Exclusive Ranjit Mallick: ‘বয়সের কারণে কাজ না-থাকা শিল্পীদের জন্য পরিচালক, প্রযোজকদের বলতেন উত্তমদা’, ‘শ্যালক’ রঞ্জিত মল্লিক

 Exclusive Ranjit Mallick: আর একটা গল্প তাঁর প্রিয় ‘উত্তমদা’কে নিয়ে শুনিয়ে শেষ করলেন এইবারের মতো। এটা অবশ্য সরাসরি উত্তম কুমারের সঙ্গে জড়িত নয়, তবে তাঁদের দাদা-ভাইয়ের সিনেমার গল্প।

Exclusive Ranjit Mallick: ‘বয়সের কারণে কাজ না-থাকা শিল্পীদের জন্য পরিচালক, প্রযোজকদের বলতেন উত্তমদা’, ‘শ্যালক’ রঞ্জিত মল্লিক
দাদা উত্তম কুমারের জন্মদিনে ভাই রঞ্জিত মল্লিকের স্মৃতিচারণ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 03, 2022 | 5:04 PM

মহুয়া দত্ত

আজ উত্তম কুমারের ৯৬তম (১৯২৬ সালে জন্ম) জন্মদিন। আজও তিনি সমানভাবে বিরাজমান আপামর বাঙালির মনে। তাঁর তাকানো, তাঁর হাসিতে বুঁদ বাঙালি। টেলিভিশনে আজও উত্তম কুমারের ছবি মানেই ড্রয়িং রুম ‘হাউজ়ফুল’।

