স্নেহা সেনগুপ্ত
একটি ছোট্ট ভূতকে বাঙালি এখনও ভোলেনি। তার সঙ্গে ক্যাসপারের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকে। বাংলার এই বাচ্চা ভূতটার পরনে ছিল অনেক বড় আকারের শার্ট, এলোমেলো পিঠ ছাপানো চুল, গোল মুখ, গালে টোল আর চোখে-মুখে দুষ্টুমির ছাপ। ভূতটা অতি সহজেই দর্শকের মনের মন্দিরে প্রবেশ করে ঘণ্টা বাজিয়ে বলেছিল, “এই তো এখানে আমি… এই তো এখানে আমি… টানা না নানা না না…”।
মিষ্টি ভুতের দুষ্টু নাম ছিল ‘ভুতু’। অনেক বছর আগে জ়ি বাংলা চ্যানেলে ধারাবাহিক রূপে সম্প্রচারিত হত ‘ভুতু’। ভুতুর চরিত্রে অভিনয় করত আরশিয়া মুখোপাধ্যায়। সে তখন এক্কেবারে খুদে। আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত করে এই শিশু শিল্পী। তাকে নিয়ে হইচই শুরু হয় গোটা বাংলায়। যেমন মিষ্টি তার চেহারা, তেমনই দুর্দান্ত তার অভিনয়। চোখের ইশারায় অ্যাক্টো করে সে। মা-ঠাকুমা-জেঠু-কাকুদের হট ফেভারিট হয়ে ওঠে ভুতু। সেই সঙ্গে বাড়ির ছোটদেরও। বঙ্গে জনপ্রিয়তার কারণে ২০১৭ সালে সিরিয়াল তৈরি হয় হিন্দিতেও। সেখানেও আরশিয়াকেই কাস্ট করা হয় ভুতুর রোলে। সে পাড়ি দেয় মুম্বই। সারা ভারত জয় করে ভুতুরূপী আরশিয়া। সেই ধারাবাহিকও শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে জনপ্রিয় শিশু শিল্পীর খোঁজ নিল TV9 বাংলা।
মা-বাবা-দিদির সঙ্গে পুজোর ছুটি কাটাতে মুসৌরি গিয়েছে ভুতু, থুড়ি আরশিয়া। অভিনেত্রীর মাকে পাওয়া গেল ফোনে। তিনিই জানালেন ভুতুর হাল হকিকত। সিবিএসসি স্কুল বিডি মেমোরিয়ালে ক্লাস ৭-এ পড়ছে আরশিয়া। জানালেন লেখাপড়ার খুব চাপ।
আরশিয়ার মা ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওর এখন এমন একটা বয়স, যেখানে ওকে বাচ্চার চরিত্রে রাখা যাবে না, আবার নায়িকার চরিত্রেও ফেলা যাবে না। ফলে এই মুহূর্তে ওকে নিয়ে বিশাল বড় কোনও পরিকল্পনা করছি না আমরা। আপাতত মন দিয়ে লেখাপড়া করুক ও। নাচও শিখছে।”
তবে অভিনয় থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেয়নি আরশিয়া। গত বছরই ‘মীরা’ ধারাবাহিকে মীরার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছে সে। খুব বেশিদিন যদিও শুটিং করতে হয়নি তাকে। ভাস্বতী বলেন, “এরকম ব্যাপারও নেই যে অভিনয় থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার মেয়ে। খুব ভাল কোনও অফার পেলে ও নিশ্চয়ই অভিনয় করবে। যেমন ধরুন ৬ মাসের মধ্যে যদি কোনও ভাল অফার আসে, যেটা ওকে দিয়ে আমরা করাতে পারব, তখন করবে। আরশিয়াও সেটাই চায়। এমনিতে নর্মাল চরিত্র করার জন্য খুব একটা আগ্রহী ও নিজেও থাকে না। বাড়ির বাচ্চা হয়ে গেল, কিংবা পাশে দাঁড়িয়ে রইল.. এই ধরনের চরিত্র আরশিয়া করতে চায় না। সেটা ওর পছন্দ নয়। আরশিয়া চায় দমদার চরিত্র।”
ভাস্বতীর থেকেই জানা গেল, সম্প্রতি একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছে আরশিয়া। সেই ছবিতে জয়া আহসানের ছোটবেলার চরিত্র করেছে সে। অভিনয় করে দারুণ খুশি হয়েছে। ভাস্বতী বলেন, “জয়া আহসানের ছোটবেলাটা করেছে আরশিয়া। শুটিং হয়ে গিয়েছে। কলকাতারই প্রজেক্ট। সৌকর্য্য ঘোষাল ছবির পরিচালক। দারুণ ইন্টারেস্টিং চরিত্র। দুটো দিক আছে চরিত্রটার। কখনও ভাল, কখনও খারাপ। এ রকম চরিত্র এবং অবশ্যই লিড চরিত্র পেলে ও করবে।”
ভাস্বতী জানিয়েছেন, পরবর্তীকালে বিরাট মাপের অভিনেত্রী হতে চায় আরশিয়া। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। বলেছেন, “এখনও তো ও বাচ্চা। সেভাবে অ্যাম্বিশন তৈরি হয়নি ওর। কিন্তু অভিনয়টাই করতে চায় মন দিয়ে। জানি না ভবিষ্যতে মত পাল্টাবে কি না। তবে অভিনয় ছাড়বে না।”
মুসৌরিতে গিয়েও সেলেব্রিটি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে আরশিয়া। সেখানকার লোকও তাকে চিনে ফেলে সামনে এগিয়ে আসে সেলফি তুলছে। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলছিলেন ভুতুর মা।