা রান্না করতেন না। কিন্তু আমার মনে আছে, একবার ডিমের ডালনা রান্না করে খাইয়েছিলেন। খেতে ভালই হয়েছিল সেটা। মাসির রান্না ঘরে যাওয়ার কোনওদিনও দরকারও পড়ত না। বাবুর্চি থাকত।

বাইরে খাওয়াতে নিয়ে যেতেন?

খুব একটা নয়। একবার ওয়ালরফে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িতেই আয়োজন করতেন। খুব একটা বেরতেন না বাইরে।

এত সুন্দর দেখতে সুচিত্রা সেন… রূপচর্চা, সাজগোজ নিয়ে কি খুঁতখুঁতে ছিলেন, যেমনটা মহানায়িকারা থাকেন?

এগুলো নিয়েও খুব একটা কথা বলতেন না। মাসিকে সবসময়ই আমরা খুব সুন্দর দেখেছি। শেষ জীবনেও মাসি সুন্দরী ছিলেন…

যে শেষ সময়টায় তিনি অন্তরালে… কেউ একঝলক দেখতেও পাননি…!

কেউ যদি বলে থাকেন, মাসির চেহারা খারাপ হয়ে গিয়েছে… তা হলে খুব ভুল বলেছেন। সাদা চুলেও মাসি ততটাই সুন্দর ছিলেন। সেই গ্রেসটা কিন্তু ছিলই।

যেটাকে বলে গ্রেসফুলভাবে বয়স বাড়া..!

একদম। কেউ তো দেখেননি। কিন্তু ওঁকে দেখতে ততটাই সুন্দর লাগত।

ভাই-বোনদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল সুচিত্রা সেনের?

খুবই ভাল ছিল।

একটা সময়ের পর সুচিত্রা সেন ঠিক করলেন তিনি অন্তরালে চলে যাবেন। গেলেনও। আর কোনওদিনও তাঁকে মানুষ দেখতে পেলেন না। এতটাই দৃঢ়তা ছিল সেই সিদ্ধান্তে যে, ২০০৫ সালে দাদা সাহেব ফালকেও নিতে যাননি… হঠাৎ করে অন্তরালে চলে যাওয়ার বিষয়টা পরিবারের লোক হিসেবে কীভাবে দেখেছিলেন আপনারা?

দারুণ সিদ্ধান্ত ছিল এটা। আমি জানি না ঠিক কোন কারণে এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের মানুষ হিসেবে আমরা সমর্থন করেছিলাম। তারকারা মধ্যগগনে থাকার পর এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কিন্তু মাসি পেরেছিলেন। মানুষও কিন্তু তাঁকে সেই জায়গাতেই রেখে দিয়েছেন চিরটাকাল।

একজন মানুষ হিসেবেও তিনি শক্ত ছিলেন, দৃঢ়চেতা ছিলেন…

সেটা তো বটেই। মাসির ব্যক্তিত্ব নিয়েও আমার নতুন করে বলার কিছুই নেই। বিনোদন জগতের মানুষরা কিন্তু এই জগৎটাকেই সম্বল করে বেঁচে থাকেন শেষদিন পর্যন্ত। মাসি সেই তালিকায় পড়েন না। তিনি আলাদা, তিনি ভিন্ন। অত লাইমলাইট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এক্কেবারে সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন মানুষটি। হয়তো তিনি সুচিত্রা সেন বলেই পেরেছিলেন। আমি বোনঝি হিসেবে গর্ববোধ করি।

অন্তরালে থাকার সময় নিজের সিনেমা দেখে কী বলতেন সুচিত্রা সেন?

দেখতেন। আমার মাকে বলতেন, আজ ওই ছবিটা টিভিতে দিয়েছিল। আমরা দেখেছি। কিন্তু ওই যে বললাম, ওর চেয়ে বেশি কিছুই বলতেন না।

আপনারা জিজ্ঞেস করতে না?

জিজ্ঞেস করতাম না। আসলে মাসিকে আমরা যতখানি ভালবাসতাম, ততখানি ভয়ও পেতাম। ফলে জিজ্ঞেস করার স্পর্ধা আমাদের ছিল না।

সুচিত্রা সেনের প্রিয় খাবার কী ছিল?

সবকিছুই খেতেন। কিন্তু মাছ ছিল প্রিয়।

শেষজীবনে নাকি উনি নিরামিষ খেতেন, এটা কি সত্যি?

এটা কিন্তু ঠিক খবর নয়। সবই খেতেন। আরও একটা কথা বলি, মাসি কিন্তু খুব মুডি মানুষ ছিলেন।

মহানায়িকার প্রিয় অভিনেতা/অভিনেত্রী কে ছিলেন?

হেমা মালিনীকে খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু ওইটুকুই। বেশি কিছু বলতেন না। আমরা যখন বড়বেলায়, তখন মাসি অন্যান্য বিষয় নিয়ে জানতে চাইতেন বেশি… যেমন আমরা কে, কী লেখাপড়া করছি, কে, কী চাকরি করছি… আমাদের মাসি একেবারে আলাদা। অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। কখনও বোঝাননি উনি অতবড় স্টার।

পরবর্তীকালে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে মাধুরী দীক্ষিতের চেহারার ও হাসির একটা তুলনা চলে আসত। বিষয়টা সুচিত্রা সেন জানতেন?

জানতেন কেবল নয়, নিজেও মাধুরীর সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। বলতেন, ওঁকে আমি দেখেছি। ওঁর হাসিটা খুবই সুন্দর…

গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস

আরও পড়ুন: Yash Dasgupta: প্রয়াত যশের মা জয়তী, অভিনেতার জীবনে এখন শোকের ছায়া

আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee on demise: … মনে হল, এ সব শুনলে অভিষেকের আত্মা কোনওদিনই শান্তি পাবে না: ‘মিঠুদা’র স্ত্রী সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায়

আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee Demise: মৃত অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কী হতে চায়? TV9 বাংলাকে যা বলল সাইনা…

Next Article