তিনি বহু ছবির নায়ক। আবার কখনও তিনি স্নেহপ্রবণ দাদা। তাঁর স্নেহধন্য ভাইদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। একটা নয়, পাঁচ-পাঁচটা ছবিতে মহানায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। দেখেছেন সামনে থেকে। উত্তম কুমারের শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’—সেই ছবিতেও ছিলেন তিনি শ্যালকের ভূমিকায়।
“উত্তমদাকে নিয়ে বলতে শুরু করলে কোথা থেকে শুরু করব, আর কোথায় শেষ করব-খুব মুশকিল। পাঁচটা ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক… অ-নে-এ-এ-এ-ক কিছু শিখেছি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। তাই শুধু একটি সিনেমা নিয়ে বলা কঠিন”, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ নিয়ে প্রশ্ন করায় TV9 বাংলাকে উত্তর রঞ্জিত মল্লিকের। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য ফিরে গেলেন আজ থেকে ৪২ বছর আগে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ শুটিংয়ের সময়। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় এই ছবি।
“এই ছবিটাই ওঁর শেষ ছবি হবে, কে ভেবেছিল তখন! তাঁর শেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের দিন ছিলাম না ফ্লোরে। আমার শুটিং ছিল না। খবরটা পেয়ে প্রথমে বিশ্বাস করতেই অসুবিধে হচ্ছিল যে, উনি নেই। আগের দিন যে মানুষটার সঙ্গে কাজ করলাম, পরের দিন তিনি নেই। বিশ্বাস করতে পারিনি। আজও খুব কষ্ট হয়, যন্ত্রণা হয়। পরে শুনেছি সিঁড়ি দিয়ে বার বার ওঠা-নামার দৃশ্যটি করতেই সম্ভবত কষ্ট হচ্ছিল। ৬-৭টা সিঁড়ি ওঠা-নামা, তা-ও একবার নয়, একাধিকবার, হয়তো সেই ধকলটা ওঁর শরীর নিতে পারেনি। আর তার কিছুদিন আগেই একটা হার্ট-অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে। এমনিতে উনি নিজেও খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন। কিছুতেই কোনও শট দিয়ে খুশি হতেন না। খালি মনে হত, না আরও ভাল হতে পারত শটটা। হয়তো সে দিনও উনি নিজেই নিখুঁত শট দিতে গিয়ে বেশিই ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন”, মনে করেন রঞ্জিত মল্লিক।
এই ছবির শুটিংয়ের সময় কী-কী শিখেছেন সেই প্রসঙ্গ নিজেই স্মৃতির পাতা থেকে মনে করে শেয়ার করলেন, “আমি সব সময় ওঁর সঙ্গে যখন অভিনয় করতাম, শট না থাকলেও ফ্লোরে বসে ওঁর অভিনয় দেখতাম। কত কিছু শিখেছি তখন। সেগুলোই পরবর্তীতে কাজে লাগিয়েছি। আবার সরাসরিও অনেক কিছু শিখিয়েছেন। যেমন, এই ছবির সময়ই হাসির একটি ধরন শিখিয়েছিলেন আমায়। হাসি অনেক রকমের হয়। কোন হাসিতে কী রকম লুক দিতে হয়, সেটা দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে আমার যেটা দরকার ছিল ছবির জন্য, তা হল অবজ্ঞার হাসি। কী অবলীলায় তা উনি দেখিয়ে ছিলেন। কেন আজও মানুষ তাঁর ছবি ছেড়ে টেলিভিশনের পর্দা থেকে সরতে পারেন না, এইগুলো থেকেই বোঝা যায়।”
‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির বাইরেও অনেক কিছু তিনি ভাগ করলেন, যার মধ্যে মানুষ উত্তম কুমার ছিলেন। রঞ্জিতবাবুর কথায়, “অভিনেতা তিনি কত বড় মাপের, তা নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে মানুষ কত বড় ছিলেন, সেটা না বললেই নয়। সুখে-দুঃখে উনি সকলের পাশে থাকতেন, সকলেই জানেন। কিন্তু আরও একটা বড় বিষয় ছিল, তা নিয়ে কেউ তেমন কথা বলেন না। ‘নায়ক’ ছবির একটি দৃশ্য ছিল মনে আছে…যেখানে এক সময়ের দাপুটে অভিনেতা বয়সের কারণে কাজ নেই, তাঁকে নিজের সিনেমায় পার্ট দিচ্ছেন। বাস্তবেও ঠিক তাই। বয়স হয়ে গেলে ইন্ডাস্ট্রি মনে রাখুক বা না রাখুক উনি রাখতেন। ছবির আগে বাবা, কাকা, মা এমন ধরনের চরিত্রের জন্য কে অনেক দিন কাজ পাচ্ছেন না, সেই কথা মাথায় রেখে তাঁদের কাজে নিতে বলতেন পরিচালক, প্রযোজকদের। ওঁর কাছে সব খবর থাকত। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকলকে কাজ দিতেন। এ-ও কি কম বড় শিক্ষনীয় বিষয়?”
আর একটা গল্প তাঁর প্রিয় ‘উত্তমদা’কে নিয়ে শুনিয়ে শেষ করলেন এইবারের মতো। এটা অবশ্য সরাসরি উত্তম কুমারের সঙ্গে জড়িত নয়, তবে তাঁদের দাদা-ভাইয়ের সিনেমার গল্প। “আমার বাড়িতে একটি মেয়ে কাজ করতো—চুমকি, যাঁর বাবা সাইকেল রিক্সা চালাতেন। একদিন (চুমকি) এসে বলল, ‘আমার বাবা আজ কাজে যাবে না’। জিজ্ঞাসা করলাম: কেন? বলল: ওই, টিভিতে ‘মৌচাক’ ছবি দিয়েছে। একবার আমেরিকা গিয়েছি বেড়াতে। একটি দোকান থেকে বেরোচ্ছি, এক বাঙালি ছেলের সঙ্গে দেখা। এগিয়ে এসে বলল ছেলেটি, আপনাকে এইভাবে সামনে দেখব ভাবিনি। ইয়ং ছেলে, বিজ্ঞানী। জানাল, ওর দেশের বাইরে বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে একা-একা মন খারাপ হলেই ‘মৌচাক’ সিনেমা দেখে। তাতে নাকি ওঁর মন ভাল হয়ে যায়। ভাবুন, একজন রিক্সাচালক থেকে একজন বিজ্ঞানী—সকলের কাছেই তিনি কতটা গ্রহনীয়”, আজও রঞ্জিত মল্লিকের প্রিয় উত্তমদাদাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কত আনন্দ হয়, ফোনের ওপারে তাঁর গলার আওয়াজ থেকে বোঝা যায়।