‘ঠান্ডা লেগেছে? অল্প মদ খাওয়া যেতে পারে।’ এই কথাটা নিশ্চয়ই আপনিও দু-একবার শুনেছেন। ঠান্ডা লাগার উপসর্গগুলোকে প্রশমিত করার জন্য মদ্যপান কখনওই কার্যকর উপায় নয়। আসলে, অ্যালকোহল এবং ঠান্ডা লাগাকে ঘিরে কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে, ঠান্ডা লাগলে হুইস্কি খাওয়া যায়। বরং, আপনি যদি এই বোকামি করেন, তাহলে পরে আরও ভুগতে পারেন।
অনেকেই মনে করেন, হুইস্কি ঠান্ডা লাগার উপসর্গগুলো প্রশমিত করতে দারুণ কার্যকর। তার কারণ অ্যালকোহল একটি জীবাণুনাশক। সাধারণত, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, অ্যালকোহল ত্বকের উপরিতলে জমে থাকা জীবাণু মেরে ফেলতে সক্ষম। শরীরের ভিতরে যে ক্ষতিকারক ভাইরাস বাসা বেঁধেছে, তার উপর কোনও প্রভাব ফেলে না মদ। অ্যালকোহল শুধুমাত্র একটি টপিক্যাল জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে।
অনেকের ধারণা, মদ ডিকনজেস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বন্ধ নাক খুলে দেয়। কিন্তু ঘটে এর বিপরীতই। ঠান্ডা লাগা অবস্থায় অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল খেলেও এটি ভাসোডিলেশনের কারণ হতে পারে। অর্থাৎ রক্তনালীগুলিকে প্রশস্ত করে দেয়, ফলে নাক বন্ধ কিংবা সর্দির সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেলে মদের বদলে ন্যাসাল স্প্রে-র সাহায্য নিন।
কাশি থেকে পিছু ছাড়াতে অ্যালকোহলের সাহায্য নেওয়ার কথা অনেকের মাথাতেই আসে। অনেকে আবার অ্যালকোহলের এমন ব্যবহার ইতিমধ্যে করেও নিয়েছেন। এটাও ঠিক যে কাশির সিরাপে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং অন্যান্য আরও অনেক যৌগ থাকে। পাশাপাশি কাশির ওষুধে যে সব যৌগ পাওয়া যায়, তা জলে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু অ্যালকোহলের মধ্যে থাকা ইথানল জলে সহজেই দ্রবীভূত হয়ে যায়। মূলত কাশির ওষুধকে সংরক্ষণ করার জন্য অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, কাশি হলেই হুইস্কি বা রাম খাবেন, এই ভুল করবেন না।
সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে অ্যালকোহল শুধু যে অকার্যকর তা নয়, বরং এটি শরীরের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবও ফেলে। সর্দি-কাশির ভাইরাস আক্রমণ করলে শরীর দুর্বল হয়ে থাকে। এই অবস্থায় মদ্যপান করলে আপনার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে দেয়। যেখানে ঠান্ডা লাগলে বেশি করে জল পান করা উচিত, সেখানে অ্যালকোহল মোটেই স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। সাধারণ সর্দি-কাশি হলে এটি ১৪ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। এই অবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে আপনার অবস্থা কিন্তু আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই মিথ থেকে দূরে সরে আসুন এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্য নিন।