বাংলা সিনেমা, টেলিভিশন, ওটিটি সর্বত্র গোয়েন্দা চরিত্রের ছড়াছড়ি। বাঙালি গোয়েন্দাদের নিয়ে মারামারি। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন মাঝে-মধ্যে গুলিয়ে যায়। তবে এবার বিষয়টা একেবারে অন্যরকম। লেখিকা অনন্যা পাল নিয়ে এসেছেন নতুন গোয়েন্দা চরিত্র। তবে সেই চরিত্র একেবারে উঠে এসেছে মগধ যুগ থেকে। নাম ‘পুষ্পকেতু’। মগধ রাজবংশোদভূত তরুণ পুষ্পকেতু যিনি রহস্যমোচনে ছিলেন পারদর্শী, তাকে নিয়েই রহস্য কাহিনি লেখেন অনন্যা পাল। একটা নয়, একাধিক বই রয়েছে পুষ্পকেতুকে নিয়ে। ঐতিহাসিক যুগের গোয়েন্দার এক সঙ্গীও রয়েছে, নাম উল্মুক। পুষ্পকেতুকে সকলের সামনে নিয়ে এলেন লেখিকা স্বয়ং। আইসিসিআরের একটি ক্যাফেতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা রোহন ভট্টাচার্য। যাঁকে টেলিভিশনে সকলে ‘দীপু’ চরিত্রে দেখা গিয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদ অলংকরণ করেছেন দিল্লির সিদ ঘোষ।
রোহন ভট্টাচার্য কেন হাজির ছিলেন এই অনু্ষ্ঠানে? আসলে লেখিকা অনন্যার পুষ্পকেতুরূপে পছন্দ রোহনকে। তিনি ইতিমধ্যেই কথা বলা শুরু করেছেন এই গোয়েন্দা চরিত্রটিকে বাংলায় পরিচিত করার। সিনেমা না সিরিজ রূপে আনবেন তা এখনও ঠিক করেননি। তবে মূল চরিত্রের জন্য তিনি রোহনকে বেছে নিয়েছেন।
TV9 বাংলার তরফ থেকে রোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি চিনতাম না অনন্যা ম্যামকে। তাঁর তরফ থেকেই যোগাযোগ করা হয়। তবে আলাপ হয়ে খুব খুশি। চরিত্রটির জন্য আমাকে ভেবেছেন বলে নয়, এমন একটি চরিত্র ইতিহাসে ছিল, সত্যি জানা ছিল না”।
এই বিষয়ে লেখিকা অনন্যা বলেন, “সমুদ্রগুপ্তের সমকালীন মগধ রাজবংশোদভূত তরুণ পুষ্পকেতু। একাধারে জ্যামিতিবিদ ও বীণাবাদক, ক্ষুরধার বুদ্ধি, বিদেশ ভ্রমণ আর রহস্য উন্মোচনে বিশেষ রুচি তার। একের পর এক রহস্যমোচন করে জটিল অপরাধের। শুধু মগধ নয়, ভিন্ন দেশেরও। সুবর্ণভূমে পুষ্পকেতু বইয়ে সে পাড়ি দিয়েছেন সুদুর দক্ষিণ প্রাচ্যে এবং সেখানেও পরিচয় দিয়েছেন সুক্ষ পর্যবেক্ষণ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার”। পুষ্পকেতুর বাল্যবন্ধু উল্মুক পেশায় হিসাবরক্ষক কিন্তু স্বভাবে রসিক হাসিখুশি। মিত্রের সব অভিযানের অনন্য সঙ্গী তিনি। উল্মুকের সহজ দৃষ্টিভঙ্গি ও রসবোধ পুষ্পকেতুর প্রতিটি গল্পে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে, যা গল্পগুলিকে আরও উপভোগ্য করে তোলে, আরও জানিয়েছেন লেখিকা তাঁর সৃষ্ট চরিত্র সম্পর্কে।
রোহন কেন এই রাজি হলেন এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে? তাঁর মতে, “আমরা বাঙালিরা গোয়েন্দা প্রিয়। আমিও সেই তালিকায় পড়ি। আর এই চরিত্রটি একেবারে ইউনিক। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে। এমন ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি”।
লেখিকা অনন্যা পেশাগতভাবে একজন চার্টার্ড আকাউন্টেন্ট। বেশ কিছু বছর বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত থেকে, এখন নিজের মত কাজ করেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নানান পরীক্ষামূলক ধারায় নাটক ও শর্টফিল্ম লেখা ও পরিচালনা করে থাকেন হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজীতে। তাঁর লেখা পুষ্পকেতু সিরিজের বইগুলি হোল, ‘পুষ্পকেতু’ (বাংলা ও ইংরেজী), ‘পুষ্পকেতুর পঞ্চরহস্য (বাংলা) ও সুবর্ণভূমে পুষ্পকেতু’ (বাংলা)। তাঁর লেখা অন্যান্য বইগুলি হোল ‘অথ রম্যকথা’ (বাংলা) ও ‘কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড’ (ইংরেজী)।
সিনেমা বা সিরিজ-যাইহোক না কেন, বাঙালি আবার এক গোয়েন্দা চরিত্র পেতে চলেছে। তাও আবার ইতিহাসের পাতা থেকে।