
দৈনন্দিন জীবনের চাপ, স্ট্রেস এবং উদ্বেগের ফলে মেজাজের ওঠানামা হতেই থাকে। শারীরিক কার্যকলাপ এবং সঠিক শ্বাসের মাধ্যমে মেজাজ শান্ত রেখে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এমন প্রমাণিত কিছু যোগা (Yoga) ও ব্যায়ামের ধরন নিচে আলোচনা করা হল।
মেজাজ শান্ত করার সবচেয়ে দ্রুত এবং কার্যকর উপায় শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। এই কৌশলগুলি সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে।
ভ্রমরী প্রাণায়াম (Humming Bee Breath): গুনগুন শব্দের মাধ্যমে শ্বাস ছাড়ার এই প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের স্নায়ুকে দ্রুত শান্ত করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং মনকে ফোকাসড রাখতে সাহায্য করে।
অনুলোম-বিলোম (Alternate Nostril Breathing): এক নাক বন্ধ করে অন্য নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার এই কৌশলটি মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ারের মধ্যে ভারসাম্য আনে, স্ট্রেস হরমোন কমায় এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস করে।
ডিপ ডায়াফ্রাম্যাটিক ব্রিদিং: পেট ফুলিয়ে গভীর শ্বাস গ্রহণ ও ততোধিক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ার এই অভ্যাসটি প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে, যা শরীরকে ‘রিল্যাক্স মোডে’ নিয়ে আসে।
এই যোগাসনগুলি ধীরগতির এবং শিথিল করার উপর জোর দেয়। কোনও কঠিন ভঙ্গির বদলে আরামদায়ক ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ থাকা হয়।
শিশুর ভঙ্গি (Child’s Pose / Balasana): কপাল মাটিতে রেখে হাঁটু মুড়ে বসার এই ভঙ্গিটি উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করে। এটি মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মনকে শান্ত করে।
বিপরীত করণী (Legs-Up-the-Wall Pose): দেওয়ালে পা ৯০ ডিগ্রি কোণে তুলে রাখার এই ভঙ্গিটি শরীরকে গ্র্যাভিটির বিপরীত দিকে নিয়ে যায়। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে গভীরভাবে শিথিল করে, স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক অস্থিরতা দূর করতে খুব কার্যকর।
সবাসনা (Corpse Pose / Savasana): এই ভঙ্গিতে চিত হয়ে শুয়ে শরীর ও মনকে সম্পূর্ণ শিথিল করতে হয়। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের সবাসনা গভীর মেডিটেশনের কাজ করতে পারে।
যেসব ব্যায়াম হৃদস্পন্দন সামান্য বাড়ায় কিন্তু মনকে রিল্যাক্স করে, সেগুলোও মেজাজ শান্ত রাখতে সহায়ক।
নিয়মিত হাঁটা: প্রকৃতির মাঝে বা পার্কে প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা (Brisk Walking) শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ করে। এন্ডরফিন প্রাকৃতিক মুড বুস্টার হিসেবে পরিচিত।
তাই চি (Tai Chi): চীনের এই ঐতিহ্যবাহী ব্যায়ামটি ধীর, প্রবাহিত এবং নিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি। তাই চি শরীর এবং মনের সংযোগ সাধন করে, স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক স্থিরতা বাড়ায়।
মন খুলে হাসা (Laughter Exercise): যদিও এটি সরাসরি যোগা নয়, কিন্তু প্রাণ খুলে হাসা বা হাসির যোগা (Laughter Yoga) স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল-এর মাত্রা কমাতে এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে দারুন কার্যকর।
মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। প্রতিদিন অল্প সময় ধরে এই ব্যায়ামগুলো করার অভ্যাস করুন। এবং ব্যায়াম করার সময় অন্য কিছু চিন্তা না করে কেবল আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের অনুভূতির ওপর মন দিন।