বাংলার নাট্য মঞ্চের অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রীর নাম সুদীপা বসু। অনেকগুলো বছর ধরে বাংলার নাট্যমঞ্চের হয়ে কাজ করে চলেছেন এই অভিনেত্রী। তবে তাঁর কোনওদিনই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। ছোট থেকেই গান গাইতে পারতেন, নাচতে পারতেন। অভিনয়ে আসা অনেক পরে। পাড়ায় ছোট-ছোট দলে থিয়েটার করার পর অভিনয়ের ইচ্ছা জন্ম নেয় সুদীপার মনে।
খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন সুদীপা। ১৯৮৬ সালে। মাকে হারিয়েছিলেন ২০০৬তে। ভাই-বোন বলতে তিনি এবং তাঁর দুই দিদি। বাড়ি সবচেয়ে ছোট মেয়ে হওয়ার কারণে অনেকখানি সাহস ছিল তাঁর। মধ্যবিত্ত পরিবারের নিয়মকানুনের বাইরে বেরিয়েও নিজের জীবনটাকে গোছাতে পেরেছিলেন এই অভিনেত্রী। তাঁকে থিয়েটারে সুযোগ দিয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত।। অঞ্জন দত্তের পাশ্চাত্য ঘরানার থিয়েটারের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিলেন সুদীপা। তারপর সেখান থেকে কলকাতার এক প্রাচীন এবং নামী হোটেলে চাকরি পেয়েছিলেন কোনওরকম ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি ছাড়াই। কেবল আত্মবিশ্বাসে ভরা মন ছিল বলে অনেকগুলো বছর সেই চাকরি করেছিলেন অভিনেত্রী। একটা সময় পর সেই চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন সুদীপা। কেন না, নাট্যব্যক্তিত্ব মেঘনাথ ভট্টাচার্য তাঁকে ‘সায়ক’ দলের একটি নাটকের জন্য চেয়েছিলেন। অভিনয় ভালবাসতেন বলে মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে দু’বার ভাবেননি সুদীপা।
ধীরে-ধীরে থিয়েটারের দর্শক এবং সিনেমাজগতের মানুষ চিনতে শুরু করে সুদীপাকে। তাঁর প্রথম সিরিয়াল ‘এবার জমবে মজা’-এ অভিনয় করে প্রবেশ করেছিলেন বাংলার ঘরে-ঘরে। বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন সুদীপা। ওয়েব সিরিজ়েও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হিসেবে এখনও কাজ করে চলেছেন সুদীপা। কলেজে হাত খরচা চালানোর জন্য লজেন্সও বিক্রি করেছিলেন অভিনেত্রী, দরজায়-দরজায় গিয়ে সেল্সম্যানের চাকরি করেছেন। একটা কথা মনে করতেন, অভিনয় করতে গেলে ভীষণ পড়াশোনা করতে হয়। যাঁরা অ্যাকাডেমিক নিয়ে থাকেন, তাঁদের মতোই পড়াশোনা করতে হয়। গান নিয়ে চর্চা, নাচ নিয়ে চর্চা, সিনেমা দেখা, নাটক দেখা – সব করতে হয় অভিনেত্রী হতে গেলে। নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কোনটা হল না, তা ভাবলে কখনও উপরে ওঠা যায় না বলে মনে করেন সুদীপা।