Rakhee Gulzar Birthday: সুচিত্রা সেনকে নিয়ে স্বামী গুলজ়ারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, ‘বেধড়ক মার’ খেয়েছিলেন রাখি!

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Aug 17, 2022 | 2:39 PM

Rakhi Gulzar: ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জন্ম হয় রাখির। স্বাধীনতা দিবসে জন্মেও চিরটাকাল পরাধীনই ছিলেন বঙ্গদেশের মেয়ে রাখি!

Rakhee Gulzar Birthday: সুচিত্রা সেনকে নিয়ে স্বামী গুলজ়ারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, বেধড়ক মার খেয়েছিলেন রাখি!
৭৫ বছর বয়সে পা দিলেন রাখি গুলজ়ার।

Follow Us

ঠিক ৭৫ বছর আগে, আজকের দিনেই (১৫ অগস্ট, ১৯৪৭) আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ইংরেজ শাসনমুক্ত হয়েছিল ভারতবর্ষ। রেডিয়োয় ভেসে এসেছিল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণার সেই অমোধ বাণী: ‘‘অ্যাট দ্য স্ট্রোক অফ দ্য মিডনাইট আওয়ার হোয়েন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড স্লিপস, ইন্ডিয়া উইল অ্যাওয়েক টু লাইফ অ্যান্ড ফ্রিডম।’’ সে দিন ওই রাতে পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটের মজুমদার পরিবারের আঁতুড়ঘর থেকে কান্না ভেসে এসেছিল এক শিশুর। পরবর্তীতে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন রাখি গুলজ়ার নামে। আজ দেশের ৭৫তম স্বাধীনর দিবস পূর্তির সঙ্গে-সঙ্গে রাখি গুলজ়ারেরও ৭৫তম জন্মদিন পালিত হচ্ছে। তিনি সেই ব্যতিক্রমী ব্যক্তি, যাঁর জন্ম হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই—১৫ অগস্ট, ১৯৪৭।

রাখির জন্ম বৃত্তান্ত

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার রানাঘাট শহরে জন্ম হয় রাখির। সে দিন দেশে এক অন্যচিত্র ফুটে ওঠে। মাঝরাতে রেডিয়োয় জওহরলাল নেহরু ঘোষণা করেন ভারতবর্ষ স্বাধীন। চারদিকে উৎসবের রোশনাই। রানাঘাটের মজুমদার পরিবারে লক্ষ্মী মায়ের আশীর্বাদ বয়ে জন্ম নিলেন রাখি। বাবা ছিলেন পূর্ববঙ্গের জুতো-বিক্রেতা। তাঁর ছিল বিরাট জুতোর ব্যবসা। স্বাধীন দেশে জন্মেও রাখির সঙ্গে স্বাধীনতা শব্দটার খুব একটা সখ্য গড়ে ওঠেনি। বয়ঃসন্ধি পেরনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায় রাখির। সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র-নির্মাতা অজয় বিশ্বাসকে বিয়ে করেন রাখি। কিন্তু বেশিদিন সেই বিয়ে টেকেনি। বিয়ের সময় রাখির বয়স ছিল মোটে ১৬। ১৮ বছরে পা দিতে না-দিতেই অজয়ের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রাখি। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরই সিনেমাজগতে পা রাখেন তিনি। প্রাক্তন স্বামী সিনেমার সঙ্গে যুক্ত, তা-ই সুযোগ পেতেও অসুবিধে হয়নি। পিতা ও প্রথম স্বামী-প্রদত্ত কোনও পদবি তিনি সিনেমায় ব্যবহার করেননি সে সময়। পরিচিত হয়েছিলেন কেবল রাখি নামে।

স্বাধীনতার দিন জন্ম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরমুহূর্তেই পৃথিবীতে এসেছিলেন রাখি। বিষয়টি অনেকের কাছে রোমহর্ষক মনে হতে পারে। কিন্তু রাখি একবার একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছিলেন, ‘‘১৫ অগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু সেই দিনই আমার সব স্বাধীনতা হারিয়ে গিয়েছিল। জন্ম থেকেই আমাকে হাতকড়া, শিকল পরিয়ে রেখেছিল আমার পরিবার।’’ এই কথা বলে মন খুলে হেসেছিলেন রাখি। জানিয়েছিলেন, সেই হাসিটাই তাঁর একান্ত আপন, একমাত্র তাঁর একার…

স্বামী গুলজ়ারের সঙ্গে রাখি।

রাখি থেকে রাখি গুলজ়ার…

ফের এক সিনেমা-নির্মাতার প্রেমে পড়েন রাখি। অজয়ের সঙ্গে বিয়ে ভাঙার ৮ বছর পর ফের বিয়ে করেন। সেই মানুষটি দারুণ লেখেন। দারুণ ছবি তৈরি করেন। তিনি গুলজ়ার। ততদিনে রাখিও টলিউড ও বলিউডে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। মুক্তি পেয়েছে তাঁর প্রথম বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’। ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে কাজ করেছেন ‘জীবন মৃত্যু’ ছবিতে। ১৯৭১ সালে শশী কাপুরের সঙ্গে কাজ করেছেন ‘শর্মিলি’, ‘লাল পথ্থর’, ‘পারস’-এর মতো ছবিতে। রাজেশ খান্নার সঙ্গে ‘শেহজ়াদা’ করেছেন, দেব আনন্দের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘হীরা পান্না’-য়।

