২০২০ সালের মার্চ মাসের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি গোটা বিশ্ব। কোভিডের সেই সাঙ্ঘাতিক সময় সক্লের কাছেই যেন দুঃস্বপ্নের মতো। মাস্ক, স্যানেটাইজার জড়িয়ে ছিল অনেক কিছুই। কিন্তু সেই আতঙ্ক কাটতেই আমরাও মাস্কের পাট চুকিয়ে দিয়েছি। কোভিড কাটলেও কাটেনি অনেকের মানসিক অবসাদ।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ইদানিং বাড়ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, চিন্তার মতো সমস্যা। অফিসের চাপ, বাড়ি-পরিবার সব মিলিয়েই বাড়ছে সেই সব সমস্যা। তবে শুধুই কি তাই? নাকি নেপথ্যে আছে আরও কোনও রহস্য?
বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন কেবল অফিস বা বাড়ির চাপ নয়, মানসিক উদ্বেগ, চাপের পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। যা থেকে মুক্তি দিতে পারে, মাস্ক! মাস্কের সঙ্গে মানসিক চাপের কী সম্পর্ক?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে বায়ুদূষণের। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই দেখছেন। এতদিন আমরা জানতাম বায়ুদূষণের সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রের। খানিকটা হার্ট, চুল এবং ত্বকেরও। তবে বায়ুদূষণ যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবন্তি ঘটাতে পারে সেটা জানতেন?
বায়ু দূষণ থেকে কী ভাবে বাড়ছে মানসিক রোগ? কী ভাবে রক্ষা পাবেন এর হাত থেকে?
সম্প্রতি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের ঝড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গে করা একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়ানক তথ্য। দেখা গিয়েছে দূষণের মারাত্মক প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যে। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে সেই প্রকোপ। মোট ২৭৮৪ জনের উপর চালানো হয় সমীক্ষাটি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গবাসী ১৮৫৬জন, ঝড়খন্ডবাসী ১৩২৮ জন। গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা ৪১৭ জন।
সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য অনুসারে কলকাতায়, ১৫ বছরের নীচে থাকা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দূষণের কারণে মুড সুইং বেড়েছে ৩১%। অবসাদের ঘটনা বেড়েছে ৩০%।
১৬-৩০ বছরের মধ্যে ব্যক্তিদের মধ্যে মুড সুইংয়ের হার ৩৪%, অবসাদের হার ৩৬%।
৩১-৫৫ বছরের মধ্যে ব্যক্তিদের মধ্যে দূষণের জন্য মুড সুইং বাড়ছে ৪১% এবং মানসিক অবসাদের হার ৩৭%।
৪৬-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে সেই মুড সুইংয়ের হার ৪২% এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন ৪৩%।
৬১ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের মধ্যে মুড সুইংয়ের হার ৫৪%, অবসাদের হার ৪৮%।
এছাড়াও সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬৯% উচ্চ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। ৫৬% নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত। ৪৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে মানসিক রোগ। হাইপারটেনশনে ভুগছেন ১৯%। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৭%।
বায়ুদূষণের সঙ্গে মানসিক সমস্যার সম্পর্ক কী?
বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট অরূপ হালদার বলছেন, “এখন বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসছে, নিউরোলজিক্যাল রোগের একটা বড় কারণ দূষণ। দূষিত বায়ু কণা আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছে নিউরোলজিক্যাল গ্রোথ সহ নানা কাজে বাধা সৃষ্টি করে।”
এই দূষণ যে কেবল কলকারাখানা বা গাড়ির ধোঁয়া থেকে হচ্ছে তা নয়। রিপোর্ট বলছে অন্তত ১২% বাড়িতে এখনও জ্বালানি ব্যবহার করে রান্না করা হয়। উনুনের ধোঁয়া, মশা মারার কয়েল, ডিমের খোল পোড়ানো, ধূমপান সহ আরও অনেক দূষণের উৎস রয়েছে বাড়ির ভিতরে। সমীক্ষা বলছে কলকাতার শতকরা ৬৪% মানুষ বাড়ির অন্দরমহলে দূষণের শিকার।
কী ভাবে বাঁচবেন এর হাত থেকে?
বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ধীমান কাহালি বলেন, “আমরা সকলকে মাস্ক পরার অনুরোধ করছি। যদিও এই ক্ষেত্রে বৃহত্তর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকেই। মাস্ক পরলে ২.৫-১০ ডায়ামিটারের যে সব দূষণ কণা তা ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারবে না।”