
যেন একটুকরো ইতিহাস… যেন এক জীবন্ত দলিল…ছিঁড়ে যাওয়া এক চিঠি, অথচ ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে সেই চিঠির মূল্য নির্ধারণ সাধারণের কর্ম নয়। চিঠিটি লিখেছেন ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটক। পাঠিয়েছেন মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনকে। আর সেই চিঠিই সাধারণের সামনে তুলে ধরেছেন মৃণাল পুত্র কুনাল সেন। রোমাঞ্চিত সাধারণ, টাইম ট্র্যাভেল করে তাঁরা যেন পিছিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু সময় আগে। কী লেখা ওই চিঠিতে। দুই মহান পরিচালকের স্ত্রীর মধ্যে কী কথা হয়েছিল সেদিন?
চিঠিতে যা লেখা তা তুলে ধরা হল…
“গীতা আজ মৃণালসেনের জন্মদিন, আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন মৃণালবাবুকে। মৃণালবাবু একটি যুগের প্রতীক। একটা স্বপ্ন নিয়ে কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন জীবনের পথে। সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের পাতায় মৃণাল সেন নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে ও থাকবে। আর সত্যজিতের পরে মৃণাল ও ঋত্বিক, বা ঋত্বিক ও মৃণাল শব্দদুটিই সবসময়ই একসঙ্গে উচ্চারিত হয়।
মৃণালবাবু সবসময়েই আমার প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। মনে পড়ে আমাকে শ্মশান থেকে হাত ধরে উনি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছুলেন তুমি ও অনুপকুমার। পরে বেলা ও নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সবাই মিলে সেদিন আমায় উদ্ধার করে দিয়েছিলে। আমি চাকরি পেয়ে যোগদান করার আগের দিন ছিল ধর্মঘট। মৃণাল সেন স্কুলে ফোন করে জানিয়ে দেন, আমি পরদিন সকালের ট্রেনে গিয়ে ১২টার মধ্যে যোগদান করব। একটা যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাজের মধ্যেই তো মানুষ বেঁচে থাকে। আন্তরিক ভালবাসা তোমাকে।
ইতি– লক্ষ্মী “
এই ‘সম্পদ’ শেয়ার করেই কুনাল লেখেন, “আমার মার একটা পুরোনো ব্যাগ ঘাঁটতে গিয়ে একটা ছেঁড়া চিঠি হাতে এলো। চিঠিটা ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটকের লেখা, আমার মাকে। মা যত্ন করে নিজের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলেন। ঠিক কবে লেখা আমার জানা নেই। ভাবলাম হয়তো অন্যদের দেখতে ভালো লাগবে।” শুধু যে ভাল লেগেছে তা নয়, জীবন্ত দলিলের সাক্ষী হয়ে আপ্লুত সাধারণ। দুই মায়েস্ত্রোর নেপথ্যে যে দুই নারী তাঁদের ব্যক্তিগত কথোপকথনের ছোঁয়া পেয়ে কুনালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি তাঁরা।