
চুমু কথাটা সামান্য মনে হলেও আদপে সামান্য নয়। এই চুমু যেমন এক নিমেষে সারিয়ে দিতে পারে বহু রোগ, গলিয়ে দিতে পারে সব রাগ-দুঃখ-অভিমান। তেমনই এই একটা চুমুই কিন্তু ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদও। এই প্রতিবেদনে বলব তেমনই এক রোগের কথা।
মনোনিউক্লিওসিস (Mononucleosis), এমন একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত Epstein-Barr Virus (EBV) দ্বারা সংক্রমি হয়। কেউ কেউ একে আবার কিসিং ডিজিজ (kissing disease)-ও বলেন। এই রোগ মূলত সংক্রমিত হয় লালা বা থুতুর মাধ্যমে। মানে ধরুন আপনি ভালবেসে আপনি সঙ্গীকে ভরিয়ে দিলেন চুমুতে। আর সেই ভালবাসাই কিনা কাল হয়ে দাঁড়াল? বিজ্ঞানীরা বলছেন এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক হার্পিসের মতো রোগও। আসলে এই Epstein-Barr ভাইরাস হার্পিস বংশোদ্ভূত। একবার কোনও ভাবে শরীরে প্রবেশ করলে এই ভাইরাস দীর্ঘদিন থেকে যায় সুপ্ত অবস্থায়। যখন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল পর্যায়ে তখন কিছু করবে না। তা একটু দুর্বল হলেই সক্রিয় হয়ে উঠবেন।
লক্ষণ কী কী?
১। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর (২ সপ্তাহ বা তার বেশি)
২। গলা ব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া
৩। অত্যন্ত ক্লান্তিভাব
৪। ঘাড়ে বা কাঁধে লিম্ফ নোড ফোলা
৫। কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
৬। মাঝে মাঝে ত্বকে র্যাশ
এই রোগ কীভাবে ছড়ায়?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চুমু খাওয়ার মাধ্যমে – মুখের লালা থেকে ছড়ায় এই ভাইরাস। তাই একে কিসিং ডিজিজ বলা হয়। জ্বর হয়েছে এমন ব্যক্তির ব্যবহার করা চামচ, গ্লাস বা জলের বোতল ভাগ করে খেলেও হতে পারে বিপত্তি। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লালায় সংস্পর্শ এলেও সাবধান।
রক্তদান বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময় ছড়াতে পারে মনোনিউক্লিওসিস রোগের জীবাণু। ছড়াতে পারে পুরুষের বীর্যের মাধ্যমেই।
কী করা উচিত এই ক্ষেত্রে?
প্রথমত মনে রাখুন, একজনের শরীরে যখন এই রোগ সক্রিয় থাকে তখন বাড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি। তাই উপরিক্ত লক্ষণগুলির কিছু থাকলেই হতে হবে সাবধান। এই সময়ে যতই ইচ্ছে করুন চুমু বা আদর কোনওটাই কিন্তু করা যাবে না। এই সময়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম অপরিহার্য। শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর জল পান করাটা মাস্ট।
মনে রাখবেন এই রোগের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। আর আপনি এই রোগে সত্যিই আক্রান্ত কিনা তার জন্য চিকিৎসক উপসর্গ বুঝে রক্ত পরীক্ষা করাতে পারে। মনে রাখবেন একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে। মনোনিউক্লিওসিস বা চুমু রোগের সঙ্গে লড়ার একমাত্র উপায় নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও মজবুত করে তোলা।