
শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে রোজ শরীরচর্চা করতেই হবে। যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরচর্চা করেন, তার প্রভাব মোটেও ভাল হয় না। অনেকেই মনে করেন, দ্রুত মেদ ঝরাতে গেলে অতিরিক্ত পরিমাণে ওয়ার্কআউট করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং, আপনি যদি ৪-৫ দিন রোজ ৪৫ মিনিটের বেশি ওয়ার্কআউট করতে থাকেন, দেখবেন দেহের উপর তার খারাপ প্রভাব পড়ছে। হঠাৎ করে দেখতে পারেন আপনার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরচর্চা মহিলাদের দেহের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। হতে পারে আপনার পিরিয়ড এক মাস পিছিয়ে গেল। অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে এটি ঋতুচক্রের উপর প্রভাব ফেলে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় ‘আমেনোরিয়া’। শরীরচর্চার পাশাপাশি শরীর যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম ও পুষ্টি পায় না, তখন এই সমস্যা দেখা দেয়।
ঋতুচক্রকে ঠিক রাখার জন্য শরীরচর্চা জরুরি। কিন্তু যখন শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে তখন কর্মক্ষমতা কমে যায়। এমনকী খিদেও কমে যায়। খাবার কম খেলে কাজ করার শক্তি তৈরি হয় না এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এমনকী দেহে স্ত্রী হরমোনগুলো ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এগুলো সরাসরি প্রভাব ফেলে ঋতুচক্রের উপর। এই কারণে প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হয় না। কারও দু-তিন মাস অন্তরও ঋতুস্রাব হয়। শরীরচর্চা করলেই যে এমনটা হবে, তা নয়। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ওয়ার্কআউট করেন এবং কড়া ডায়েট মেনে চলেন, তখনই এমন সমস্যা দেখা দেবে।
আজকাল বেশিরভাগ মহিলাই পিসিওডি ও পিসিওএস-এর সমস্যায় ভোগেন। এই শারীরিক অবস্থার জেরে অনেকেই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যার মুখোমুখি হন। এক্ষেত্রে শরীরচর্চা করলে অবশ্যই আপনি উপকার পাবেন। কিন্তু সেটা অতিরিক্ত করলেই মুশকিল। অনেক সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে ঋতুস্রাবের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম রক্তপাত হয়। এটা ওজন হ্রাসের কারণেও হতে পারে। দেহের ওজন বেশি হলে ইসট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনের হারও বাড়ে। আর এই হরমোন ঋতুস্রাবের সঙ্গে যুক্ত। তাই ওয়ার্কআউট বাড়লে এবং ওজন কমলে এই হরমোনের মাত্রাও কমতে থাকে। তখন ঋতুস্রাবের সময় রক্তপাত কম হয়।
আমেনোরিয়া দেখা দিলে যে এই সমস্যা থেকে বেরোনোর কোনও উপায় নেই, এমন নয়। বরং, শরীরচর্চার মাধ্যমেই আপনি ঋতুচক্রকে ঠিক রাখতে পারবেন। সপ্তাহে সাত দিনের বদলে ৫-৬ দিন ব্যায়াম করুন। একদিন শরীরকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিন। কঠোর ডায়েটের সঙ্গে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে এবং ঠিকঠাক ব্যায়াম করলেই আপনি ঋতুস্রাব প্রতিমাস হবে।