Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

যার হাতের চা খেয়ে দৌড় লাগিয়েছিলেন আমির খান, কেমন আছেন সেই রতন পাত্র?

Ratan Patra: ৫০ রকমের চা তৈরি করতে পারেন এই রতন পাত্র। যাঁরা চুমুক দিয়েছেন, তাঁরা জানেন চায়ের সঙ্গে নানা ধরনের রস মিশিয়ে চায়ের দুনিয়ায় ছোটখাটো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন। পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক। রতনের চায়ের ভক্ত অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানেরা। বলিউড-টলিউডের বহু ছবির শুটিংয়ে চা দেন তিনি। কিন্তু এই রতনই আজ টলিউড-ছিন্ন। কী হয়েছে তাঁর সঙ্গে?

যার হাতের চা খেয়ে দৌড় লাগিয়েছিলেন আমির খান, কেমন আছেন সেই রতন পাত্র?
রতন পাত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 25, 2024 | 7:51 PM

রতন পাত্র। উচ্চতা ৬ ফিট ২ ইঞ্চি। বয়স ৫৬ বছর। ছিপছিপে গড়ন। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। দিনরাত মেহনত করেন। গবেষণা চালান চা নিয়ে। না, না—তিনি কোনও বিজ্ঞানী নন। নাম রতন হলেও, টাটার মতো শিল্পপতি নন। চা বাগান-টাগান নেই। সাবেকি টি-টেস্টারও নন তিনি। নিতান্তই ছাপোষা মানুষ। চা নিয়েই তাঁর কারবার। এক সাধারণ চা বিক্রেতা রতন। যাঁর ‘চায়ে পে’ হয় চর্চা’, আবার তাঁকে নিয়েও চর্চা হয়। আর সেই চর্চা হয় যে-সে কোনও জায়গায় নয়, খোদ টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে।

টালিগঞ্জ থেকে ট্রেনে উঠে বজবজ নামতে হবে। তারপর বজবজে নেমে গঙ্গা পেরিয়ে বাউড়িয়া, বা হাওয়া থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে সাঁতরাগাছি, তারপর মুম্বই রোড ধরে রানিহাটি, ধামসিয়া হয়ে পাঁচলা। পাঁচলা থেকে বাঁদিকে ঢুকে গেলেই ১০-১৫ মিনিটের হাঁটা পথ। পেয়ে যাবেন রতনকে। এলাকার নাম বাউড়িয়া। সেখানেই বর্তমানে চায়ের পাত্র সাজিয়ে দোকান দিয়েছেন রতন পাত্র। নাম দিয়েছেন RATAN’S TEA STALL (রতনস টি স্টল)। ৫০ রকমের চা তৈরি করতে পারেন এই মানুষটা। যাঁরা চুমুক দিয়েছেন, তাঁরা জানেন চায়ের সঙ্গে নানা ধরনের রস মিশিয়ে চায়ের দুনিয়ায় ছোটখাটো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন। পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক।

লাল চা, দুধ চা—আপনি পেয়ে যাবেন যে কোনও চা বিক্রেতার দোকানেই। কিন্তু এই রতন পাত্র তৈরি করেন কাঁচা আমের চা, কমলা লেবুর চা, আনারসের চা, লঙ্কা চা, মাখন চা, তুলসী চায়ের মতো নানা ধরনের চা। প্রত্যেক চায়ের কাপ ৫ টাকা। আম আদমির ভিড় তো বটেই, মন্ত্রী-আমলা, থানার বড়বাবু, ছোটবাবু, ব্যবসায়ী… একবার খেলে বারবার যান। আরও বড় বিষয়, রতনবাবু অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান, অনুপম খের, অনুরাগ বসু (বলিউড পরিচালক), সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় থেকে শুরু করে শক্তি কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা, মিঠুন চক্রবর্তী, দেব, জিৎ, শ্রাবন্তী… সকলকেই চা খাইয়েছেন। তাঁর চায়ের সুনাম ছিল টলিপাড়াতেও। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন—ছিল। কিন্তু ছিল কেন? এখন নেই কেন?

