
মহিলাদের মধ্যে আজকাল এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা খুবই সাধারণ। জরায়ুর বাইরে জরায়ুর মতনই একরকম টিস্যুর আস্তরণ তৈরি হয়। এর ফলে অনেকের পিরিয়ডসের সময় ব্যথা হয়। সঙ্গে অন্য উপসর্গও থাকে। পিরিয়ড না হলেও এন্ডোমেট্রিওসিস হলে অএন্য সময়ে পেট ব্যথা হয়। সম্প্রতি একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে বছরে গড়ে ১০ লক্ষ মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মেনোপজ হয়নি এমন মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।।
ঋতুচক্রের সময়ে এন্ডোমেট্রিয়াম যেমন ফুলে ওঠে, তেমনই ফেলোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয়ের উপর রক্তভরা পিণ্ড তৈরি হয়। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হল তলপেট আর পেলভিসে ব্যথা। ঋতুস্রাবের শুরুর দিন চারেক আগে থেকে যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। আবার কারও কারও প্রবল রক্তপাত হতে পারে। যৌন মিলনের পর ব্যথা হতে পারে আবার অনেকের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণেও সমস্যা দেখা দেয়। কোমর, তলপেটে ব্যথা লেগে থাকে। গর্ভবতী হলে ব্যথা একদম কমে যায়, কারন তখন ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। শিশু জন্মানোর ছ’মাস থেকে বছরখানেক পরে ব্যথা ফের মাথচাড়া দিতে পারে। অভিজ্ঞতা বলছে, বেশ কিছু মহিলার এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা আপনাআপনিই উধাও হয়ে যায়, কোনও চিকিৎসা ছাড়াই।
ঋতুচক্রের সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর ভেতরের লাইনিং পুরু হয়ে যায়। উদ্দেশ্য হল, ফার্টিলাইজড ওভাম বা ডিম্বানু যাতে সহজে গেঁথে যায়, সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। গর্ভধারণ না হলে, এই পুরু হয়ে যাওয়া এন্ডোমেট্রিয়াম খসে পড়ে। তাই ঋতুস্রাব হিসেবে বেরিয়ে আসে। এন্ডোমেট্রিওসিস হলে জরায়ুর ভেতরের এই দেওয়াল বা লাইনিং পেলভিসের নানা অংশে খুঁজে পাওয়া যায়। তারা অস্বাভাবিক অবস্থানে পৌঁছে যায়। বাইরে লেপ্টে থাকা এন্ডোমেট্রিয়াম প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে মোটা হয় এবং জরায়ুর অভ্যন্তর থেকে যে ভাবে খসে পড়া লাইনিং পিরিয়ড হিসেবে বেরিয়ে আসে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিসের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ থাকে না। অভ্যন্তরীণ ব্লিডিং হতে থাকে। যাঁদের পিরিয়ডসের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং হয় আর সেই সঙ্গে রক্তপাতও হয় তাদের ব্যাপারটি এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা থাকলে কিছু জিনিস মেনে চলতেই হবে। প্রথমত, স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। শাক-সবজি, ফল এসব বেশি করে খান। চিনি, ফাস্ট ফুড, রেড মিট এসব একদম বাদ। রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। স্ট্রেস কম রাখতে হবে। এছাড়াও ব্যথা কমাতে রোজ ইষদুষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন।