ভুল ইংরেজি বলে বিপাকে উত্তম কুমার! বাতিল হল সাক্ষাৎকার, তারপর যা করলেন সেই জন্যই তিনি মহানায়ক
রোজ দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার ফলে দুজনের মধ্য়ে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। তবে উত্তমের ইংরেজি ভুল বলার গল্প, তারও বেশ কয়েক বছর পর। ততদিনে উত্তম সুপারস্টার।

সময়টা পাঁচের দশক। তখনও ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত জমি খুঁজছেন উত্তম কুমার। ভবানীপুর থেকে বাসে সিঁথির মোড়ের এমপি স্টুডিওতে নিত্য যাতায়াত তাঁর। সেই বাসেই উত্তমের দেখা হত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নিমাই ভট্টাচার্যের সঙ্গে। নিমাই ভট্টাচার্য তখন উত্তমের পাড়াতেই টিউশনি করতে যেতেন। রোজ দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার ফলে দুজনের মধ্য়ে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। তবে উত্তমের ইংরেজি ভুল বলার গল্প, তারও বেশ কয়েক বছর পর। ততদিনে উত্তম সুপারস্টার। আর অন্যদিকে নিমাই ভট্টচার্য, বাংলার এক নম্বর সংবাদপত্রের নামকরা সাংবাদিক। সেই সময়ই এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন উত্তম, যার সাক্ষী ছিলেন একমাত্র নিমাই ভট্টাচার্য।
ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। সেই সময় ‘ভরত’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন উত্তম কুমার। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উত্তমের সঙ্গে বহু বছর পর দেখা নিমাইয়ের। পুরস্কার হাতে নেওয়ার পর উত্তমের সাক্ষাৎকার নিতে আসেন আকাশীবাণীর এক সাংবাদিক। যা সম্প্রচারিত হবে গোটা দেশে। নিমাইয়ের সামনেই উত্তমের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করলেন রেডিওর সাংবাদিক। নিমাই লক্ষ্য করলেন, সাংবাদিকের প্রশ্নে উত্তম ইংরেজিতে উত্তর তো দিচ্ছেন, কিন্তু মাঝে মধ্যেই ভুল ইংরেজি বলছেন। কিছুক্ষণ এই সাক্ষাৎকার চলার পর, হঠাৎই ফোড়ন কাটলেন নিমাই। সাংবাদিককে বললেন, উত্তমকে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতে হবে। আপনি প্রশ্নগুলো লিখে যান, উত্তম তৈরি করে রাখবেন। দুদিন পরে এসে সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করে নেবেন। কিছু না জানতে চেয়েই, নিমাইয়ের কথায় সায় দিলেন উত্তমও।
নিমাই ভট্টাচার্য, মহানায়ককে নিয়ে লেখা এক প্রতিবেদনে পুরো ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। নিমাই লিখেছিলেন, ”আকাশবাণীর সাংবাদিক চলে যাওয়ার পর, উত্তমকে বললাম, তোমার ইংরেজিতে বলা উত্তরগুলোতে প্রচুর ভুল রয়েছে। তুমি একজন স্টার। সারা ভারত তোমাকে শুনবে, এগুলো ঠিক করা দরকার।” নিমাইয়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর, উত্তম আর একটিও প্রশ্ন করেননি। সেদিনই নিমাইয়ের সঙ্গে বসে সাংবাদিকের প্রশ্নগুলোর উত্তর সুন্দর করে সাজিয়ে নেন এবং দুদিন পরে তা রেকর্ডও হয়।
নিমাই ভট্টচার্য তাঁর এই প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, এই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পর, উত্তম তাঁর বাড়িতে আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। উত্তমের বাড়িতে পৌঁছে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে, হঠাৎই উত্তম বললেন, তোমাকে শেক্সপিয়রের কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছি। এরপর আমরা কিছুক্ষণ শুধুই ইংরেজিতে কথা বলব। এরপরই দেখলাম, এক নাগাড়ে উত্তম শুদ্ধ ইংরেজি বলছেন, তাও ঝড়ের বেগে। আমি তো অবাক। দিল্লি ভবনের সেই উত্তমের সঙ্গে আজকের এই উত্তম প্রচুর আলাদা। উত্তম যে নিজেকে পারফেক্ট করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তা স্পষ্ট উত্তমের কথা বলার ঢঙেই। সেদিন উত্তমকে অবাক হয়ে দেখেছিলাম। একজন সুপারস্টার কতটা ইগো বর্জিত মানুষ হলে এমনটা হতে পারে, তাই ভাবছিলাম। হয়তো উত্তমের এই পারফেকশনিস্ট হয়ে ওঠার কারণেই তিনি মহানায়ক।