রতনের জীবনের এই অধ্যায়টা একটা অপূরণীয় অতীত। অনেকটা মনের দুঃখেই টলিপাড়ার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কে ছেদ ঘটিয়েছেন রতন। দেব-জিতরা তো বটেই, অমিতাভ-শাহরুখ-আমিররা কলকাতায় এলে তাঁরই ডাক পড়ত চায়ের জন্য। ‘এই রতন চলে আয়, অমিতাভ এসেছে, তোর হাতের তুলসী আদা চা খাবে বলছে,’ ‘এই রতন চলে আয়, শাহরুখ তোর হাতের কাঁচা আমের চা-টা আবার খাবে বলছে’। প্রোডাকশন ম্যানেজারদের ফোন এলেই ভোলা (এ ক্ষেত্রে পড়ুন রতন) চলত চায়ের কেটলি হাতে। স্বপ্নের মতো দিনগুলো ছিল রতনের কাছে। তারপর সেই যে বার আমির এলেন, ‘লাল সিং চাড্ডা’র শুটিংয়ে, রতনের তৈরি কমলা লেবুর চা খেয়ে ‘লাল সিং’ দৌড় দিয়েছিলেন হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে…

তারকাদের সঙ্গে রতন; সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে রতন, শক্তি কাপুর এবং রাজপাল যাদবের সঙ্গে রতন, দেবের সঙ্গে রতন এবং মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে রতন।

রতন বললেন TV9 বাংলার প্রতিবেদককে, “বুঝলেন তো দিদি, দারুণ একটা সময় কাটিয়েছি মুম্বইয়ের লোকগুলোর সঙ্গে। যেমন অমায়িক, তেমন রসিক। আসলে চায়ের দামে সিনেমা তো এরা তৈরি করেন না এখানকার মতো। তাই সামান্য চাওয়ালার কদরটাও দিতে পারেন। কিন্তু টলিউড…” দীর্ঘশ্বাস ফেলেন রতন। সেই দীর্ঘশ্বাসের মধ্য়ে লুকিয়ে গ্লানি আর একরাশ নালিশ… একনাগাড়ে বলে চলেন, “টালিগঞ্জের (পড়ুন টলিউড) লোকগুলো তো টাকা দিতেই চান না। সত্যি বলতে কী চায়ের বাজেটে ছবি তৈরি করেন। ম্যানেজারগুলো ফোন করে বলে ১ টাকা, ৫০ পয়সার চা দিতে… এই মার্কেটে হয়…? এটা কি উত্তমকুমারের যুগ? একটা সুন্দর নকশাকাটা চায়ের কাগজের কাপের দামই ৪ টাকা। আমি ১ টাকায় কীভাবে দেব, বলুন তো? তার উপর ৬০০ জনের চা বানাতে বলে। ১টা লোক দিনে ৫ বার চা খেলে কত হয়? ওদের নাকি বাজেট নেই! তৈরিও হবে না এই ইন্ডাস্ট্রিটার বাজেট। কিন্তু সবাই এরকম নন। একজন-দু’জন টাকা দেন। কিন্তু তাঁদের ভরসায় তো আমার সংসার চলবে না।”

টাকা নেই। কাজ নেই। বাজেট নেই। তাই এই টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রতনের মতো রত্নদের জায়গাও নেই। টালিগঞ্জেই স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরভাড়া করে থাকতেন রতন। মাসে ৩ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হত। পারতেন না সামলাতে। তার উপর ঘাড়ের কাছে আর এক বিপত্তির কথা শোনালেন রতন, “কাজ করিয়ে, সেটে কাপের পর কাপ চা উড়িয়ে আমাকে টাকা দেয়নি কঞ্জুসগুলো।” প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেছিলেন কারা? রতনবাবুর দাবি, “কেন দেব-জিৎ এরা! ওদের সব বড়-বড় প্রযোজনা সংস্থা। আরও অনেক আছে।” নির্দ্বিধায় সবার নামও প্রতিদেবনে লিখতে বলেন রতন। বলেন, “বড় ব্যানারের প্রযোজনা সংস্থারাও ১ টাকা কাপের চা দিতে বলেছিল। এই বাজেট শুনে চা দেওয়াই বন্ধ করে দিলাম”। দেব নাকি তাঁকে ডেকেছিলেন, দাবি রতন চাওয়ালার। রতন সপাটে বলেছিলেন, “তোমাদের তো চায়ের বাজেটে ছবি হয়। কীভাবে দেব ভাই?” তাঁর দাবি, এই কথা শুনে দেব নাকি হেসেছিলেন মাত্র।

এরকম অনেক ‘হাসি’র সাক্ষী রতনের মতো মানুষ। স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাই তাঁদের ঠিকানা আজ বাউড়িয়া, কাল খড়গপুর… তবে আজও রতনের কাজে বাজতে থাকে, ‘এই রতন চলে আয়, অমিতাভ এসেছে, তোর হাতের তুলসী আদা চা খাবে বলছে,’ ‘এই রতন চলে আয়, শাহরুখ তোর হাতের কাঁচা আমের চা-টা আবার খাবে বলছে’…