৬ মাস বয়সের পর থেকেই শিশুকে (Child Care) শক্ত খাবারের সঙ্গে পরিচিত করানো হয়। তবুও নতুন ধরনের খাদ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুদের পরিপাকতন্ত্রেরও (Digestive System) খানিকটা সময় লাগে। বাচ্চাকে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করা মাত্রই ওর দেহে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়। তাই শক্ত খাবারের সঙ্গে পরিচিত করানোর পরে যদি দেখেন আপনার শিশুর পটি শক্ত, শুকনো হচ্ছে এবং পটি করার সময় ওদের ব্যথা হচ্ছে, তাহলে সম্ভবত আপনার সন্তান কনস্টিপেশনের সমস্যায় (Constipation) ভুগছে। কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে আপনার বাচ্চাকে দিন উচ্চ মাত্রার ফাইবারযুক্ত খাদ্য। উদাহরণ হিসেবে নাশপাতি, কুল, পীচ, ব্রাউন রাইস, ওটমিল এবং বেরিজাতীয় ফলের কথা বলা যায়। এই ধরনের খাদ্য বাচ্চার পরিকতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাচ্চাকে খাবার খাওয়াতে হবে। এছাড়া বাড়তি খাবার খাওয়ানো চলবে না। প্রশ্ন হল কোন কোন খাদ্য কোনওভাবেই খাওয়ানো চলবে না? দেখা যাক—
কাঁচকলা
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে পাকা কলা অত্যন্ত কার্যকরী। তবে কাঁচকলা ঠিক উল্টো কাজটিই করে। বরং কাঁচকলা খেলে পায়খানা আটকে যেতে পারে। বাচ্চারা স্টার্চজাতীয় খাদ্য সহজে হজম করতে পারে না। কারণ শিশুর দেহে শর্করাজাতীয় খাদ্য হজম করার জন্য যথেষ্ট এনজাইম তৈরি হয় না। দুর্ভাগ্যবশত, কাঁচকলায় থাকে প্রভূত মাত্রায় স্টার্চ। ফলে বাচ্চার পক্ষে কাঁচকলা হজম করা মুশকিল হয়ে যায়।
কলায় থাকে পেকটিন নামে উপাদান। পেকটিন একটি বিশেষ ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার যা ইনটেসটাইন বা অন্ত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে জল শোষণ করে নেয়। এর ফলে শক্ত পায়খানা হয়। সুতরাং সন্তানকে পাকা কলা খাওয়াতে পারেন। তবে কাঁচকলা কখনওই নয়।
আপেল সেদ্ধ
বাচ্চাকে আপেল সেদ্ধ বা আপেলস্যস খাওয়ানোর রীতি অনেক বাড়িতেই রয়েছে। নিঃসন্দেহে আপেলস্যস অতিমিাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ আপেলস্যসে থাকে কলার মতো পেকটিন। ফলে কলার মতোই কনস্টিপেশন দূর করতে পারে। তবে অতিরিক্তমাত্রায় আপেলস্যস খেলে ফল কিন্তু উল্টো হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চার পটি শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ইতিমধ্যেই আপনার বাচ্চা কনস্টিপেশনে ভুগলে আপেলস্যস খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন।
রাইস সিরিয়াল
অন্নপ্রাশনে বাচ্চাকে ভাত খাওয়ানোর রীতি রয়েছে বাঙালিদের মধ্যে। অন্নপ্রাশনে রীতি মেনে ভাত খাওয়ানোর মানে এই নয় যে বাচ্চা সত্যিই বড়দের মতো ভাত ডাল খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। তাই ছ’মাস বয়সের পরে বাচ্চাকে চালের পরিজ খাওয়ানো হয় অনেক ক্ষেত্রেই। বহু সংস্থাও রাইস সিরিয়াল নামে শিশুখাদ্য বিক্রি করে। বাড়িতেও অনেকে চাল গুঁড়ো করে জলের সঙ্গে গুলে অনেক বাচ্চাকেই খাওয়ান। তবে খাওয়ানোর পর নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, ওদের পটির অভ্যেসে পরিবর্তন হয়েছে! কারণ ওদের পরিপাকতন্ত্র ব্রেস্ট মিল্ক হজম করতেই অভ্যস্ত ছিল। বাচ্চার পক্ষে মায়ের বুকের দুধ হজম করা তুলনামূলক সহজও বটে। সেই তুলনায় ‘রাইস সিরিয়াল’ বা চালের পরিজ হজম করা শক্ত। এরফলে রাইস পরিজ খাওয়ার পরে ওদের পেটে ব্যথাও করতে পারে। তাছাড়া ফাইবার স্বল্পমাত্রায় থাকায় দ্রুত শক্ত হয়ে যায় এই খাদ্য। তাই বাচ্চাকে রাইস সিরিয়াল খাওয়াতে হলে অল্প মাত্রায় দিয়ে অভ্যেস করান। বাচ্চা খাদ্যটির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়ান।
গরুর দুধ
আমাদের ধারণা গরুর দুধে অনেক পুষ্টি। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গরুর দুধ উপকারের চাইতে অপকারই বেশি করে। গরুর দুধ খাওয়ার অভ্যেস থেকে দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রকট হতে পারে। কারণ গরুর দুধে থাকা মিল্ক প্রোটিনের বিরুদ্ধে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে যা নানাবিধ হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই গরুর দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চার শারীরিক সমস্যা দেখলে গরুর দুধ খাওয়ানো বন্ধ তো করবেনই, তার সঙ্গে ইয়োগার্ট, চিজ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্য খাওয়ানোও বন্ধ করতে হবে। কারণ এই ধরনের খাদ্য উপাদানও পায়খানা শক্ত করে দিতে পারে। দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই বলে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়াতেও যাবেন না। এই ধরনের কৃত্রিম দুধ থেকেও বাচ্চাদের ভয়ানক কনস্টিপেশন হয়।
গাজর
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন কে রয়েছে গাজরে। এছাড়া আছে যথেষ্ট মাত্রায় পটাশিয়াম খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে, সেদ্ধ করা হলে বা রান্না করা হলে গাজরের ফাইবারজাতীয় উপাদান হ্রাস পায়। ফলে বাচ্চাদের সেদ্ধ গাজর মোটেই হজম হতে চায় না। তবে ওদের তো আর কাঁচা গাজর দিতে পারবেন না। তাই গাজর দেওয়া কয়েক মাস বন্ধ রাখুন।
আলু
আলুতে রয়েছে জটিল ধরনের শর্করা। ফলে বাচ্চারা সহজে আলু হজম করতে পারে না। অন্যদিকে সাদা আলুর তুলনায় মিষ্টি আলু সহজপাচ্য। কারণ মিষ্টি আলুতে সাদা আলুর তুলনায় বেশি মাত্রায় ফাইবার তাকে। তাই বাচ্চার মিষ্টি আলু হজম করতেও সুবিধা হয়।