সত্যজিতের মরদেহের সামনে চড়া মেকআপে হাজির মাধবী, বিতর্ক হলেও জানা গেল কারণটা…
সেদিন সত্যজিৎ অনুরাগীদের ভিড় উপচে পড়েছিল তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। সেই ভিড় সামলাতে কলকাতা পুলিশষ হিমশিম খাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ই হাজির মাধবী। পরনে জমকালো পোশাক। মুখে চড়া মেকআপ!

দিনটা ২৩ এপ্রিল, ১৯৯২। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল বুকে ধাক্কা দেওয়ার মতো খবর। প্রয়াত সত্যজিৎ রায়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তি পরিচালক। যাঁর ছবি দেখে আজও সিনে পড়ুয়ারা সিনেমা তৈরি শেখেন। যাঁর গল্প বলার ধরন আজও হতবাক করে গোটা বিশ্বকে। তবে শুধুই কি সিনেমা? নাহ, তাঁর সাহিত্য, গল্প, ছবি আঁকা সবই ভারতীয় শিল্পকলার নির্দশন। সেই সত্যজিতের মৃত্যুর খবরেই শোকস্তব্দ গোটা বিশ্ব, গোটা দেশ, গোটা বাংলা। সেদিন সত্যজিৎ অনুরাগীদের ভিড় উপচে পড়েছিল তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। সেই ভিড় সামলাতে কলকাতা পুলিশের হিমশিম খেতে হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ই হাজির মাধবী। পরনে জমকালো পোশাক, মুখে চড়া মেকআপ! সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা তখন সত্যজিতের ‘চারুতলা’র দিকে। একের পর এক ফ্ল্যাশের আওয়াজে কান পাতা দায়। কিন্তু মাধবী মুখোপাধ্যায় চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এককোণায়। অপলক তাকিয়ে ছিলেন সত্যজিতের দিকে।
গুঞ্জনপাড়া মাধবীর মনের ব্যথা সেদিন বুঝতে পারেনি। যে পরিচালক তাঁকে নিজে হাতে অভিনেত্রী তৈরি করেছেন, যে পরিচালকের হাত ধরে তাঁর অভিনয় নতুন মাত্রা পেয়েছিল, সেই পরিচালককে হারিয়ে মাধবী যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, তা হয়তো কারও চোখে পড়েনি। উলটে নিন্দুকদের চোখ গিয়ে আটকে ছিল তাঁর চড়া মেকআপে।
সেই সময় নানান বিনোদনমূলক পত্রপত্রিকায় মাধবীর সেই চড়া মেকআপ নিয়ে নানা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। রীতিমতো পোস্টমর্টাম শুরু হয়েছিল সত্যজিৎ ও মাধবীর সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু মাধবী, তখন সে সব নিয়ে কিচ্ছুটি বলেননি। কারণ, বরাবরই এসব গুঞ্জনকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না অভিনেত্রী। তবে এই ঘটনার বহু বছর পর এক সাক্ষাৎকারে মাধবী সত্যিটা সামনে এনেছিলেন। কেন তিনি সত্যজিৎকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চড়া মেকআপে হাজির হয়েছিলেন, তা স্পষ্টও করেছিলেন।
সেই সাক্ষাৎকারে মাধবী জানিয়ে ছিলেন, স্টার থিয়েটারে তখন একটা নাটকের শো চলছিল। সেখানেই সত্যজিৎ রায়ের মৃত্য সংবাদ পাই। তখন আর কিছু মাথায় আসেনি। নাটকের পোশাক ও মেকআপেই বেলভিউয়ে গিয়ে হাজির হই। তারপর সেখান থেকে রায় বাড়িতে গিয়ে সত্যজিতের স্ত্রীয়ের সঙ্গে দেখা করি। স্তব্ধ হয়ে গিয়ে ছিলাম আমি। বুঝতে পারছিলাম না কী করব, কী বলব।
অন্তরের কথা না জেনেই সেদিন লোকে মাধবী ও সত্যজিৎকে নিয়ে অনেক কথা বলেছিল, অনেক কিছু রটিয়েছিল। কিন্তু প্রিয় পরিচালককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে ওসব কানে তোলেননি মাধবী। সেদিন চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেলভিউ নার্সিং হোমে। চোখের জলেই বিদায় জানিয়ে ছিলেন কিংবদন্তি পরিচালককে। যে তাঁকে চারুলতা করে তুলেছিল।





