
বয়স বাড়লে হাড়ের ক্ষয় বাড়ে। অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে গেলে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়। এতে আপনি হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে পারেন। কিন্তু এই ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট আপনার কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিডনিতে স্টোন হবে বলে ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা বন্ধ করে দেবেন কিংবা ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাবেন, এটা আগে থেকে ভেবে নেওয়া ভুল। বরং, দেহে ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে কি না, তা জেনে রাখা দরকার।
দেহে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালশিয়াম, অক্সালেট এবং ফসফরাস জমা হলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। দেহে জলের অভাব তৈরি হলে এসব উপাদান কিডনিতে জমা হয়। এগুলো একসঙ্গে জমতে-জমতে ছোট নুড়ি বা পাথরের আকার ধারণ করে। এগুলো মূত্রনালিতে ঘোরাফেরা হয়, আবার কখনও কিডনিতে জমা হয়। সাধারণত, এর কোনও উপসর্গ নেই। কিন্তু এই পাথরগুলো যদি কোনও কারণবশত দেহের কোনও অংশে আটকে যায় তখন পিঠ, কোমরে তীব্র যন্ত্রণা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তলপেট ও কুঁচকিতে খিঁচুনি হয়। যন্ত্রণার তীব্রতা ওঠানামা করার পাশাপাশি বমি, বমি-বমি ভাব এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাব করার সময়ও শারীরিক অস্বস্তি তৈরি হয়। এই ধরনের সংক্রমণে জ্বর হওয়া খুব সাধারণ লক্ষণ। কিডনিতে পাথর জমা হলে এই ধরনের উপসর্গগুলো এড়িয়ে যাবেন না।
গবেষণা বলছে, যে সব খাদ্যের মাধ্যমে ক্যালশিয়াম পাওয়া যায়, সেগুলো কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় না। বরং, ক্যালশিয়ামের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। খাবারের মাধ্যমে দেহে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করলে এটি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমাবে। খাবারের মাধ্যমে শরীর যে ক্যালশিয়াম পায়, তা বিপাক করার ক্ষমতা শরীরের রয়েছে। কিন্তু সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করলে, মূত্রের মধ্যে ক্যালশিয়াম, অক্সালেট বা ফসফরাসের মাত্রা বাড়তে পারে।
সাপ্লিমেন্ট হোক বা খাবার, দেহে ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে অতিরিক্ত ক্যালশিয়াম, অক্সালেট ও ফসফরাস মূত্রের সাহায্যে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। তবে, ক্যালশিয়ামের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এর সঙ্গে ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। পাশাপাশি বিটরুট, চকোলেট, বাদাম ও শাকপাতার মতো অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবারও বুঝেশুনে খেতে হবে। দেহে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে ওষুধের বদলে খাওয়া-দাওয়ার উপর জোর দেওয়াই ভাল।