সুপ্রিয়াকে ছেড়ে স্ত্রী গৌরী দেবীর কাছে না গেলে ছবির শুটিং বন্ধ! প্রযোজকের থেকে হুমকি পেয়ে কী করেছিলেন উত্তম?
উত্তম কুমারের খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন সুরকার শ্যামল মিত্র। আর সেই বন্ধুত্বের খাতিরেই সাড়ে চুয়াত্তর ছবি উত্তমের সঙ্গে অভিনয়ও করেছিলেন সুরকার। এই ছবির আমার এ যৌবন গানে উত্তমের সঙ্গে জুটি বেঁধে শ্য়ামল মিত্র নজর কেড়েছিলেন।

উত্তম কুমারের খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন সুরকার শ্যামল মিত্র। আর সেই বন্ধুত্বের খাতিরেই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে উত্তমের সঙ্গে অভিনয়ও করেছিলেন সুরকার। এই ছবির ‘আমার এ যৌবন’ গানে উত্তমের সঙ্গে জুটি বেঁধে শ্য়ামল মিত্র নজর কেড়েছিলেন। তবে বন্ধু উত্তমের মতো, শ্য়ামলের অভিনয় জগতে আসার কোনও ইচ্ছাই ছিল না। উলটে শ্য়ামলের মন ছিল সঙ্গীতে। আর তাই তো একদিকে যখন উত্তম অভিনয়ের জন্য স্ট্রাগল করছেন, তখন শ্য়ামল নিজেকে তৈরি করছেন সুরকার হিসেবে। সুরকার হিসেবে শ্য়ামল মিত্রর প্রথম ছবি ‘লাখ টাকা’। তবে শ্য়ামল যে ছবি থেকে বড় সাফল্য পান তা হল ‘দেয়া নেয়া’। নাহ, শুধুই সুরকার হিসেবে নয়, বরং এই ছবির প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি। উত্তমের দুরন্ত অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ছবির প্রত্যেকটি গানই সুপারহিট হয়। তবে জানেন কি, এত বন্ধুত্ব সত্ত্বেও দেয়ানেয়া ছবির শুটিংই বন্ধ করে দিচ্ছিলেন প্রযোজক শ্যামল মিত্র? তাও আবার উত্তমের উপর রাগ করে!
এই ঘটনা ছয়ের দশকের। যখন উত্তম-সুপ্রিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তুমুল চর্চা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এমনকী, শোনা যায় এই সময়ই স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে রীতিমতো ঝামেলা করেই উত্তম ভবানীপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ওঠেন সুপ্রিয়ার বাড়িতে। দিনের পর দিন নাকি সুপ্রিয়ার বাড়িতেই থাকতেন উত্তম। ঠিক এই সময়ই দেয়া নেয়া ছবির শুটিং শুরু হয়।
সেই সময়ের এক জনপ্রিয় বিনোদন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেয়া নেয়া শুটিংয়ের মাঝেই বন্ধু হিসেবে শ্য়ামল, উত্তমকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। মহানায়ককে শ্যামল স্পষ্টই বলেছিলেন, সুপ্রিয়ার সঙ্গে ছেড়ে দাও, নাহলে আরও অশান্তি বাড়বে। উত্তম নাকি শ্যামলের সেই কথা খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
তারপর এল সেইদিন, যেদিন উত্তমকে শায়েস্তা করতে শ্য়ামল মিত্র হুমকি দিলেন, নাহ বন্ধু হিসেবে নয়, বরং দেয়া নেয়া ছবির প্রযোজক হিসেবে। উত্তমকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বেণুকে ছেড়ে গৌরী দেবীর কাছে না ফিরে গেলে, দেয়া নেয়ার ছবির শুটিং বন্ধ! তবে উত্তম, বন্ধু শ্যামলের কথায় রাগ করেননি। কারণ, তিনি জানতেন, কোন অধিকারবোধ থেকে শ্য়ামল এমনটি বলেছেন। শ্যামলের হুমকির পালটায় উত্তম বলেছিলেন, বেণুকে এখনই ছেড়ে যেতে পারব না, আমাকে একটু সময় দে। সুপ্রিয়ার প্রতি উত্তমের ভালবাসার টানটা বুঝতে পেরেছিলেন শ্য়ামল। তাই হয়তো একমাস পর, ফের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দেয়া নেয়া শুটিং শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় উত্তম-তনুজা অভিনীত কালজয়ী ছবি দেয়া নেয়া। যার গানও আজও বাঙালির মন ভরিয়ে দেয়। শোনা যায়, এই ছবি তৈরি করার জন্য শ্যামল মিত্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলেন উত্তম। কেননা, উত্তমেরও খুব প্রিয় ছবি ছিল দেয়া নেয়া। ছবির পরিচালক ছিলেন সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়।
