“আমার মাস্টারমশাই তিনি”, বলতে-বলতে আবেগে ভেসে যাচ্ছিলেন প্রতীক সেন, “আসলে আমি ওঁর থেকে বয়সে এতটাই ছোট, যে আমাকে ‘আপনি’ বলবেন না ‘তুমি’, সেটা নিয়ে মুশকিলে পরে যেতেন তরু-জেঠু (পড়ুন তরুণ মজুমদার)। তিনি তো সবাইকে ‘আপনি’ই বলেন। আমাকেও সেটাই বলতে চাইতেন। কিন্তু আমি সেই সৌভাগ্যবান যাঁকে তিনি ‘তুমি’ সম্বোধন করতেন…” অভিনেতা প্রতীক সেন সেই ভাগ্যবান অভিনেতা, যাঁকে নিজের ছবিতে নায়কের চরিত্রে কাস্ট করেছিলেন তরুণ মজুমদার। সেই ছবির নাম ছিল ‘ভালবাসার বাড়ি’। ২০১৮ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি তরুণ মজুমদার। শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয় তাঁর। প্রতিক্ষণেই উদ্বেগ বাড়ছে। উদ্বেগে রয়েছেন ‘ভালবাসার বাড়ি’র নায়ক প্রতীক সেনও। কিংবদন্তি পরিচালকের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন প্রতীক।
TV9 বাংলাকে প্রতীক বলেছেন, “শুনেছি। খুবই চিন্তায় আছি তরু-জেঠুকে নিয়ে। কিছু হবে না ওঁর। ঈশ্বরকে বারবার বলছি, প্লিজ়… তরু জেঠু যেমন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আমাদের মাঝে। ১০০ বছরের জন্মদিনটা আমরা ওঁকে সঙ্গে নিয়েই পালন করতে চাই। ৯২তেও তিনি ফিট নিজের নামের মতোই—তরুণ। তারুণ্যে ভরা একজন মানুষ আমার তরুজেঠু। তিনি আমার শিক্ষাগুরুও। যেভাবে তিনি আমাকে বোঝাতেন, অভাবনীয়।সকলকেই আমি এই কথা বলি। অনেক কিছু শিখেছি ওঁর দেখে। ছবির বাইরেও অনেক আলোচনা হত আমাদের। বলতেন, তাঁর প্রিয় আর্টিস্ট কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত। একটা আক্ষেপের কথা বলতেন, একক পরিচালক হিসেবে উত্তমকুমারের সঙ্গে কোনও কাজ করতে পারেননি। সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন। দীর্ঘ জীবনের এত অভিজ্ঞতা মানুষটার। সকলে বলে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০ বছর আছি, ২০ বছর কিংবা ১০ বছর আছি। এই মানুষটি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করেছেন।”
সোমবার (২০.০৬.২০২২) তরুণ মজুমদারের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তড়িঘড়ি এসএসকেএম-এ ডাক্তারদের বিশেষ টিম গঠন করা হয়। কিছুক্ষণ আগে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ ঘণ্টার জটিলতা বেড়েছে পরিচালকের। রেনাল এনসেফ্যালোপাথি দেখা দিয়েছে। ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বাড়ছে শরীরে। বুধবার ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.৯, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। অন্য জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়ালিসিস করা হতে পারে বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কিডনির জটিলতা বাড়ছে। এদিন মস্তিষ্কের সাড়া দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলা সিনেমার দুনিয়ায় কিংবদন্তি পরিচালকের অবদান রয়েছে অনেকখানি। ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে পাঁচটি জাতীয় পুরস্কার। ‘বালিকা বধূ’, ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘আপন আমার আপন’, ‘গণদেবতা’, ‘আলো’র মত একের পর এক সুপারহিট সিনেমা তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন।