বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়
অনেক কাজ করেছি একসঙ্গে। কাজের কথা বলব না। বলব অন্য কথা। ওর সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। জানেন তো, মিঠু (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের ইন্ডাস্ট্রির আদরের নাম) আমার চেয়ে বয়সে অনেকটা ছোট ছিল। কিন্তু আমাকে ‘তুই’ সম্বোধন করত। ও বরাহনগরের ছেলে ছিল। আমি মজা করে বলতাম, ‘বরাহনগরের গঙ্গার পলিমাটি খাওয়া ছেলে ব্যাটা’। খুব ভাল ফিজ়িক ছিল তখন। এক্সারসাইজ় করত। ফুটবল খেলত ভীষণ ভাল। লাভেবল বয় ছিল। সকলের সঙ্গে হেসে কথা বলা, আড্ডা মারা, ইয়ার্কি করা… দাদা-ভাই ছিলাম আমরা। কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল এক্কেবারে। আড্ডা, ইয়ার্কি, ফাজলামি এগুলো চলতেই থাকত। কত আউটডোর করেছি আমরা একসঙ্গে।
আমার মনে আছে মিরিকে একটা আউটডোরে অতটা ঠাণ্ডা পড়বে ভাবতে পারিনি। গিয়ে দেখি বেশ ঠাণ্ডা। পাকামি করেছিলাম। বেশি জামাকাপড় নিয়ে যাইনি। সঙ্গে-সঙ্গে ব্যাটা নিজের কোট খুলে আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, “পর।” ওই যে বললাম। আমাকে ‘তুই’ সম্বোধন করত। তাপস, বুম্বা, মিঠু… সকলেই ‘তুই’ বলত। আমারও বেশ ভাল লাগত। সে যা-ই হোক, ওই আউটডোরে মিঠু ওর গরম জামা দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছিল। ভীষণ লাভেবল ছেলে।
ইদানীং দেখতাম অনেকটাই মোটা হয়ে গিয়েছিল। বলেছিলাম ওকে, ‘মিঠু তোর চেহারাটা ঠিক কর’। আমাকে বলত, ‘এখন আর কী হবে’। আমি বলেছিলাম, ‘তোর বউ আছে, বাচ্চা আছে.. একটু সমঝে চল’। সবই তো নিয়তি, বলুন। যেতে আমাদের হবেই। সবাইকেই যেতে হবে সব ছেড়ে। যে দিন জন্মেছিলাম, সে দিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল মৃত্যু তারিখ। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ওর চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। ঈশ্বর ওকে এত তাড়াতাড়ি না-ই নিতে পারতেন।
কিন্তু ওর মনে একটা খুব কষ্ট ছিল আমি জানি। সিনেমা থেকে সরে আসাটা ও কিছুতেই মানতে পারত না। মনে মনে গুমরে থাকত!
আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee Demise: ‘হয়তো ওঁর মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল,’ কাঁদতে-কাঁদতে কেন বললেন ঋতুপর্ণা?