
বায়ুদূষণের কারণে আমাদের শ্বাস যন্ত্রের উপরে যে প্রভাব পড়ে তা সকলের জানা। কিছু ক্ষেত্রে সেই প্রভাব আমাদের হার্ট, চুল, ত্বকের উপরেও পড়ে। আবার সাম্প্রতিকতম কিছু গবেষণা বলছে বায়ুদূষণের ফলে হু হু করে বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাও। বয়স যত বাড়ছে বায়ু দূষণের কারণে মানসিক অবসাদের ঘটনাও বাড়ছে। বাড়ছে মুড সুইংয়ের মতো সমস্যাও। এই দূষণ যেমন হয় গাড়ি বা কলকারখানার ধোঁয়া থেকে তেমনই হয় অন্দরমহলের নানা কারণেও।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের আরও এক তথ্য উঠে আসছে সাম্প্রতিকতম বিভিন্ন গবেষণায়। চিকিৎসকরা বলছেন, দূষণের ফলে এই সব রোগভোগ ছাড়াও বাড়ছে ব্লাড প্রেসারও। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে টিভি৯ বাংলা যোগাযোগ করেছিল প্রখ্যাত এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বায়ুদূষণের কারণে মেটাবলিক সিনড্রোম বলে একটা অসুখ হয়। সেই অসুখের বেশ কিছু কম্পোনেন্ট আছে। তার মধ্যে একটা হল হাই ব্লাড প্রেসার, হার্টের রোগ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন, ইউরিক অ্যাসিড, মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি নানা রোগ পড়ে তারই মধ্যে। এদের মধ্যে কানেকশন ওই মেটাবলিক সিনড্রোম। আবার ‘ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স’ বলে একটা কথা আছে। যা দূষণের প্রভাবে আমাদের শরীরে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দূষণের ফলে অনেক সময় আমাদের শরীরে থাকা ইনসুলিন যা বিপাকে সাহায্য করে তা কাজ করতে পারে না। এটার ফলে, উচ্চ রক্তচাপ, হাই সুগার, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, ঘুমের সমস্যা এই ধরনের নানা রোগ হতে পারে।”
বায়ুদূষণের ফলে কী ভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়?
চিকিৎসক সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাওয়াতে যে সূক্ষ্ম কণা ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাঁদের আমরা বলি পলিউট্যান্টস, সেগুলির নানা রকম মাপ হয়। এঁদের মধ্যে সূক্ষ্মতম কণা হল PM 2.5। এই কণা শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে ফুসফুসে ঢুকছে, সেখানে যে রক্তের নালী আছে, যেখানে গ্যাস এক্সচেঞ্জ হয়, ওই নালী দিয়ে এরাও শরীরে ঢুকে যায়। রক্তের মধ্যে মিশে গিয়ে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করে। তার প্রভাবে রক্তচাপ বাড়ে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যাঁদের অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যামনিয়া আছে, যাঁদের লিভারে ফ্যাট আছে, পলিসিস্টিক ওভারি বা ইউরিক অ্যাসিড বেশি তাঁদের রক্তচাপ বেড়ে যায়।”
অর্থাৎ দূষণ থেকে প্রদাহ, প্রদাহ থেকে ইনসুলিন রেসিসস্টেন্স, তা থেকে এতগুলি সমস্যা তৈরি হয় শরীরে। যার মধ্যে একটি হল উচ্চ রক্তচাপ। সতীনাথ বাবু জানান, আমাদের এখানে এই রকম সমীক্ষা না হলেও জার্মানিতে একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল রুঢ় অঞ্চলে PM 2.5-এর হার সবচেয়ে বেশি। যত দূরে যাওয়া যাচ্ছে দূষণের সঙ্গে PM 2.5 মাত্রাও কমছে। তারই সঙ্গে রুঢ় অঞ্চলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটির মতো আরও সব রোগগুলির প্রকোপ বেশি। যত দূরে যাওয়া যায় তার প্রকোপ কমে।
কী করবেন?
চিকিৎসকের পরামর্শ, দূষিত অঞ্চল থেকে দূরে থাকুন। রাস্তা ঘাটে মাস্ক পরা আবার শুরু করুন। কোভিডের সময়ের মাস্ক গুলি এমন ভাবেই বানানো যা ওই PM 2.5কেও আটকাতে পারবে। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে টোকিও গিয়েছিলাম। তখন কোভিড ছিল না, কিন্তু রাস্তাঘাটে সকলে মাস্ক পরেই যাতায়াত করতেন। আমার সঙ্গে থাকা চিকিৎসক জানান, দূষণের হাত থেকে বাঁচতেই সকলে মাস্ক পরেন। অথচ আমি দেখছি ঝকঝকে আকাশ, ধোঁয়া নেই, তবু ওঁরা সচেতন।”