ছবি নিয়ে কোনওদিন কম্প্রোমাইজ করেননি…এমন পারফেক্ট ডিরেক্টর খুব কম দেখেছি: পাওলি দাম
অসুস্থতার মধ্যেই ছিলেন। হঠাৎ করে চলে গেলেন। সৌমিত্র জ্যেঠু চলে গেলেন...আর এখন বুদ্ধদা একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। আমরা সাক্ষী থাকলাম শুধু।
বাংলার চলচ্চিত্রে ফের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta)। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৭। তাঁর স্মৃতিচারণা করলেন অভিনেত্রী পাওলি দাম।
পরপর বহু কাছের মানুষরা এক-এক করে চলে যাচ্ছেন। বুদ্ধদা নেই! এটা ভাবতে পারছি না। কী সব ছবি উনি বানিয়েছিলেন। একটা গোটা সময় তিনি তাঁর সিনেমায় তুলে ধরেছেন। দীর্ঘ দিনের কেরিয়ারে সব গুরুত্বপূর্ণ ছবি। দূরদর্শনের জন্য মহাশ্বেতা দেবীর লেখায় দুটো ছবিতে অভিনয় করেছিলাম, ‘ধৌলি’ এবং ‘চোলি কে পিছে’। আর যা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তা হল ‘টোপ’। তারপরে ওঁর বাড়িতে বহুবার গল্প-সিনেমাচর্চা করতে গিয়েছি। উনি ভাল কাজ সবসময় কদর করতেন বুদ্ধদা। নতুনদের ভীষণ প্রেরণা জোগাতেন। ‘টোপ’-এর সময় খুব কাছ থেকে মানুষটার সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছিল। উনি যে ভাবে টেকনিক্যাল দিকটা বুঝতেন, তেমনভাবে আমি কাউকে বুঝতে দেখিনি। যে গল্পগুলো ভাবতেন বা চরিত্রগুলো বুঝতেন…. ‘টোপ’-এ আমাকে মাদারির চরিত্রে যে কেউ ভাবতে পারেন এটাই কখনও ভাবতে পারিনি। ওয়ার্কশপে করানোয় বিশ্বাস করতেন, এতটাই পারফেকশনিস্ট। যতটা দরকার ঠিক ততটা, ওভার কিংবা অতিরিক্ত একেবারে পছন্দ করতেন না। ‘টোপ’-এর সময় কলটাইম থাকত রাত আড়াইটে। কারণ ভোর বেলায় ম্যাজিক আওয়ারে শুট চলত। লাইট নিয়ে ভীষণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। রাত থেকে শুরু হত কাজ। একটা সময়ে কোনও একটা বিষয়ে ওঁর কোনও সমস্যা হচ্ছিল। সেটে কিছু জিনিস পছন্দ হচ্ছিল না। ভিস্যুয়াল ঠিকঠাক লাগছিল না। নিজে ট্রলি সেট করলেন। সেদিন রিহার্সাল চলল। আর পরদিন হল শুট। সেদিন শুধু চলল রিহার্সাল। এতটা পারফেক্ট ডিরেক্টর আমি কেরিয়ারে খুব কম দেখেছি। কোনওদিন কোনও কম্প্রোমাইজ করেননি ছবি নিয়ে। অসুস্থতার মধ্যেই ছিলেন। হঠাৎ করে চলে গেলেন। সৌমিত্র জ্যেঠু চলে গেলেন…আর এখন বুদ্ধদা একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। আমরা সাক্ষী থাকলাম শুধু।