যে বছর ‘হীরা পান্না’ মুক্তি পায়, সেই একই বছর ১৯৭৩-র ১৫ মে গুলজ়ার ও রাখি বিয়ে করেন। গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হাজির ছিল সেই বিয়েতে। দীলিপ কুমার, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চনরা এসেছিলেন সপরিবারে। কিছু সময় পর কন্যা মেঘনার জন্ম হয়। মেঘনার জন্মের এক বছর যেতে না-যেতেই রাখি-গুলজ়ারের সম্পর্ক আলগা হতে শুরু করে দেয়। যদিও পরবর্তীতে নিজের পরিচয় থেকে কোনওদিনও গুলজ়ার পদবি বাদ দিতে পারেননি রাখি। ইন্ডাস্ট্রিতে এ-ও কথিত আছে, রাখি ও গুলজ়ার বিচ্ছেদ কেবলই গুজব।

বিয়ের দিন রাখি ও গুলজ়ার।

রাখির কাজে গুলজ়ারের আপত্তি…

বিয়ের আগে থেকেই—প্রিয়তমা সিনেমায় কাজ করছেন, মেনে নিতে পারতেন না গুলজ়ার। তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে মেনেও নিয়েছিলেন রাখি। তবে স্বামীর নির্দেশিত ছবিতে কাজ করার আগ্রহ দেখাতেন। পিঙ্কভিলার রিপোর্ট অনুযায়ী, রাখির মন নাকি ভেঙেছিলেন গুলজ়ারই। নিজের একটি ছবিতেও রাখিকে কাস্ট করেননি গুলজ়ার। কারণ জানতে চাওয়ায় রাখির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন গুলজ়ার। তাঁদের ছোটখাটো কলহের রিপোর্টও প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তারপর এক রাতের ঘটনা পাল্টে দেয় রাখি ও গুলজ়ারের জীবনের কাহিনি।

সেই রাতে কী ঘটেছিল?

গুলজ়ারের ‘আঁধি’ ছবি তৈরির সময়কার ঘটনা। লোকেশন দেখার জন্য রাখিকে নিয়ে কাশ্মীরের বিমানে চাপেন গুলজ়ার। তাঁকে বাদ দিয়ে ছবি হচ্ছে সুচিত্রা সেনকে নিয়ে, কিছুতেই মানতে পারছিলেন না রাখি। তিনি কাশ্মীরে যেতেও চাননি। সুচিত্রা সেন, সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে একটি গেট-টুগেদার হয়েছিল কাশ্মীরেই। সুচিত্রার হাত ধরে টেনেছিলেন মদ্যপ সঞ্জীব। সঞ্জীবের বাহুডোর থেকে সুচিত্রাকে মুক্ত করতে সে দিন এগিয়ে গিয়েছিলেন গুলজ়ারই। সুচিত্রাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন রুমে। যাওয়ার পথে মুখোমুখি হয়েছিলেন রাখির সঙ্গে। সুচিত্রাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন গুলজ়ারকেই এগিয়ে যেতে হয়েছিল, জানতে চেয়েছিলেন রাখি। সে দিন রাখিকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন গুলজ়ার। তাঁর রাস্তা আটকে ফের একই প্রশ্ন করেছিলেন রাখি। হোটেলের কর্মীরা পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, রাখিকে বেধড়ক মেরেছিলেন গুলজ়ার। তাঁকে নাকি ঘরের ভিতরে মদ্যপ অবস্থাতেও পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনার পরই নাকি গুলজ়ারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন শোকাহত এবং অপমানিত রাখি।

রাখি-গুলজ়ারের বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি রাজেশ খান্না ও ডিম্পল কাপাডিয়া।

একলা চলো রে…

পরদিন কাশ্মীরেই রাখি দেখা করেন যশ চোপড়ার সঙ্গে। ‘কভি কভি’ ছবির জন্য রেইকি করতে এসেছিলেন যশ। রাখিকে ছবির অংশ হওয়ার প্রস্তাব দেন তখনই। গুলজ়ারের কাছে অনুমতি নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সে দিন রাখি বাধা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি কাজ করতে চান যশের ছবিতে। এরপর গুলজ়ার গিয়েছিলেন রাখির কাছে। কিন্তু দুর্ব্যবহার-করা স্বামীর সঙ্গে তিনি আর থাকতে রাজি ছিলেন না কোনও মতেই… চিরকালের জন্য গুলজ়ারের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বঙ্গদেশের রানাঘাটের মেয়ে।

Next Article