কম বয়সে ক্যানসার ধরা পড়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থও হয়ে উঠেছেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনে বারবার জাগছে? ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে কি মা হয়ে ওঠা যায়? এই প্রশ্ন অনেক মহিলার মনেই জাগতে পারে। যদি ক্যানসারের চিকিৎসা মোটেই সহজ নয়। শরীরের পাশাপাশি এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। অস্ত্রপচার, কেমোথেরাপির পর শরীর যেমন দুর্বল হয়ে যায় তেমনই মনোবল ভেঙে যায় অনেকের। তবে, প্রতিটা মানুষই ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে নতুন জীবন কাটাতে চায়। আর কিছু মহিলা গর্ভধারণ করতে চায়। কিন্তু ক্যানসারের কথা ভেবে অনেকেই পিছু পা হন। ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর অবশ্যই আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।
মহিলারা সবচেয়ে বেশি জরায়ুর মুখের ক্যানসার কিংবা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সময় থাকতে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। আর সুস্থ হয়ে ওঠার পর অবশ্যই আপনি গর্ভবতী হতে পারবেন। যদিও গর্ভধারণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন বরস, ক্যানসারের ধরন, ক্যানসারের পর্যায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি। এমন বেশ কিছু ক্যানসারের চিকিৎসা রয়েছে যা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। আবার শরীরে ক্যানসারের কোষ বাড়লে তা ভ্রূণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যার জেরে গর্ভপাতও ঘটতে পারে।
ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন কোনওভাবেই মহিলাদের গর্ভধারণের অনুমতি দেওয়া হয় না। ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে গর্ভধারণের জন্য। অর্থাৎ শেষ কেমো নেওয়ার ৬ মাস পর থেকে আপনি গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ওভারির উপর প্রভাব ফেলে। তাই ক্যানসার মুক্ত হয়েই গর্ভধারণ করলে গর্ভপাত কিংবা ভ্রূণের মধ্যে কোনও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তবে, ক্যানসার হল এমনই এক রোগ যা যে কোনও মুহূর্তে আবার ফিরে আসতে পারে। ক্যানসারের চিকিৎসাও বেশ সময়সাপেক্ষ। কেউ দু’বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। আবার কারও ক্ষেত্রে ৫-৬ বছরও লেগে যায়। কিন্তু ক্যানসার মুক্ত হলেও এই রোগে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া কেমোথেরাপির প্রভাব অনেকদিন পর্যন্ত থাকে। তাই চিকিৎসকদের মতে, ক্যানসার মুক্ত হওয়ার ৩-৫ বছর পর গর্ভধারণ করা উচিত।
ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়ার পরে গর্ভধারণ করতে গেলে বেশ কয়েকটি বিষয়ের খেয়াল রাখতে হয়। যেমন শরীরের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছিল, সেটি শরীরের অন্যান্য কোন অংশে প্রভাব ফেলেছে ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রে কেমোথেরাপির কারণে মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা সাময়িকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেক সময় কেমোথেরাপি শুরু করার আগে ডিম্বাণু সংরক্ষণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ক্যানসার মুক্ত হওয়ার পর আপনি ওই ডিম ব্যবহার করে গর্ভবতী হতে পারেন। তবে, ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠার পর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেই মা হওয়ার পরিকল্পনা করুন।